সিলেটে টিসিবি’র পণ্য কিনতে ভিড়

সিলেটে টিসিবি’র পণ্য কিনতে আসা মানুষের ভিড় বাড়ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কিনছেন পণ্য। স্বস্তি একটাই- সরকার নির্ধারিত দামে তারা পণ্য কিনতে পারছেন। কিন্তু এবার সিলেটে টিসিবি’র পণ্য কিনতে ভিড় করছেন মধ্যবিত্তরাও। একে তো বর্ষার মৌসুম। অন্যদিকে লকডাউন। সব মিলিয়ে জীবিকায় টান পড়েছে। এ কারণে টিসিবি’র পণ্য কিনতে ভিড় করছেন মধ্যবিত্তরা।

নিম্নবিত্তরাও সকাল থেকে অপেক্ষায় থাকেন পণ্য কেনার। সিলেট নগরীর মাছুদীঘিরপাড় এলাকার রাজ্জাক আহমদ। নগরের হকার মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী।  মোটামুটি সচ্ছল পরিবার তার। একদিকে দোকান ভাড়া, স্টাফ খরচ দেয়া; অন্যদিকে সংসার চালানো তার জন্য কষ্টকর হয়ে উঠেছে। জানালেন- লকডাউন বেড়েছে আরও এক সপ্তাহ। দোকান খোলা যাবে না। বাজার খরচের টাকা বাঁচাতে তিনি টিসিবি’র পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। শুধু রাজ্জাকই নয়, অনেক মধ্যবিত্ত, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীরা এসে দাঁড়িয়েছেন টিসিবি’র লাইনে। সোমবার থেকে সিলেটে শুরু হয়েছে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি। নগরীর রিকাবীবাজার, মদিনা মার্কেট, আম্বরখানা, বন্দরবাজার সহ ৬টি এলাকায় ট্রাকে করে ডিলাররা তিন ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। প্রতিটি এলাকায়ই টিসিবি’র লম্বা লাইন। শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে লাইনে। এতে করে ডিলাররা দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। ডিলাররা জানিয়েছেন, সকাল থেকে পণ্য কিনতে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। বিকাল পর্যন্ত থাকে ভিড়। এর মধ্যে বিকিকিনি করা হয়। তবে টিসিবি’র পণ্য কিনতে আসা ক্রেতাদের মধ্যেও বেশি মানুষের উপস্থিতির কারণে করোনা নিয়ে ভয় রয়েছে। ক্রেতারা জানিয়েছেন, সরকার ঘোষিত টিসিবি’র পণ্য কিনতে সিলেটে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। এতে করে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। প্রায় এলাকাতেই টিসিবি’র ট্রাককে ঘিরে মানুষের ভিড় রয়েছে। আবার কে কার চেয়ে আগে পণ্য কিনবেন সেটি নিয়েও রয়েছে প্রতিযোগিতা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা প্রয়োজন। সোমবার ও মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবি’র পণ্য বিক্রিতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের দৃশ্য চোখে পড়েছে। এমনকি পাশে পুলিশ থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। সিলেট বিভাগের টিসিবি আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগের চার  জেলায় ২৫টি ট্রাকে করে টিসিবি’র মালামাল বিক্রি হবে। এরমধ্যে সিলেট নগরীতে ৬টি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হবে। টিসিবি’র পণ্যে, প্রতি লিটার তেলের দাম ১০০ টাকা, ডাল ৫৫ টাকা ও চিনি ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে, সবাইকে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মেনে পণ্য বিক্রি ও ক্রয় করার নির্দেশনা রয়েছে। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার ও শেরপুর টিসিবি আঞ্চলিক কার্যালয়ের ইনচার্জ  মো. ইসমাইল মজুমদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সিলেটে টিসিবি’র পণ্যের চাহিদা অনেক। চাহিদা অনুযায়ী মজুতও আছে অনেক। যে পরিমাণ পণ্য আছে ২৯শে জুলাই পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে ঈদুল আজহার ছুটিতে এ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। পরে আবার চলবে। তিনি বলেন, একটা সময় ছিল, যখন মানুষজন মনে করতেন শুধুমাত্র নিম্ন আয়ের মানুষজন টিসিবি’র পণ্য কিনেন। কিন্তু বর্তমানে বাজারের ঊর্ধ্বগতির কারণে টিসিবিমুখী হচ্ছেন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাই টিসিবি’র পণ্য কিনতে দিন দিন ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। তাই  ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করতে তিনি ডিলারদের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন- ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ালেও তারা টিসিবি’র ডিলারদের কাছে প্রয়োজনীয় সব পণ্য পাচ্ছেন না। নির্ধারিত কিছু পণ্য বিক্রি করছেন ডিলাররা। ডিলাররা আবার ‘প্যাকেজ’ সিস্টেম করে সব পণ্যই ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে করে চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও ক্রেতাদের পণ্য কিনতে হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, টিসিবি’র ট্রাকে পণ্য বাড়ানো হলে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ হবে। কেবলমাত্র দুটি অথবা তিনটি পণ্য দিয়ে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার জন্য তারা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

Developed by: