বঙ্গবন্ধু-কে নিবেদিত ছয়টি কবিতা

sb

আতাউর রহমান মিলাদ

আমি জন্মেছি তোমার মৃত্যুর ভেতর

আমি জন্মেছি তোমার মৃত্যুর ভেতর
আমাকে কী করে ফেরাবে এই বেহুদা সময়
জীবন ঘনিষ্ঠ রাখি তোমার মহান মৃত্যু পাঠে
জেনেছি জীবন, মৃত্যুর আরেক ঠিকানা

পায়ের চিহ্ন ভুলে ঘাসের ডগা জেগে উঠে ফের
আমিও জেগেছি দেখো তোমার মৃত্যুর ভেতর
সমস্ত সঞ্চয় জমা রেখেছি রোদের উমে
শিশির হরণ করে পৌঁছে যাব আলোর আড়তে

জন্মের অপর পৃষ্ঠায় থাকে মৃত্যুর স্পষ্ট দাগ
মৃত্যু নিয়মে হলে মেনে নেয় ফুল পাখি পাতা
যতটা পতন চিহ্ন ইঁদুরের ধারালো দাঁতে
ঘরের দাওয়ায় পুঁতেছি তাই জন্মশত্রুতা

যতই কাটাই জীবন সংসারী মোহে
হত্যার প্রতিবাদে জ্বলে উঠবই দ্রোহে

আবু মকসুদ
পিতৃঋণ

যে বুকে পিতার ছায়া, সে ছায়া জলে, অন্তরিক্ষে
সে ছায়া জেগে র’বে হাজার বছর

যে পাতিল ভেঙে পরে ঘরের আঙিনায়
সেই ঘর ছিল তাঁর বুক
সেই ঘর পারবে না মুছতে তাঁর ছায়া
যতই হোক খেলা পাতিল ভাঙার

যে বই ঘুণে পোকা খায়, পাতা ছিঁড়ে নিয়ে যায় ধূর্ত শকুন
সেই বই ছিলতাঁর চোখ, যক্ষের ধন
সেই বই মহাকালে বলে যাবে তাঁর কালকথা
শকুনেরা মিশে যাবে ধুলায় ধুলায়

কালের কালিতে যে মূর্খ করে আস্ফালন
হাঁটুজলে চড়–ইয়ের বেসাতি করে, মূর্খতা
জানবে না কোনোদিন পড়ন্ত বেলাকে সে আনে ভোরের আলোয়
হাতের তালুতে করে সমুদ্র ধারণ

যে বুকে পিতার ছায়া, সে ছায়া জলে, অন্তরিক্ষে
সে ছায়া জেগে র’বে হাজার বছর

মনে পড়ে সে বিষণœ রাতের কথা
কাপুরুষ পশুদের সীমাহীন নির্লজ্জতা
হলুদ পাখিটির ঠোঁটে এক টুকরো খড়
ঠোঁট থেকে খসে পড়ে খড়, মাটিতে মাথা ঠুকে লজ্জায়, গ্লানিতে

কাপুরুষ পশুদের মৃত্যু হয়
মূর্খদের মৃত্যু হয়
ধূর্ত শকুনের মৃত্যু হয়
পাপীদের মৃত্যু হয়
তাদের সমাধি হয় কুকুরের বিষ্ঠায়

পিতার মৃত্যু নেই
পিতা বেঁচে থাকেস ন্তানের বুকের ভিতর

শাহ শামীম আহমদ
শোকাহত পদাবলী

শোক :
চারদিকে শুধুই দীর্ঘশ্বাস
বাতাসে ভর করে আছে পনেরই আগস্টের শোক
শোকের পাথরে টুকে টুকে পিতা ভেঙে যায় বুক

খুনি :
শোকের নদীতে আছে ভালোবাসা বুকের নদীতে বিদ্যুৎ
আমি খুনি হতে চাই পিতা একবার বলে দাও
বলে দাও হে দেবদূত।

দ্রোহ :
চিত্তলোকে আনন্দ
অন্তরে দ্রোহ অন্তরে বিষ!
মুজিব নামেই যেন জ্বলে অহর্নিশ।

কাজল রশীদ
আগস্টের প্রত্যুষে

হুতোম পেঁচার কু-উ-কু-উ শব্দে বিভোর হয়ে ওঠে সমস্ত বাড়ি।
বাগানে নিস্তব্ধ পাখির কোরাস। চামেলির ডালে বসা চড়–ই পড়ছে শ্লোক।
পায়রা, ঘুঘু, শ্যামা, দোয়েল- কোয়েল, হলদে শালিক, মৌমাছিরা ঝাঁকে ঝাঁকে
উড়ে উড়ে নিঝুম আকাশে চেয়ে আছে আপন মনে।
ফুটছে না অভিমানে কোনো জুঁই, শিউলি, বকুল,
ডাঁটা, পুঁই, কুমড়ো লতা, মাথা নত করে বসে আছে মনঃক্ষুণে।
উলুঝুলু বন আজ এলোমেলো, বৃষ্টির জল ফিকে হয়ে গেছে, ঝিঁঝির ডাক বেসুরা,
মৃদু গুঞ্জরণে বাহারি প্রজাপতি গুলো গড়াগড়ি খায় কুসুমের পাপড়িতে।
বাড়ির পাশে বয়ে যাওয়া কলতালহীন দীক্ষিত নদীর তরঙ্গমালা শোকাহত।
সমস্ত ঘর, সোফা, বেড, পালঙ্ক, অলিন্দ, কাঠ, লোহা-লক্কড় একে
একে চেয়ে থাকে
শেষ যাত্রার দিকে। অন্তরঙ্গ মেষ-বৃষগুলো চেয়ে থাকে বেদনার চোখে।
আমের বোলের সুঘ্রাণে ভরে আছে চারদিক।
হুতোম অলক্ষণী বিদঘুটে ভাষায় আবার কোরাস ধরেছে।

রেজওয়ান মারুফ

তিনি

যে চলে গিয়েও চলে যায় না
থেকে যায় বার বার
যার জন্যে গন্ধরাজ সাজে চোখে আদর দেয়া সফেদ রঙে
স্নিগ্ধ ভোরে প্রজাপতি  ম্লান করে সুবাসিত শিশিরের জলে।

তারই জন্যে তো খঞ্জনা গায়
সম্মোহনী সুরের সমবেত গীত
পায়ে ঘুঙুর বেঁধে বাতাস নাচে
ঢেউয়ের খাঁজ কাটা পথে পথে
মেঘেরা নির্মাণ করে আকাশের ঢালে শান্তির বাড়ি।

কিন্তু যখন বুকের আড়ৎ পরিপূর্ণ হয় দীর্ঘশ্বাসের তেজারতে
গৌরবের প্রান্তিক ম্লান করে দেয় রক্তের তেলচিত্র
সারেঙির কান্না দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে তখন।

আর আলোরা মরে যেতে যেতে বলেযায়
এই অচেনা আঁধার তাড়াতে তার বড় প্রয়োজন আজ।

 

 

এ কে এম আব্দুল্লাহ
আলোকিত উৎসব

রাতের শেষ পাতায় কলংকিত আঁধার
জ্যোৎস্নাবিহীন বিনাশের প্রচ্ছদ।
গভীর অন্ধকার থেকে উঠে আসা
চিহ্নিত খুনিরা আজ
তোমার মৃত্যুতে করে আনন্দ
মিথ্যে জন্ম লয়, মেতে উঠে অবৈধ উৎসবে।
একদিন তুমি যাদেরকে, নিজের রক্তের মত
ঠাঁই দিয়েছিলে বুকের ভিতর ;
বন্ধ্যা সময়ের রুঢ় পথে আজ–ওরা
ক্যান্সার হয়ে ছোবল মারে দেহে
মুছে দিতে চায় তোমার অস্থিত্ব।
জীবন ভুমিকায় তোমার প্রথম ক্রন্দন ধ্বনিতে
ছিলো জগতের শক্তি,নত হয়ে ছিলো
মায়ের প্রসব বেদনার চিৎকার।
তুমি ঘর আর ভোগ ছেড়ে এসেছিলে
এখানে মৃত্যুর মিছিলে,
আলোকিত উৎসব হবে বলে।

Developed by: