অকুণ্ঠ অতিথি
–
অকুণ্ঠ অতিথি এক, পাতার পালক। উড়ে এসে জুড়ে বসে পেতে চায় নালিশা জমিন, হৃদয় দখল। পলকে পলক ফেলে, হাতে রাখে হাত। গায়ে তার নীতিজ্ঞান ত্বকের খোলশ, নিষ্পাপ নির্মিত নিটোল চাদর। দাঁতাল প্রহর ঠেলে, আলোপাখি খোঁজে প্রতিদিন। দম্ভের দড়ি ছেঁড়া ভঙ্গুর বিশ্বাসে তুড়ি মেরে চলে তার কায়েমি শাসন। দেহমন্দিরে তার প্রেমঅর্চনা, পৌরাণিক বিশ্বাসের বিভাজিত বুনিয়াদ। বদলাতে চায় তৃষ্ণার রং, ক্ষুধাতুর সময়ের ব্যাকরণ। সমস্ত গরল গিলে পেতে চায় এক চুমুক প্রেম, এক ঢোক আলোমাখা বিশুদ্ধ জল। যন্ত্রণাহত সিংহের মতো ছটফট সময়ের অচিন্ত পথে এগুতে ব্যাকুল। অনীল আঁচল খোঁজে ব্যর্থতার খাটে বুঝি হবে তার করুণ শয়ন!
স্মিতহাসির বালিকারা বাঁকাচোখে ছুরি মেরে হেঁটে যায় সতীর্থ সরণির হাত ধরে…
গোলাপের সম্ভ্রম
–
অন্ধকারে বাড়ন্ত বিষবৃক্ষ। নষ্টের লতায় বাঁধা আলোর কঙ্কাল। অন্ধরে কষ্টের কোকিল। তুমুল তন্দ্রাকোলে আমি এক অবোধ বালক। ফেলে এসেছি ধৈর্যের ঝোলা, সহ্যের সরোবর। তুমি আমি মালী ছিলাম। রোপণ করেছি আলোগাছ সত্তার গভীরে। আলো ধরেছিল, তোমাকে দিয়েছি। এখন আঁধার আমার ভাগের। আমি তারে ভেবে নিই কোমল বালিকার নরোম আদর!
জানি, বিপন্ন নদীর কাছে থাকে না অবশিষ্ট কোনো বিশুদ্ধ জল, বিক্ষত বায়ুর কাছে নিশ্বাসের অম্লজান।তবে আর চাইবো কেন? বিবস্ত্র বাগান বাঁচাতে পারে না গোলাপের সম্ভ্রম, হাস্নাহেনার ঘ্রাণ।
অন্তদীপ
–
পুরনো পৃথিবী ঘেটে সহসাই পেয়ে যাই নতুন নগর
রাতজাগা নিসর্গে প্যাথেডিন সুখ…
হেমন্তের হাওয়াজ্বলা রোদে বিরস পর্বত, তৃষ্ণাকাতর টিনের চাল
চমকিত চোখ ভেতরে ভেতরে পাঠ করে ঘামের গৌরবে নির্মিত ইমারতের ইতিবৃত্ত
নীরব নৈরাজ্যে কাঁপে আঁধারের নিকষ বলয়…
দুয়ারখোলা চিন্তনে আমার, কেউ কেউ খুঁজে নাস্তিক্যবাদের ঘ্রাণ।
পেটের প্যাঁদানি খেয়ে ভুলে যাই শখের সাকিন, নখের নিলয়
হাতের হালুয়া মদে হেরে যায় পঙক্তির পায়েল, দৃঢ়তার কূলভাঙা ঢেউ, তবু
তোমার আঙুলের নীলায় আটকে যায় চোখের চশম, চিন্তাচলন
ঠোঁটের ঠমক আর চুলের উড়ালে নির্ঘুম চোখের চাতাল।
আমি নিশাচর বাদুড়ের মতো রাতের শেষ ট্রেনের প্রতীক্ষায় এ-ডালে ও-ডালে ঝুলি
জমাট কষ্টের নীল সুর ডেকে আনে শ্যাওলার অমানিশা
পেছনটায় টেনে ধরে সংসারী পিছুটান…
নাইয়রি ইশ্বর
–
জেগে ওঠো নতজানু শব্দবন্ধ, জেগে ওঠো নবীন ভূতুড়ে মৌনতা
দেখে নিই ঘুমোলো কোথায় কালের কলম, আশাহত সময়ের বিপন্ন ঈশ্বর!
আমি নই কোনো ডানাহীন বোধের বলাকা, মুখরিত মুল্লুকের শঙ্খচিল;
সাধনার সর্পিল সাঁকু বেয়ে নিশ্চুপ জলে নিয়েছি ধৈর্যের পাঠ…
আমার পায়ের ছাপে চলে সময় কুসুম, গায়ের গন্ধ শূঁকে রোদসংসার…
রোমশ রোদন ঠেলে ক্ষুধার জমিনে রোপণ করেছি আমি ফসলের অঘ্রান
তৃষ্ণার ঠোঁটে তুলে দিয়েছি তুমুল হাসি, জোছনার জল…
নথিবদ্ধ প্রেমের পুলকলাগা কথার করতলে যন্ত্রনাহত মজ্জার মাতম…
জেগে ওঠো নতজানু শব্দবন্ধ, জেগে ওঠো হালের হাপিত্যেসভাঙা বিহগ
দেখে নিই পালালো কোথায় চোখের আগুন, অতীন্দ্রিয় নাইয়রি ঈশ্বর!
তিনপদী–১
–
হার মেনেছি হার
শত হাজার বার
পৃথিবীতে কেউ কারো নয়, সবাই তো যার যার।