বড় পরিবর্তন আসছে শিক্ষাক্রমে

বাসিয়া ডেস্ক ॥ শিক্ষাকে আনন্দময় করতে ঢেলে সাজানো হচ্ছে পুরো কারিকুলাম, বাস্তবায়ন করা হচ্ছে একগুচ্ছ নতুন পরিকল্পনা। প্রস্তাবিত কারিকুলামে পরীক্ষার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়নকেও।
২০২৩ সালে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। আগামী ২০২৫ সাল থেকে পুরোপুরি নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হচ্ছে। এতে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোন পরীক্ষা দিতে হবে না। আর নবম ও দশম শ্রেণীতে বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা বাণিজ্যের মতো বিভাগ থাকবে না। শিক্ষার্থীরা একাদশে গিয়ে কোন্ বিভাগে পড়বে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আর দশম শ্রেণীর আগে আর থাকছে না পাবলিক পরীক্ষা।

আগামী ২০২৪ সাল থেকে ৮ম ও ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। সেই হিসেবে ২০২৪ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের জেএসসি পরীক্ষা উঠে যাচ্ছে। এছাড়া ২০২৫ সাল থেকে ৫ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। সেই হিসেবে ২০২৫ সালে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা উঠে যাচ্ছে।

সোমবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শিক্ষাক্রমের খসড়া রূপরেখা অনুমোদন করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই রূপরেখা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেছেন, ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দঘন শিক্ষা নিশ্চিত করতে এরকম শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে।

তিনি জানান, ২০২৫ সাল থেকে এ শিক্ষাক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়নে আগামী বছর থেকে কাজ শুরু হবে। আগামী বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১০০টি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হবে। এরপর ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় বলা হয়েছে, আগামী বছর থেকে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে শুরু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণী এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণীতে এই শিক্ষাক্রম শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, দশম শ্রেণীর পাঠ্যক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি পরীক্ষা নিয়ে সেই দুই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল দেয়া হবে। অন্য শ্রেণীতে হবে সমাপনী পরীক্ষা, সমাপনীতে ধারাবাহিক মূল্যায়নের সঙ্গে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। পরীক্ষা আর মূল্যায়ন এক করে দেখলে হবে না।

পুরো শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক হবে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, আনন্দময় পড়াশোনা হবে। বিষয়বস্তু ও পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমানো হবে। গভীর শেখনে গুরুত্ব দেয়া হবে। মুখস্থ নির্ভরতার বিষয়টি যেন না থাকে, এর বদলে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শেখাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে খেলাখুলা ও অন্যান্য কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষেই যেন অধিকাংশ পাঠ গ্রহণ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত অভিন্ন ১০ বিষয় ॥ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সূত্রমতে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। এরপর একাদশ শ্রেণীতে গিয়ে শাখা পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হবে। বর্তমানে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কিছু অভিন্ন বই পড়তে হয় এবং নবম শ্রেণীতে গিয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এসব শাখায় ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যে ১০টি বই পড়ানো হবে, সেগুলো হলো বাংলা, ইংরেজী, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। বর্তমানে এসব শ্রেণীতে ১২-১৪টি বই পড়ানো হয়।

মূল্যায়ন হবে যে ভিত্তিতে ॥ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয়েই ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে গিয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। আর ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে ক্লাস শেষে পরীক্ষার মাধ্যমে যেটি সামষ্টিক মূল্যায়ন বলা হচ্ছে। ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীতে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। নবম ও দশম শ্রেণীতে কয়েকটি বিষয়ে শিখনকালে অর্ধেক মূল্যায়ন হবে এবং বাকি অর্ধেক সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে ৩০ ভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং ৭০ ভাগ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে।

উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৭০ শতাংশ। পাবলিক পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ পরীক্ষা দিতে হবে। প্রয়োগিক বা ঐচ্ছিক বিষয় শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। এছাড়া নৈর্বাচনিক, বিশেষায়িত কাঠামো, প্রকল্পভিত্তিক, ধারণা অনুযায়ী সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক ও ব্যবহারিক ও অন্যান্য উপায়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে। সেখানে নানা এ্যাসাইনমেন্ট হয়, প্রকল্প হয়, সেগুলোর মাধ্যমে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আমিনুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

Developed by: