সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ৮৩৯ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণের বাজেট ঘোষিত হয়েছে। ‘নতুন সিলেট’ গড়ার স্বপ্নে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ৮৩৯ কোটি ২০ লাখ ৭৬ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন। নগরীর আরামবাগ এলাকার একটি কনভেনশন হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে (১৬ সেপ্টেম্বর) ২০২১-২২ অর্থবছরের এই বাজেট ঘোষণা করা হয়।পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটই সিসিকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এবারই বাজেটের আকার ৮শ’ কোটি ছাড়িয়েছে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের পরিমাণ ছিল ৭৮৯ কোটি ৩৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।

সিসিক সূত্রে জানা গেছে, গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৭৪৩ কোটি ৫৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। করোনা মহামারির কারণে গেল বছর ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই বাজেট ঘোষণা করেছিলেন মেয়র আরিফ।

আজ বাজেট ঘোষণায় ‘নতুন সিলেট’ গড়ার কথা বলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমরা বীরের জাতি। আমাদের লড়াকু মনোভাবকে সঙ্গী করে সিলেটের সকল মানুষের সহযোগিতায় করোনা মোকাবিলা করে এবং শত ঝুঁকি উপেক্ষা করে সিলেটের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই সিলেটে দলমত ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে যেভাবে করোনা মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছেন তা অতুলনীয়। এই একতাই আমাদের সিলেটের বড় শক্তি। এই একতা, এই সাহস আমাদেরকে ‘নতুন সিলেট’ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।”

ঘোষিত নতুন বাজেটে আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ সমান দেখানো হয়েছে।

বাজেটে উল্লেখযোগ্য আয়ের খাত দেখানো হয়েছে- হোল্ডিং ট্যাক্স ৪৪ কোটি ৯২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের উপর কর ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ইমারত নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের উপর কর ২ দুই কোটি টাকা, পেশা ব্যবসার উপর কর ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বিজ্ঞাপনের উপর কর ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, বিভিন্ন মার্কেটের দোকান গ্রহীতার নাম পরিবর্তনের ফি ও নবায়ন ফিস বাবদ ৯০ লাখ টাকা, ঠিকাদারী তালিকাভুক্তি ও নবায়ন ফিস বাবদ ৩০ লাখ টাকা, বাস টার্মিনাল ইজারা বাবদ আয় ৫৫ লাখ টাকা, ট্রাক টার্মিনাল ইজারা বাবদ আয় ১৭ লাখ টাকা, খেয়াঘাট ইজারা বাবদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি ও দোকান ভাড়া বাবদ ১ কোটি টাকা, রোড রোলার ভাড়া বাবদ আয় ৬০ লাখ টাকা, রাস্তা কাটার ক্ষতিপূরণ বাবদ আয় ৫০ লাখ টাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে আয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, পানির সংযোগ লাইনের মাসিক চার্জ বাবদ ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা, পানির লাইনের সংযোগ ও পুনঃসংযোগে ফি বাবদ ৮০ লাখ টাকা, নলকূপ স্থাপনের অনুমোদন ও নবায়ন ফি বাবদ ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বাজেট বক্তৃতায় মেয়র আরিফ বলেন, ‘সম্মানীত নগরবাসী নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্সসহ অন্যান্য বকেয়া পাওনা পরিশোধ করলে বাজেট বছরে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব খাতে সর্বমোট ৮২ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।’

বাজেটে ব্যয়ের খাত দেখানো হয়েছে- সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) খাতে ১০ কোটি টাকা, কোভিড-১৯ মোকাবেলা, ডেঙ্গু মোকাবেলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচার উপ-খাতসহ সরকারি বিশেষ মঞ্জুরী খাতে ৩১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, অন্যান্য প্রকল্প মঞ্জুরী বাবদ ১ কোটি টাকা,সিটি কর্পোরেশনের অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প ১০ কোটি টাকা, সিলেট মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প খাতে ১৩০ কোটি টাকা, ২০১৮ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প খাতে ২৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা, মহানগরীর নাগরিক সেবাবৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের জন্য আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সরবরাহ শীর্ষক প্রকল্প খাতে ২৬ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা, নগর ভবনের ঊর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ প্রকল্প খাতে ২০ কোটি টাকা, দক্ষিণ সুরমা এলাকায় শেখ হাসিনা শিশু পার্কে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ২ কোটি টাকা, মহানগরীর যানজট নিরসন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প খাতে ৫ কোটি টাকা, বিভিন্ন ছড়া খনন ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ প্রকল্প খাতে ১০ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশন এসফল্ট প্লান্ট স্থাপন ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে জমি অধিগ্রহণ খাতে ৩০ কোটি টাকা, সিটি কর্পোশনের নিজস্ব ফিলিং স্টেশন স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশনের প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্লান্ট স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, কুমারপাড়ায় সিটি কর্পোরেশনের নগর মাতৃসদন ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা।

এছাড়া লালমাটিয়া ডাম্পিং গ্রাউন্ড উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ২০ কোটি টাকা, তোপখানা পানি শোধনাগারের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বোতলজাত করে বিক্রয় প্রকল্প খাতে ৩০ কোটি টাকা, দক্ষিণ সুরমা বাস টার্মিনাল আধুনিকায়ন প্রকল্প ৩ কোটি টাকা, উৎপাদন নলকূপ স্থাপন খাতে ৫ কোটি টাকা, সুরমা নদীর উত্তর তীর ঘেষে সার্কিট হাউসের সম্মুখ হতে হযরত গাজী বুরহান উদ্দিন সড়ক পর্যন্ত রিটেইনিং ওয়াল এবং ওয়াকওয়েসহ রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প খাতে ২০ কোটি টাকা, মহানগরীতে যানজট নিরসনে ৪টি পার্কিং ব্যবস্থা নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪টি গরুর হাট নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪টি জবাইখানা নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪টি খেলার মাঠ নির্মাণ খাতে ৪ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন খাতে ২০ কোটি টাকা, সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মাজার, কবরস্থান, শশ্মান ঘাট, ঈদগাহ উন্নয়নে ১০ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।

ব্যয়ের খাত হিসেবে ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরগণের স্থায়ী অফিস স্থাপন প্রকল্প ২ কোটি টাকা, ভারতীয় অনুদানে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উন্নত পরিবেশ ও শিক্ষার মান উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশন এলাকার অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প খাতে ৫ কোটি টাকা, এমজিএসপি প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ ও পূর্ত কাজের পাওনাদী পরিশোধের জন্য বরাদ্দ বাবদ ৫ কোটি টাকা, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আরবান রেজিলেন্স প্রকল্পের আওতায় ইওসি (EOC) নির্মাণ প্রকল্প ৫ লক্ষ টাকা, মহানগরীর সুয়ারেজ মাস্টার প্লানের ফিজিবিলিটি স্টাডিকরণ প্রকল্প ৫ কোটি টাকা, ৫০ এমএলডি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের জন্য ১৩.১৩ একর জমি অধিগ্রহণ ৫ কোটি টাকা, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্প খাতে ৫০ লক্ষ টাকা, নগরীর বস্তি সমূহের উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ২ কোটি টাকা এবং সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্প খাতে মার্কেট নির্মাণ বাবদ প্রাপ্ত সালামী ও সিটি কপোরেশন আবাসিক প্রকল্পের নির্মাণ ব্যায় গ্রহণ বাবদ মোট ৪৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

বাজেটে রাজস্ব খাতে সর্বমোট ৮০ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। তন্মধ্যে সাধারণ সংস্থাপন খাতে ৩২ কোটি ২৪ লাখ টাকা, শিক্ষা ব্যয় খাতে ৬ কোটি ৮ লাখ টাকা, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান খাতে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য ও প্রয়ঃপ্রণালী খাতে ব্যয় বাবদ ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ খাতে ব্যয় ৫০ লক্ষ টাকা, বৃক্ষরোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় খাতে ২০ লক্ষ টাকা, মোকদ্দমা ফি ও পরিচালনা ব্যয় বাবদ ২৫ লক্ষ টাকা, জাতীয় দিবস উদযাপন ব্যয় খাতে ৭০ লক্ষ টাকা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ব্যয় খাতে ১ কোটি টাকা, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি ব্যয় খাতে ১৫ লক্ষ টাকা, মেয়র কাপ ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনে ব্যয় বরাদ্দ ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, মেয়র কাপ ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট আয়োজনে ব্যয় বরাদ্দ ৩০ লক্ষ টাকা।

এছাড়া রিলিফ বা জরুরী ত্রাণ ব্যয় বরাদ্দ ১ কোটি টাকা, আকস্মিক দুর্যোগ/বিপর্যয় খাতে ব্যয় বরাদ্দ ২ কোটি টাকা। রাস্তা আলোকিতকরণ ব্যয় বরাদ্দ ৩ কোটি টাকা, কার্যালয় বা ভবন ভাড়া বাবদ বরাদ্দ ১ কোটি টাকা, নিরাপত্তা/সিকিউরিটি পুলিশিং ব্যয় খাতে ৫০ লাখ টাকা, ডিজটাল মেলা আয়োজনে ব্যয় বরাদ্দ ৩০ লাখ টাকা। অনান্য ব্যয় খাতে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া পানি সরবরাহ শাখার সংস্থাপন ব্যয়সহ পানির লাইনের সংযোগগ ব্যয়, পাম্প হাউজ, মেশিন, পাইপ লাইন মেরামতে ১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাজেটে রাজস্ব খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ব্যয় বাবদ ২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তন্মধ্যে রাস্তা নির্মাণ, রাস্তা মেরামত বা সংস্কার, ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ, মেরামত, সংস্কার, ড্রেন নির্মাণ বা মেরামত, সরঞ্জাম যন্ত্রপাতি ও সম্পদ ক্রয়, সিটি কর্পোরেশনের ভবন নির্মাণ বা মেরামত, সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ ও সংস্কার, ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব লিয়াজো অফিসের জন্য ফ্ল্যাট ক্রয়, কসাইখানা নির্মাণ বা ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা উন্নয়ন, সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন রক্ষায় গ্যারেজ নির্মাণ, সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণে ওয়ার্কশপ নির্মাণ, হাটবাজার উন্নয়ন, বাস টার্মিনাল সংস্কার ও উন্নয়ন, সিটি কপোরেশন এলাকায় পাঠাগার নির্মাণ, নাগরিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, গভীর নলকূপ স্থাপন, এমজিএসপি প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের নিজস্ব অর্থ ব্যয়, সিটি কর্পোরেশনের জন্য জিপ গাড়ী ও ২টি আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় এবং নারীদের উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ ব্যয় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

Developed by: