ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

পণ করেই যেন নেমেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ম্যাচে নায়ক, মহানায়ক হবেন তিনি। যদিও ম্যাচসেরা হয়েছেন টাইগার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ম্যাচের ১৯ নম্বর ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজ অস্ট্রেলিয়াকে ঠেলে দেন খাদের কিনারায়। তার দেখানো পথে বাকি কাজটুকু সারেন মেহেদি হাসান। শেষ ওভারে মেহেদি ১১ রান দিয়ে গোটা বাংলাদেশকে প্রজাপতির রঙিন ডানায় উৎসব করার উপলক্ষ তৈরি করে দেন। ম্যাচের শেষ বল হতেই বাঁধভাঙা উৎসব, উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন মাহমুদুল্লাহ, মেহেদি, মুস্তাফিজ, সাকিবরা। এমন উৎসব, এমন উচ্ছ্বাস শুধু মাহমুদুল্লাহরাই গতকাল এঁকেছেন মিরপুরের সবুজ ক্যানভাসে। দিনের প্রথম সেশনে হ্যাটট্রিক করে নাথান এলিস ‘এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ গল্পের নতুন ভার্সন লিখেন মিরপুরে। দ্বিতীয় সেশনে এলিসকে আড়াল করে ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান নতুন করে লিখেন রূপকথার গল্প ‘মুস্তাফিজ ইন মিরপুর’। তার দুঃস্বপ্নের বোলিংয়ে ১০ রানের স্বপ্নের জয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অবিস্মরণীয় সিরিজ জিতে সোনালি হরফে ইতিহাস লিখে বাংলাদেশ। শুধু টি-২০ সিরিজই নয়, যে কোনো ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টাইগারদের  এটা প্রথম সিরিজ জয়। গতকাল সিরিজ নিশ্চিত করতে শেষ ওভারে জয়ের জন্য সফরকারীদের দরকার ছিল ২২ রান। মেহেদি হাসানের প্রথম বলে ছক্কা, দ্বিতীয় বলে ১ রান, তৃতীয় বলে ডট, চতুর্থ বলে নোসহ ২ রান নেয় সফরকারীরা। এরপর সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ তিন বলে ১৩ রান। কিন্তু শেষ ওভারে ১১ রানের বেশি নিতে পারেনি ওয়েড বাহিনী। ১০ রানের স্বপ্নিল জয় তুলে নেয় মাহমুদুল্লাহ বাহিনী। আজ সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ খেলবে। সিরিজ নিশ্চিতের পর এখন হোয়াইটওয়াশের স্বপ্ন দেখছে টাইগাররা। এর আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১২ সালে টি-২০ সিরিজ জিতেছিল ৩-০ ব্যবধানে। সব মিলিয়ে এটা বাংলাদেশের সপ্তম সিরিজ জয়। আগের দুই ম্যাচে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। হেরেছিল যথাক্রমে ২৩ রান ও ৫ উইকেটে। গতকালের ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের সিরিজ নিশ্চিতের। বিপরীতে সিরিজে ফেরার ম্যাচ ছিল ম্যাথু ওয়েডের অস্ট্রেলিয়ার। জান বাঁচানোর এমন ম্যাচে একাদশে তিন পরিবর্তন এনে খেলতে নামে সফরকারী ওয়েড বাহিনী। টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামে অস্ট্রেলিয়া এবং অভিষেক হয় এলিসের। ম্যাচে পাঁচ নম্বর বোলার হিসেবে বোলিং করেন। ম্যাচ শেষ করেন ৪-০-৩৪-৩ নিয়ে। প্রথম ৩.৫ ওভারে তিনি ৩৪ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। শেষ তিন বলে স্লোয়ারে একে একে সাজঘরে ফেরান টাইগার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ, মুস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদি হাসানকে। টানা তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে মিরপুর স্টেডিয়ামকে রঙিন করেন এলিস। টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসে অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার বিরল কীর্তি গড়েন ডানহাতি মিডিয়াম পেসার। সব মিলিয়ে টি-২০ ক্রিকেটে এটা ১৭ নম্বর হ্যাটট্রিক। বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের তিন হ্যাটট্রিকম্যান ব্রেট লি ২০০৭ সালে, ল্যাসিথ মালিঙ্গা ২০১৭ সালে এবং দীপক চাহার ২০১৯ সালে। অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় বোলার হিসেবে টি-২০ ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করেন এলিস। বাকি দুজন ব্রেট লি ও অ্যাস্টন অ্যাগার।আগের দুই ম্যাচ টস হেরেছিলেন টাইগার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। ম্যাচ দুটি জিতেছিল বাংলাদেশ। গতকাল টস জিতে ব্যাট করেন প্রথমে। মিচেল স্টার্ক, এন্ড্রু টাই ও জশ ফিলিপকে ছাড়া খেলতে নামা নতুন একাদশ নিয়ে অলআউট ক্রিকেট খেলে ওয়েড বাহিনী। ব্যাট করতে নেমে আগের দুই ম্যাচের মতো গতকালও ব্যর্থ হয় ওপেনিং জুটি। দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন ২.১ ওভারে ৩ রানের মধ্যে। গোটা সিরিজে পুরোপুরি ব্যর্থ সৌম্য সরকার গতকাল আউট হন মাত্র ২ রানে। তিন ম্যাচে তার রান ২, ০ ও ২। মোট ৪ রান। অথচ জিম্বাবুয়ে সিরিজে করেছিলেন দুটি হাফসেঞ্চুরি। প্রথম ম্যাচে ওপেনিং জুটিতে রান ছিল ৩.৩ ওভারে ১৫ এবং দ্বিতীয়টিতে ২.২ ওভারে ৯ রান। দুই ওপেনার ব্যর্থ হলেও দলকে টেনে নিয়ে যান অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ, ক্যারিয়ারের দেড় দশক পূর্ণ করা সাকিব ও তরুণ আফিফ। সাকিব ২৬ রান করেন ১৭ বলে। মাহমুদুল্লাহ ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফসেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন ৫৩ বলে। ৫২ রানের ইনিংসে ছিল ৪টি চার। ধারাবাহিক পারফরমার আফিফ ১৯ রান করেন ১৩ বলে ১ চার ও এক ছক্কায়। টার্গেট ১২৮ রান। আগের দুই ম্যাচে যেখানে সফরকারীদের স্কোর যথাক্রমে ১০৮ ও ১২১, সেখানে ১২৮ রান একটু বেশিই। তারপরও ছন্দে থাকা মার্শের চওড়া ব্যাটে চড়ে লড়াই করেছে সফরকারীরা। কিন্তু মার্শ ৪৭ বলে ছয় চার ও এক ছক্কায় ৫১ রান করে সাজঘরে ফিরলে চাপে পড়ে ওয়েড বাহিনী। সেখান থেকে টেনে নিতে পারেননি আর কোনো অসি ক্রিকেটার। আগের দুই ম্যাচের মতো গতকালও দুর্দান্ত বোলিং করেন ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান। ১২ বলে যখন অস্ট্রেলিয়ার দরকার ২৩ রান তখন ইনিংসের ১৯ নম্বর ওভারে ১ রান দেন। ৪ ওভারে তিনি রান দেন মাত্র ৯। শেষ ওভারে মেহেদি রান দেন মাত্র ১১। সিরিজ হারের ম্যাচেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন মার্শ। আগের দুই ম্যাচে তার স্কোর ছিল যথাক্রমে ৪৫ ও ৪৫। গতকাল প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে বেন মাকডারমট করেন ৩৫ রান।

Developed by: