দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর ৮ মাস

দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের বছরগুলোর তুলনায় কমেছে। দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার জন। বর্তমানে স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের বছর ছিল ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে চলমান করোনা মহামারীর মধ্যে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ দশমিক ৮ বছর দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে নারীদের গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ৫ বছর এবং পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ দশমিক ২ বছর। সেই হিসাবে বাংলাদেশের নারীদের আয়ুষ্কাল এখন পুরুষদের তুলনায় ৩ দশমিক ৩ বছর বেশি। আগের যে কোন সময়ের তুলনায় বিভিন্ন সামাজিক সূচকে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে কমেছে মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার। বর্তমানে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় রয়েছে দেশের ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স-২০২০’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে শিক্ষার হারসহ সামাজিক অনেক সূচকে অগ্রগতির চিত্র পাওয়া গেছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন অডিটরিয়ামে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এই অভিমত প্রকাশ করেন। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম এবং বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হলো ১.৩০ শতাংশ। তবে এই বৃদ্ধির হার প্রতি বছরই হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৬ সালে ছিল ১.৩৬ শতাংশ। গত ২০২০ সালে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮০ লাখ জন। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জনবহুল দেশ হওয়ার সত্তে¡ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য আছে। একজন মা এখন গড়ে দুটি সন্তানের জন্ম দেন। এখন থেকে ৫০ বছর পেছনে তাকালে দেখা যাবে তখন একজন মা গড়ে ছয়টি সন্তানের জন্ম দিতেন। আমাদের দেশের মানুষ এখন শিক্ষিত হয়েছে এবং সচেতনতা বেড়েছে। কাজেই এটি আমাদের জন্য বিরাট সাফল্য।

২০২০ সালের হিসাবে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ বছরে ৮ মাস, যা ২০১৯ সালে ছিল ৭২ বছর ৬ মাস। এছাড়া ২০১৮ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর ৩ মাস, ২০১৭ সালে ৭২ বছর এবং ২০১৬ সালে ৭১ বছরে ৬ মাস। জনসংখার মধ্যে পুরুষ ও নারীর সংখা প্রায় সমান। ৮ কোটি ৪৬ লাখ ৪০ হাজার পুরুষ এবং ৮ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার হলো নারী। পুরুষের গড় আয়ু ৭১ বছর ২ মাস। আর নারীদের গড় আয়ু ৭৪ বছর ৫ মাস। ২০২০ সালে পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭১ বছর ২ মাস। ২০১৯ সালে ছিল ৭১ বছর ১ মাস। ২০১৮ সালে ৭০ বছর ৮ মাস, ২০১৭ সালে ৭০ বছর ৬ মাস এবং ২০১৬ সালে ছিল ৭০ বছর ৩ মাস। অন্যদিকে নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০২০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে গড় আয়ু ৭৪ বছর ৫ মাস, ৭৪ বছর ২ মাস, ৭৩ বছর ৮ মাস, ৭৩ বছর ৫ মাস এবং ৭২ বছর ৯ মাস। পাঁচ বছরে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল গড়ে প্রতিবছরে ০.২৪ বছর হারে বেড়েছে। পাঁচ বছরে মোট ১.২ বছর বেড়েছে। এই বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পুরুষের ০.৯ বছর এবং নারীর ক্ষেত্রে ১.৬ বছর। আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক জানিয়েছেন, এখন চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ সহজেই চিকিৎসা নিতে পারছেন। তাছাড়া খাদ্যগ্রহণ আগের চেয়ে বেড়েছে। পুষ্টিগ্রহণের ক্ষেত্রে তুলনামূলক অগ্রগতি হয়েছে। মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে গড় আয়ু বেড়েছে।

 

Developed by: