অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী

31-21ঢাকা বারডেম হাসপাতালের হেপাটোবিলিয়ারি পেনক্রিয়াটিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী দক্ষিণ সুরমার জালালপুর ইউনিয়নের খতিরা গ্রামে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা (মরহুম) হাজি মো. সিকন্দর আলী। ডা. মোহাম্মদ আলী সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে কৃতিত্বের সঙ্গে এম.বি.বি.এস পাস করেন। উল্লেখ যে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ওই পরীক্ষায়
মেধা তালিকায় মেডিসিনে অনার্স সহ চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স থেকে সার্জারি বিষয়ে এফ.সি.পি.এস ডিগ্রি অর্জন করেন। পি.জি হাসপাতাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেজিস্ট্রার ও রেসিডেন্ট সার্জন হিসেবে চিকিৎসক ও শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বারডেম হাসপাতালের হেপাটোবিলিয়ারি পেনক্রিয়াটিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক।
তিনি ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে সৌদি সরকারের অধীনে সার্জারি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সৌদি আরবে কাজে যোগ দেন এবং মদিনার ইস্টামবু হাসপাতাল, বদর হাসপাতাল এবং পরিশেষে মদিনা মনোয়ারার কিং ফাহাদ হাসপাতালে অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সৌদি সরকারের ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেন। তিনি ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব সার্জন এডিনবরা থেকে সার্জারি বিষয়ে এফ.আর.সি.এস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি লিভার গলব্লাডার পেনক্রিয়াস হেপাটোবিলিয়ারি পেনক্রিয়াটিক সার্জারি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারিতে বাস্তব প্রশিক্ষণ ও ফেলোশিপ অর্জনের জন্য অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্রিজবেনে প্রিন্সেস আলেকজান্ডা হাসপাতালে যোগ দান করেন। ওই হাসপাতালে বিশ্বের প্রথম সফলকাম লিভিংডনার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন প্রফেসর রাসেল ডাবলুর্ড স্ট্রংগ এর সঙ্গে লিভার সার্জারি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করায় ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাডেমিক এক্সেলেন্স অ্যাওয়র্ড লাভ করেন।
বাংলাদেশে হেপাটোবিলিয়ারি পেনক্রিয়াটিক সার্জারি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট শুরু করার উদ্দেশে তিনি ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীকালে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম হেপাটোবিলিয়ারি পেনক্রিয়াটিক সার্জারি বিভাগ তিনিই শুরু করেন। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শত শত রোগী, লিভার গলব্লাডার বাইল ডাফট ও পেনক্রিয়াসের বিভিন্ন জটিল সার্জারির সুফল পেতে শুরু করে। যা দেশে এবং বিদেশে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়।
বারডেমের ওই ডিপার্টমেন্টে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলসহ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশে লিভার প্রতিস্থাপন লিভার ট্রান্সপ্লান্ট এর সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করেছেন এবং তিনি প্রথম বাংলাদেশে সফল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর অনেক তথ্যবহুল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ দেশে বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ফলরিডাস্ত বিখ্যাত মেয়োডিক্লনিক থেকে প্রকাশিত ট্রান্সপ্লান্ট বিষয়ে লিখিত একটি অধ্যায়ের লেখক হিসেবে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জাপানের টোকিও এবং কিয়োটো ইস্টগিতেও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট এর বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
বারডেম হাসপাতালে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ঢাকায় অনারারি কনসালটেন্ট হিসেবেও মানব সেবায় নিয়োজিত আছেন। তিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত লিভার বিশেষজ্ঞ ও সমাজসেবীদের সমন্বয়ে লিভার রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি লিভার রোগের প্রতিরোধে গণসচেতনতা, সুলভে চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণার উদ্দেশ্যে ‘লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’ নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে গঠন করেন। অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন। ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম দেশে এবং বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। বিশ্বের হেপাটাইটিস লিভার রোগ প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠিত জেনেভাস্থ ওয়াল্ড হেপাটাইটিস এলায়েন্স এলায়েন্সে লিভার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এই সংগঠনের বারো সদস্যবিশিষ্ট পাবলিক হেলথ প্যানেলের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।

Developed by: