ঢাকাই ছবির অমর নায়ক সালমান শাহ। ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন, কিংবা অভিনয়- কোনো ক্ষেত্রেই কমতি ছিল না তার। ক্ষণজন্মা এ নায়কের ফ্যাশন আর নায়কোচিত স্টাইল এসময়ের ঢালিউড এবং বলিউডের নায়করাও অনুসরণ করছেন বলে দাবি ভক্তদের। আজ এ নায়কের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটিকে স্মরণ করে এ তারকাকে নিয়ে স্মৃতিরোমন্থন করেছেন তার কাছের বন্ধু চিত্রনায়িকা মৌসুমী
সময়টা ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। এফডিসিতে বসে গল্প করছি আমি আর পরিচালক ইস্পাহানি। পরিচালক আমাকে আর সালমান শাহকে জুটি করে একটি ছবি বানানোর কথা বলছিলেন। আমি পরিচালকের কাছ থেকে ছবির গল্প শুনছিলাম।
আর ভাবছিলাম সন্ধ্যায় সালমান শাহ এফডিসিতে এলে তার সঙ্গে কথা বলে ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হব। আমাদের কথার মাঝেই হঠাৎ কিশোর বয়সের এক ছেলে এসে বলল, ‘সালমান শাহ তো মারা গেছে’।
খুব ক্ষেপেছিলাম বালকটির মুখে এ কথা শুনে। বেশ বকেও ছিলাম ওকে। কিন্তু এরপর পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে থাকলেও মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। বারবার ছেলেটির ওই কথাটা কানে বাজছিল। এমন সময় আরেকটি ছেলে এসে বলল, ‘সালমান ভাই আসলেই মারা গেছে। টিভিতে দেখাচ্ছে।’
আমার ওপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। মুহূর্তের মধ্যেই যেন সবকিছু উলট-পালট হয়ে গেল। ইস্পাহানি দৌড়ে চলে গেল টিভি দেখতে। আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম। ওইদিন দুপুর ২টায় এফডিসিতে এলো সালমান শাহ। তবে জীবিত নয়, নিষ্প্রাণ হয়ে এলো আমাদের স্বপ্নের নায়ক।
আংকেল-আন্টি (সালমানের বাবা-মা) এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। খুব কাছের বন্ধুটি লাশ হয়ে শুয়ে আছে আমার সামনে। দৃশ্যটি মনে এলে এখনও মনের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে।
সত্যি বলছি, আমি ওইদিন একটুও কাঁদিনি। প্রিয় মানুষ জীবন থেকে হারালে যা হয়। যেন পাথর হয়ে গিয়েছিলাম সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটিকে হারিয়ে। বুঝলাম, নিয়তি কত নিষ্ঠুর।
ছবিতে অভিনয় করার আগে থেকেই আমার আর সালমান শাহ’র পরিচয়। আমরা খুলনায় একই স্কুলে প্রথম দুই ক্লাস পড়েছি। এরপর সে চলে গেছে অন্য কোথাও। আমিও আসি ঢাকায়। স্কুলে ওর নাম ছিল ইমন। আর আমার নাম আরিফা।
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির শুটিংয়ে প্রায় সময় আমরা নিজেদের শৈশবের স্মৃতিচারণ করতাম। ও ছিল সবচেয়ে স্টাইলিশ নায়ক। আমাদের বন্ধুত্বের মধ্যে ছিল না কোনো স্বার্থপরতা। জীবদ্দশায় এমন কোনো বিষয় নেই যা আমরা শেয়ার করিনি।
কখনও কখনও মনে হতো, প্রতিটি মানুষের জীবনেই এমন একজন বন্ধু প্রয়োজন। সাড়ে তিন বছরে আমরা মাত্র চারটি ছবিতে অভিনয় করেছি। এতে আমাদের দুজনের কোনো দোষ ছিল না।
সত্যি বলতে, আমাদের পারিবারিক ভুল বোঝাবুঝির কারণেই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও একসঙ্গে কাজ করা হয়নি। দুঃখ একটাই, আমাদের সম্পর্কটাকে সবাই বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছুই ভেবেছে; যা কখনোই ছিল না। তার মৃত্যুর পর হয়তো সবারই এ ভুলটি ভেঙেছে।
শুনি মানুষের স্থায়িত্ব খুব বেশি দিনের হয় না। সালমান তার সাড়ে তিন বছরের অভিনয়ে দর্শকদের এতটাই মুগ্ধ করেছেন, আজও সে সবার মনের মণিকোঠায় গেঁথে আছে। একজন শিল্পীর এর চেয়ে আর কী চাওয়ার আছে।
আজকের দিনে শুধু একটাই কথা বলব, বন্ধু- এমনতো কথা ছিল না। তারপরও যেখানেই আছ, ভালো থেক-সুখে থেক। আমরা তোমাকে কখনোই ভুলব না।