কবি শাহীন ইবনে দিলওয়ারে

A-02শাহীন ইবনে দিলওয়ার- এর জন্ম ২৮ ফেব্র“য়ারি ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ। মাতা আনিসা খাতুন এবং পিতা দিলওয়ার খান- এর তিনি জ্যেষ্ঠপুত্র। কৈশোরেই তিনি ছড়া লেখার মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। পরে গল্প ও কবিতা রচনায় তিনি নিজেকে পরিণত লেখকে রূপান্তরিত করেন। তাঁর রক্তের মধ্যে কবি দিলওয়ার- এর জেনেটিক্যালি যেন সাহিত্যের জিন বিদ্যমান। তাঁর জন্মের পর কবিপিতা একটি সনেটে লিখেছিলেন-
অবশেষে তুমি এলে দ্যুতি নিয়ে আকাশ তারার
আমার আঁধার ঘরে যেখানে এখন্ মন কাঁদে
ভোরের পৃথিবী ঢেকে সূচীমুখ চিন্তার বিষাদে,
হে শিশু, এনেছো তবু আনন্দের বসন্ত-বাহার!
(নবজাতকের প্রতি)
বর্তমানে লেখক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তিনি নিউইয়র্কে মাস্টার্স অব পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন করার পর সেখানকার সিটি গভর্নমেন্টের হিউমেন রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে ‘ফ্রড ইনভেস্টিগেটর’ পদে কর্মরত আছেন। সহধর্মিণী সুলতানা পারভীন। তাদের তিনপুত্র- সাইয়ান শাহীন খান, নাহিয়ান শাহীন খান এবং তাজিম শাহীন খান। ২০০৮ সালে নাট্যগ্রন্থ ক্যাবী তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। ফেব্র“য়ারি ২০১২ সালে ১২টি গল্প নিয়ে গল্পগ্রন্থ ছায়াদেহ তাঁর দ্বিতীয় প্রকাশিত গ্রন্থ। ২১ ফেব্র“য়ারি ২০১২ সালে ৪৮টি কবিতা নিয়ে কাব্যগ্রন্থ সময়ের কঠিন বিবরে তাঁর তৃতীয় প্রকাশিত গ্রন্থ। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭ সালে ৭০টি কবিতা নিয়ে কাব্যগ্রন্থ এই তত্ত্ব শাহীন প্রবাসীর তাঁর চতুর্থ প্রকাশিত গ্রন্থ।
শাহীন ইবনে দিলওয়ারের নাট্যগ্রন্থ ক্যাবী প্রসঙ্গে ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৭ -এ নিউইয়র্কে কবি দিলওয়ার ক্যাবী নিয়ে ভাবনা-মুখবন্ধে লিখেছিলেন, ‘বিদেশ থেকেও মাঝে মাঝে তার আর্তকণ্ঠ ভেসে আস্তো- দেশ ও মাতৃভাষাকে স্মরণ করে। নিউইয়র্কে অতি কর্মব্যস্ত থাকা সত্বেও শাহীন তার পিতাকে কাছে পেয়ে লেখালেখির কাজে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে।’ নিুে কবি শাহীন ইবনে দিলওয়ারের কয়টি কবিতা দেওয়া হলো-
১.
কোথাও আমার কোনো স্বদেশ নেই

একটুকরো জমির সাফকবালা দেবো
এই জমি আমার, একদম নির্ভেজাল
মূল্য তার কোটি কোটি সোনার মোহর
ত্রিশ লাখের মৃত্যু দিয়ে কেনা
এই জমিটির সাফকবালা দেবো।

একদিকে থৈ থৈ বঙ্গোপসাগর
চারপাশে বন্ধু অথবা শত্রুর বহর
মাঝখানে তামাটে লোকগুলোর ঘরবাড়ি
ফলায় সোনালি শস্য, রমণীরা অদ্ভূত সুন্দর।

দেখে শুনে রেখো এই জমি
চিহ্নিত করেছি তার দিকগুলো
অনুপরমাণু নিংড়ে শক্তি নিয়ে
বসাও পিলার, অস্ত্র উঁচিয়ে রাখো।

সমস্ত পৃথিবী ঘুরে ফিরে আসি
কোনো প্রিয়ভূমি নেই, এই ক্ষুদ্র
লোকালয় ঘরবাড়ি লোকজন
ছাড়া, কোথাও আমার কোনো স্বদেশ নেই।


অমরতা

হাসান হাফিজুর রহমান
কয়বার দেখা হয়েছিল?

তবু তার কিছু সস্নেহ কথা
এমনভাবে মনে পড়ে
সময়ের তুমুল বৃষ্টিপাতেও
ধুয়ে মুছে যায় না।

জননীর পরলোকগমনে
মৈত্রেয়ী দেবীর একটি চিঠি
সদ্য মাতৃহারা ছয়টি শিশুর
কাঙালিপনার গভীর আদর
ছুঁড়ে দিয়ে ছিলো।

সানাউল হক খান
যার কাছে শিশু থেকে
যেতে ভালো লাগে
এখনো যিনি একই দক্ষতায়
অন্তর ছুঁয়ে যান।

আবদুল কাদির মাহমুদ
যখন কিছুই ছিলাম না
তখনো তার কাছে
কিছু একটা ছিলাম।

কিছু কিছু মানুষ এমনি হয়
যাদের হৃদয়
কখনো স্তব্ধ হয় না।


মানুষ জন্মায় না

এখন আর মানুষ জন্মায় না
শুকর জন্মায়
দুহাত তুলে বুক পেতে দিলে
বুনো শুকরের দল দাঁত
উঁচিয়ে তেড়ে আসে
হাত বাড়িয়ে কিছু দিতে গেলে
ছিনিয়ে নিতে চায়।

নম্র হয়ে থাকলে
উগ্র হয়ে আসে
ষাঁড়ে ষাঁড়ে গুঁতোগুঁতি
লেগেই থাকে
শিষ্ট কথায় রুচি নেই
মারমুখী লোকদের
কদর বেশি
রক্ত ঝরাতে পারলে
ভয়ে ভয়ে থাকে
মানুষের দাম নেই,
এখন আর মানুষে জন্মায় না
শুকর জন্মায়।

ঘরের পাশে নৃশংসমৃত্যু
দেখেও নড়ে চড়ে বসে না
সিরিয়াল চলতে থাকে
মায়ের মতো রমণিকূল
রাস্তায় বেরুতে পারে না একাকী
মায়ের পেটে জন্মানো শুকরের দল
মাতৃগর্ভ ভুলে গেছে
মাতৃস্তন্যপায়ী শ্বাপদ
জননীর স্তন থেতলে দিতে চায়।

যে কটা দিন বেঁচে আছি
মানুষ হয়ে জন্মানো এই হারামীদের
নষ্টামী দেখে যেতে হবে
এই সিরিয়ালগুলো চলতে থাকবেই।


চিরকালীন
(অনুজ কবি কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ারের অকাল প্রয়াণে)

আজ ভোরে কিশওয়ারের
মৃত্যুসংবাদে পত্রিকার মৌন মিছিল
দরজায় দাঁড়িয়ে নেই শব্দচাষী
সেই দুরন্ত বালক।

হকারের ছুঁড়ে দেয়া কাগজগুলো
চিতায়ী দ্রুততায় লুফে নিয়ে
সাদাকালো শব্দগুলো হাতড়াতো
অবুঝ বালকের মতো, যেনো
শব্দগুলো তার প্রিয় খেলনা
কারো সাথে ভাগাভাগিতে নেই।

নিঃশব্দে মহাকালের পথে
বাড়ালি প্রিয় ভাইটি আমার
অকালে মৃতা মায়ের সাথে
দেখা হবে, আমার সালাম দিবি।

কবিতার বইগুলো মায়ের
পদতলে রেখে বলবি,
আমার সন্তানেরা ক্ষণজন্মা নয়-
চিরকালীন।

Developed by: