প্রেমের মাঠে ম্যারাডোনার যত গোল

27-7প্রেম একবার এসেছিল নীরবে…’ কালোত্তীর্ণ এ বাংলা গানটি ডিয়েগো ম্যারাডোনার শুনলে নিশ্চিত অট্টহাসিতে ফেটে পড়তেন। ভ্রু বাঁকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়তেন, ‘প্রেম! একবার?’ তাও আবার ‘নীরবে’! এরপর রহস্যের হাসি হেসে বলতেন, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার ওপর পড়েছে!’ ফুটবলের ময়দানে যেমন ছিলেন, প্রেমের ময়দানে যেন তার চেয়েও তুখোড়। আর্জেন্টিনা কিংবদন্তির প্রেম-উপাখ্যান জানতে হলে ফিরে যেতে হবে সেই আশির দশকে।

এমনিতে বিয়ে নামের সামাজিক প্রতিষ্ঠানটির ওপর খুব একটা আস্থা নেই ম্যারাডোনার। তবে প্রথম বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ৭ নভেম্বর ১৯৮৪ সালে। বিয়ে করেন দীর্ঘ দিনের বাগদত্তা ক্লদিয়াকে। দুজনের ঘর আলো করে আসে দুই মেয়ে—দালমা ও জিয়ান্নিনা। ক্লদিয়ার সঙ্গে ম্যারাডোনার সম্পর্কটা ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসতে শুরু করে। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর চূড়ান্তভাবে টুঁটে যায় ২০০৪ সালে। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হলেও দুই মেয়ের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ম্যারাডোনার।
বিচ্ছেদ ঘটলেও কখনো কখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে দেখা যায় ছিয়াশির মহানায়ককে। ক্লদিয়ার সঙ্গে ২০০৬ বিশ্বকাপ উপভোগ করতেও দেখা গেছে।

ক্লদিয়ার সঙ্গে যখন সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম, তখন আর্জেন্টিনা কিংবদন্তির হূদয়ে দোলা দিয়েছিল এক ইতালিয়ান তরুণী। নাপোলিতে খেলার সময় ওই ইতালিয়ান তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সাক্ষী হিসেবে জন্ম নিল ডিয়েগো সিনাগ্রা। সিনাগ্রাকে সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি ছিলেন না ম্যারাডোনা। ব্যাপারটা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। পিতৃত্ব নিশ্চিত করতে ম্যারাডোনার ডিএনএ পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন আদালত। তবে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি তাতে সাড়া দেননি। ১৯৯৩ সালে আদালত ঘোষণা দেন, সিনাগ্রা ম্যারাডোনারই সন্তান। অনেক পরে ম্যারাডোনা সিনাগ্রাকে সন্তান হিসেবে মেনে নেন।ভেরোনিকার সঙ্গে ম্যারাডোনা।

ক্লদিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অবশ্য বেশ কিছুদিন ম্যারাডোনার হূদয়ের জমিনটা খালি পড়ে ছিল। এ সময়ে নানা গুঞ্জনও ভেসেছে বাতাসে। কখনো শোনা গেছে, ম্যারাডোনার সঙ্গে প্রেম চলছে আর্জেন্টাইন মডেল মারিয়া বেলেন ফ্রান্সিস, সিলভিনা লুনা ও ওয়ান্দা নারার। তবে ২০১০ সালের গোড়ার দিকে ছিয়াশির নায়ক দীর্ঘদিনের প্রেম-খরা ঘুচিয়ে ঢুকে পড়েন ভেরোনিকা ওজেদার হূদয়পুরিতে!

কিছুদিনের মধ্যেই খবর বেরোল মা হয়েছেন ভেরোনিকা। তবে এক দুর্ঘটনায় সে সন্তান আলোর মুখ দেখেনি। পরে ভেরোনিকার গর্ভে আসে আরেক সন্তান। এ সন্তানের নাম রাখা হয় ডিয়োগো ফার্নান্দো। এই সন্তানকে কেন্দ্র করেই চুকে-বুকে গেছে দুজনের সম্পর্ক। প্রেমটা বিয়ে পর্যন্ত আর গড়ায়নি। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম জানায়, কিছুতেই সন্তান নিতে চাচ্ছিলেন না ম্যারাডোনা। শেষ পর্যন্ত ভেরোনিকার জন্ম দেওয়া সন্তানের পিতৃত্ব মেনে নিলেও ছেলেকে জনসম্মুখে আনার ব্যাপারে আপত্তি ছিল ম্যারাডোনার।

ভেরোনিকা বিদায় নিলে সেখানে দ্রুত ঠাঁই করে নেন রোসিও অলিভা। নতুন প্রেমিকার বয়স ম্যারডোনার বয়সের অর্ধেকেরও কম। দুবাইয়ে থাকার সময় অলিভা ছিলেন ম্যারাডোনার ছায়াসঙ্গী। ম্যারাডোনা-ওলিভার পরিচয় ২০১০ সালে। দুজনের সম্পর্কটা তখনও খুব একটা ঘনিষ্ঠ হয়নি। কারণ, প্রেমিকা ভেরোনিকার সঙ্গে দারুণ কাটছিল ম্যারাডোনার। ভেরোনিকা হূদয় থেকে মুছে গেলে শূন্যস্থান তো পূরণ করতে হবে! তখনই ম্যারাডোনার হূদয়-নাওয়ে উঠে পড়েন অলিভা। ম্যারাডোনার হূদয়টা সমুদ্রতটের মতো—প্রেম-জোয়ারের জলে সিক্ত হয় ক্ষণে ক্ষণে!

ইভা আমোদেও নাকি ম্যারাডোনার নতুন প্রেমিকাজগতের কিছুই স্থায়ী নয়, সে কারণেই কিনা অলিভাও বিদায় দিলেন কদিন আগে। সম্পর্কটা এতটা তিক্ত হলো, আর্জেন্টিনা কিংবদন্তি অভিযোগ করলেন, অলিভা দুবাইয়ের বাড়ি থেকে তাঁর কিছু মূল্যবান জিনিস চুরি করে পালিয়েছেন। পরে পুলিশ আটকও করে ম্যারাডোনার ২৪ বছর বয়সী সাবেক বান্ধবীকে।

অতি সম্প্রতি শোনা গেল, ইভা আমোদেও নামের এক তরুণীর প্রেমে আমোদিত ম্যারাডোনা! আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, সম্প্রতি বুয়েনস এইরেসের এক নাইট ক্লাবে গভীর রাতে ম্যারাডোনা-ইভাকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা গেছে। সাংবাদিকতা বিভাগের এ শিক্ষার্থী দুজনের ছবিও পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অবশ্য ইভা একে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, আর্জেন্টিনা কিংবদন্তি তাঁর বাবার বয়সী। ফলে দুজনের সম্পর্ক কেবল বন্ধুত্বেই সীমাবদ্ধ। সত্য-মিথ্যা ম্যারাডোনাই বলতে পারবেন। তবে ফুটবল কিংবদন্তির অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে এ খবর উড়িয়ে দেবেন কী করে

Developed by: