সিলেট মহানগরীতে অন্তত দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষের বসবাস ভাড়া বাসায়। বছরের শুরুতেই এসব ভাড়াটিয়াদের বাসার ভাড়া বেড়ে যাওয়ার আতঙ্ক চেপে ধরে। কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই বছরের শুরুতেই বাসার ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়াকে ‘রীতি’তে পরিণত করেছেন সিলেটের বাসা মালিকরা। বছরের শুরুতেই তাই ভাড়াটিয়ারা থাকেন ‘ভাড়া বাড়া’ আতঙ্কে। এবারও চলতি জানুয়ারিতে নগরীর অনেক স্থানেই বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন মালিকরা।
সিলেট মহানগরীতে কতো সংখ্যক মানুষ ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই সিটি করপোরেশনের (সিসিক) কাছে। তবে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, মহানগরীতে অন্তত দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষ ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তন্মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত অন্তত অর্ধ লাখ শিক্ষার্থী নগরীর বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া (মেস) নিয়ে থাকছেন।
এছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। এর বাইরে ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে মহানগরীতে অনেকেই বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। সবমিলিয়ে ভাড়াটিয়াদের সংখ্যা দুই লাখের বেশি হবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
বছরের শুরুতেই এসব ভাড়াটিয়াদের পড়তে হয় ‘ভাড়া বাড়া’ আতঙ্কে। বাসা মালিকরা হুটহাট এসেই বাড় ভাড়ার নোটিশ ধরিয়ে দেন। এ নিয়ে ভাড়াটিয়ারা প্রশ্ন তুললেই বাসা মালিকরা সাফ জানিয়ে দেন, ‘ভাড়া নিয়ে আপনার আপত্তি থাকলে বাসা ছেড়ে দিন’!
সিলেট নগরীর সাপ্লাইয়ে অন্তরঙ্গ আবাসিক এলাকার ভাড়াটিয়া শাহ আফজল বলেন, ‘বর্তমান বাসায় তিন বছর ধরে আছি। প্রত্যেক বছরের শুরুতেই মালিক ভাড়া বাড়িয়েছেন। আমাদের কোনো আপত্তিই কানে নেননি মালিক।’
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নগরীর শিবগঞ্জ এলাকার ভাড়াটিয়া খন্দকার জামিল বলেন, ‘চাকুরির কারণে বাধ্য হয়ে শহরে ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। বাসা মালিক বছরের শুরুতে তো বটেই, বিদ্যুতের দাম বাড়লে, গ্যাসের দাম বাড়লে কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই হুটহাট ভাড়া বাড়িয়ে দেন। বাসা ভাড়ার সাথে তাল মিলিয়ে চাকুরিতে স্যালারি বাড়ে না। ফলে খরচ কুলিয়ে ওঠতে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সিলেট মহানগরীতে গত এক যুগে বাসাভাড়া বেড়েছে অন্তত দুই থেকে তিনগুণ। বাসাভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নীতিমালা না থাকায় বাসা বা বাড়ি মালিকরা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাসা মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে অনেক ভাড়াটিয়া সিটি করপোরেশনে অভিযোগ করলেও নীতিমালা না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারেন না সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটভিউ২৪ডটকম’র এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, ‘মহানগরীতে কতো সংখ্যক ভাড়াটিয়া আছেন, তার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত একযুগে মহানগরীতে বাসা ভাড়া অন্তত দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এনামুল হাবীব বলেন, ‘অনেক সময়ই ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়ে সিটি করপোরেশনে অভিযোগ দেন ভাড়াটিয়ারা। তবে নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।’