বিভাগ: লেখালেখি

আদিলের সময় ভ্রমণ অনুসন্ধান আবিষ্কার ও সাহসের এক অভিযান

কেমন হয় একটি বই হাতে পেলে যা একের ভেতর তিনের কাজ করবে? ভাবতে পারেন ‘একের ভেতর তিন’ এটা আবার কি? জি হা পাঠক। ইংরেজি ভাষা, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অনুবাদ একের ভেতর তিন- ‘Aadeel’s Time Travel Quest A Journey of Discovery and Courage আদিলের সময় ভ্রমণ অনুসন্ধান আবিষ্কার ও সাহসের এক অভিযান’ তেমনই একটি গল্পের বই। যা পাঠ করে ছোট-বড় সকলেই উপকৃত হবে। ইউকে প্রবাসী জুবায়ের চৌধুরীর ইংরেজি গল্পের অনুবাদ ও উচ্চারণ করেছেন সিলেটে অবস্থানরত কানিজ আমেনা উভয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় বইটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে। প্রকাশ করেছে বাসিয়া প্রকাশনী।
বইটি পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে রকমারি ডটকমে ও সরাসরি নিতে চাইলে যোগাযোগ করুন ০১৭১১৪৮৪৬৬৮

ল ন্ড নে চৌ দ্দ দি ন

(পূর্ব প্রকাশের পর)

২৪শে জানুয়ারি ২০২৩
ম ঙ্গ ল বা র

বন্ধু মোসাইদ খানের বাসা থেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করি বিলেতে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনদের সাথে এবং ২৫শে জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ ইউকে-এর ‘বাসিয়ার বই আলোচনা’ ও আমাকে নিয়ে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের দাওয়াতও দেই। পুরো সকাল দুই বন্ধু মিলে চৌদ্দ দিনের ভ্রমণের পরিকল্পনা করি। তারপর দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে বেরিয়ে যাই বিলেতের দর্শনীয় স্থান দেখতে। প্রথমে ঢুকি ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে।

ব্রিটিশ লাইব্রেরি

বইয়ের ঘ্রাণ শুকতে যুক্তরাজ্যের জাতীয় গ্রন্থাগার ‘ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে’ চলে যাই। অবাক হয়ে দেখতে থাকি সাজানো রয়েছে বই আর বই।
গ্রন্থাগারটিতে মুদ্রণ ও ডিজিটাল উভয় প্রকারের বই, পাÐুলিপি, জার্নাল, সংবাদপত্র, পত্রিকা, শব্দ ও সংগীত রেকর্ডিং, ভিডিও, প্লেস্ক্রিপ্ট, পেটেন্ট, ডাটাবেস, মানচিত্র, স্ট্যাম্প চিত্র রয়েছে। বিশাল লাইব্রেরির সংগ্রহে পাÐুলিপিগুলির যথেষ্ট পরিমাণে সঞ্চয় ও ২০০০ খ্রিস্টপূর্বের আইটেমসহ প্রায় ১৪ মিলিয়ন বই।
জানা যায় গ্রন্থাগারটি ১৯৭৩ সালের আগে ব্রিটিশ জাদুঘরের অংশ ছিল। লাইব্রেরিটি এখন লন্ডনের সেন্ট প্যানক্রাসের ইউস্টন রোডের উত্তর দিকে (ইউস্টন রেলওয়ে স্টেশন এবং সেন্ট প্যানক্রাস রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি) একটি বিশেষভাবে নির্মিত ভবনে অবস্থিত এবং বোস্টন স্পার কাছে পশ্চিম ইয়র্কশায়ার ওয়েদারবির নিকটবর্তী একটি অতিরিক্ত সংগ্রহ ভবন ও পাঠকক্ষ রয়েছে।
আমরা হেঁটে হেঁটে লাইব্রেরির বিভিন্ন বই পুস্তক দেখলাম। অনেকে বসে বই পড়ছেন। অনেকে নোট করছেন। নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশ। কারও সাথে কারও আলাপ আলোচনা নেই। শুধু বইয়ের সাথে দেখা হচ্ছে। নির্যাস সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল রেলওয়ে স্টেশন
ব্রিটিশ লাইব্রেরি, রিজেন্টস ক্যানেল এবং লন্ডন কিংসক্রস রেলওয়ে স্টেশনের পাশেই সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল রেলওয়ে স্টেশন অবস্থিত। স্টেশনটি একটি কেন্দ্রীয় লন্ডন রেলওয়ে টার্মিনাস। এটি বেলজিয়াম, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডস থেকে লন্ডন পর্যন্ত ইউরোস্টার পরিষেবার টার্মিনাস। এটি মিডল্যান্ড
মেইন লাইনে লিসেস্টার, কর্বি, ডার্বি, শেফিল্ড এবং নটিংহামে ইস্ট মিডল্যান্ডস রেলওয়ে পরিষেবা, এবসফিট ইন্টারন্যাশনাল এবং অ্যাশফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল হয়ে কেন্টে দক্ষিণ-পূর্ব উচ্চ-গতির ট্রেন এবং বেডফোর্ড, কেমব্রিজ, পিটারবরো, ব্রাইটনে থেমসলিংক ক্রস-লন্ডন পরিষেবা প্রদান করে। এটি একটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন।
স্টেশনটি উইলিয়াম হেনরি বার্লো দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল এবং একটি একক-স্প্যান লোহার ছাদ দিয়ে নির্মিত হয়েছিল।

সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল হোটেল
সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল রেলওয়ে স্টেশনের সম্মুখভাগেই সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল হোটেল স্থাপত্য শিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন। খ্যাতিমান এ হোটেলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এখানে এসে অবকাশ যাপন করেন। এখানকার পরিবেশ খুব মনোমুগ্ধকর। আন্তর্জাতিক স্টেশনের পাশে অবস্থিত বলেই হোটেলটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নান্দনিক কারুকার্যের জন্য হোটেলটি যে কোনো পর্যটকের মন আকৃষ্ট করে। হোটেলটির মনোরম দৃশ্য অবলোকন করলে মানুষের মন তৃপ্তিতে ভরে ওঠে। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য হোটেল ও তার পারিপার্শ্বিকতা খুবই উপভোগ্য।

হোয়াইটচ্যাপেল

বিকেলে চলে যাই হোয়াইটচ্যাপেলে। বাঙালি অধ্যুষিত বিশেষ করে সিলেটিদের আড্ডার কিংবা অবসর কাটানোর একটি মনোমুগ্ধকর জায়গা হোয়াইটচ্যাপল। যা বাঙালি পাড়া নামেও খ্যাত। এখানে এলেই আপনি যেমনই সিলেটিদের দেখা পাবেন তেমনই সিলেটি পণ্য পান, সুপারি, সুটকি, কাঁচামরিচ, নাগামরিচ, ধনিয়াপাতাসহ দুর্লভ অনেক কিছুই পাওয়া যায় এবং সিলেটি ভাষায় দোকানের মালিকরা পণ্যের নাম ধরে ধরে হাক দিয়ে পণ্য বিক্রি করছেন এমন আজব দৃশ্য দেখে আপনিও অবাক হবেন। ভাববেন আপনি বাংলাদেশেই আছেন।
হোয়াইটচ্যাপল মানে বাংলাদেশ। মানে সিলেট। সেখানে ঘোরাঘুরি করলে শুধু বাংলাদেশি নয় সিলেটি লোকজনের দেখা পাবেন নিশ্চিন্তে। এমনকি পরিচিত অনেকের দেখাও পেতে পারেন। আবার বিকেলবেলা যাদের কাজ কর্ম থাকে না তারা মনানন্দে আড্ডা দিতে আসে এই এলাকায়।
সেখানে অবাক করার মতো অনেক দৃশ্যও আছে। যেমন ইংরেজির পাশাপাশি হোয়াইটচ্যাপল স্টেশনের নাম বাংলায়ও লেখা রয়েছে। বিদেশের মাটিতে নিজের বর্ণমালায় স্টেশনের নাম লেখা দেখে শিহরিত হলাম। এ কাজে যারা অবদান রেখেছেন তাঁদেরকে স্যালুউট দিলাম। তবে অনেক স্থান বা স্থাপনায় বাংলা বর্ণমালার সরব উপস্থিতি রয়েছে। ভালো লাগলো বাঙালিদের রক্ত দিয়ে মাতৃভাষা জয় করার এ দুর্লভ স্বার্থকতা।
হোয়াইটচ্যাপলে হাঁটতে গিয়ে কাকতালীয়ভাবে দেখা হয়ে গেল ভাতিজা ফজলের সাথে। সে পর্তুগাল থেকে লন্ডনে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। দীর্ঘদিন পরে তার সাথে দেখা। রাস্তায় দাঁড়িয়েই কুশল বিনিময়। তারপর বাসায় যাওয়ার আবদার করে ফজল বিদায় নিল।
দুই বন্ধু হাঁটছি। হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এক ভদ্রলোক। অতি পরিচিত মনে হলো কিন্তু মিলাতে পারছি না হিসাব নিকাশ। কবে আসছি জানতে চাইলেন। তারপরও মিলাতে পারছি না। মোসাইদ বন্ধুও কথা বলছেন কিন্তু মিলাতে তো পারছিই না। হঠাৎ মনে হলো আকরাম বন্ধু। বাংলাদেশে থাকতে আমার বাসিয়া প্রকাশনীতে প্রায়ই যার যাতায়াত ছিল। এমনকি দক্ষিণ সুরমা সাহিত্য পরিষদের সাহিত্য আসরগুলোতে নিয়মিত যোগ দিত আকরাম। সিলেটের জিন্দাবাজারে একসময় লাইব্রেরি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ছিল সে। সেই আমিনুর রহমান আকরাম বন্ধু আমাদেরকে জোর করে তার অফিস জাইমা পাঠাগারে নিয়ে গেল। পাঠাগারের তালা খুলে আমাদের দুইজনকে তার পাশে বসালো। দেখলাম দলীয় পোস্টার, পেস্টুনে সয়লাম পুরো পাঠাগার। বন্ধু আকরাম জাইমা পাঠাগারের নামের বিশ্লেষণ করল। এ প্রতিষ্ঠান শুধু পাঠাগার নয় জব সেন্টার হিসেবেও কাজ করছে। আমরা থাকা অবস্থায় অনেকে এসেছেন তার কাছে চাকরির জন্য। বেশ জমজমাট এবং সিলেটিদের আড্ডার একটা স্থান বলে মনে হলো। অতীত নিয়ে অনেক আলোচনা হলো। দক্ষিণ সুরমাবাসীর মতবিনিময় সভায় থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিলাম।

অজবন স্ট্রিটে আমার আপন মামাতো ভাই কামাল থাকে, তাকে ফোন দিলাম। ভাবলাম তার সাথে দেখা করে যাব। প্রথমে সে ফোন ধরলেও পরবর্তীতে আর ফোন ধরেনি। মোসাইদ বন্ধু রাগ করে আর তাকে ফোন দিতে চাননি।
মোসাইদ বন্ধুর কাছে জানতে চাইলাম মাইল্যান্ড কত দূর। উত্তরে বললেন কাছেই। তখন ফোন দেই সোনাফর আলী মামাকে। তিনি বললেন, মাইল্যান্ড কুইনমেরি ইউনিভার্সিটির বিপরীত পাশেই তাঁর বাসা। ভাবলাম সন্ধ্যায় মামার সাথে দেখা করে নিই। পোস্টকোর্ড নিয়ে আমরা চলে গেলাম। খুঁজে বের করতে একটু বেগ পেতে হলো। তারপর সহজে পেয়ে গেলাম। মামা ফ্লাটের দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। দোতলার সুন্দর ফ্লাটের ড্রয়িংরুমে বসলাম। মামা ও মামানির সাথে দীর্ঘক্ষণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা হলো।

উল্লেখ্য, সোনাফর আলী মামা আমাদের সুখ-দুঃখে বিদেশ কিংবা দেশ থেকেই অভাবনীয় সহযোগিতা করে থাকেন। আমাদের গ্রামে তিনিই একমাত্র প্রবীণ মুরব্বি এবং প্রথম লন্ডন প্রবাসী। তাই আমার ভ্রমণের প্রথম সারিতেই তাঁর সাথে দেখা করার বিষয়টি মাথায় নিয়ে এগিয়েছিলাম। ঠিকই প্রথম দিকেই তাঁর সাথে দেখা হয়ে গেল।
মামার একমাত্র ছেলে ফরিদ ফুটবলপ্রেমিক। সে বিকেলে খেলাতে চলে গেছে। তার সাথে দেখা হবে না। তাই চা নাশতা শেষে বিদায় নেওয়ার প্রাক্কালে কাকতালীয়ভাবে ফরিদ এসে উপস্থিত হলো। তার সাথে এক যুগেরও বেশি সময় পরে দেখা। কুশলাদি জানলাম। ২৫শে জানুয়ারি ও ২রা ফেব্রæয়ারির অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানালাম। সে ২রা ফেব্রæয়ারির অনুষ্ঠানে থাকবে বলে প্রতিশ্রæতি দিলো। ফরিদ লন্ডনে কাউন্সিল অফিসে চাকরির পাশাপাশি ফুটবল খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে সে বেশ কয়েকবার ঢাকায় খেলে গেছে। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম বিলেতে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার ফুটবল টিম আছে। সে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ফুটবল টিমেও খেলে। ফরিদ আমাদেরকে গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দিতে চাইল। আমরা বারণ করলাম। তারপরও সে আমাদেরকে বাসার বাইরে এগিয়ে দিয়ে গেল।
মামার বাসা হতে আমরা হোয়াইটচ্যাপলে এসে ঢাকা র্বিরানীতে রং চা খেলাম এবং সেখানে বসেই লন্ডনের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখানোর জন্য মোসাইদ বন্ধু কবি একেএম আব্দুল্লাহকে ফোন দিলেন। কবি আব্দুল্লাহ ইস্ট লন্ডনের কেনিং টাউনের বাসা থেকে শত ব্যস্ততা উপেক্ষা করে আমাকে সময় দিতে চলে এলেন।
আমরা তার গাড়িতে উঠলাম। শুরু হলো খাঁটি সিলেটি ভাষায় তিনজনের আড্ডা। আড্ডায় আড্ডায় শীতের রাতে পৌঁছে গেলাম টাওয়ার ব্রিজের পাশে। এখানে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই কবি আব্দুল্লাহ ভাই গাড়ির গতিবেগ ¯েøা করে আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন। বন্ধু মোসাইদ ও আমি ঘুরে ঘুরে টাওয়ার ব্রিজ দেখলাম।

টাওয়ার ব্রিজ
লন্ডনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে টাওয়ার ব্রিজ অন্যতম। লন্ডন যাওয়ার আগে যত পর্যটক দেখেছি লন্ডন ঘুরে এসেছেন তাদের প্রথম ছবিই দেখি টাওয়ার ব্রিজে। সাথে সাথে সিনেমা ও স্থিরচিত্রে বারবার দেখা টাওয়ার ব্রিজ স্বচক্ষে দেখার প্রবল আগ্রহ ছিল। সুযোগ হয়ে গেল কবি মোসাইদ খান ও কবি একেএম আব্দুল্লাহ ভাইর সৌজনে টাওয়ার ব্রিজটি দর্শন করার। হাজার হাজার দর্শনার্থী বিভিন্ন দেশ থেকে দেখতে আসে এ টাওয়ার ব্রিজ। ব্রিজটির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি মাঝ বরাবর স্থানে আলাদা হয়ে উপরের দিকে উঠে যেতে পারে যাতে করে বড় আকারের কোনো জাহাজ এর নিচ দিয়ে নদী পথে চলে যেতে পারে এবং জাহাজ চলে যাওয়ার পরে আবার ব্রিজটি যান চলাচলের উপযোগী হয়ে যায়। এ বিরল দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি।
তবে রাতে অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড়ে ব্রিজটি ঘুরে ঘুরে দেখলাম। লন্ডন শহর জুড়েই বেশ কয়েকটি ব্রিজ রয়েছে তবে তার মধ্যে টাওয়ার ব্রিজই সকলের কাছে বেশি জনপ্রিয়।
এদিকে ব্রিজটির ইতিহাস পড়লে জানা যায় ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে। প্রায় ৮ বছর ধরে চলে এ নির্মাণ কাজ। নির্মাণ কাজে অংশ নেয় ৪৩২জন শ্রমিক এবং
পুরো কাজটি শেষ হয় ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। টেমস নদীর ওপর নির্মিত এ ব্রিজের দৈর্ঘ্য ২৪৪ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ মিটার। এ ব্রিজের নির্মাণ ব্যয় তৎকালীন হিসাবে ১১ লক্ষ ৮৪,০০০ পাউন্ড। ব্রিজটি নির্মাণে প্রায় ১১ হাজার টন স্টিল প্রয়োজন হয়। এ ব্রিজটির উদ্বোধন করা হয় ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। উদ্বোধন করেন তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাজা অ্যাডওয়ার্ড-৪ ও রানি আলেকজান্ডারা।

লন্ডন আই
রাতেই গিয়েছিলাম লন্ডন আই দেখতে। রাতে লন্ডন আই ও এর চারপাশের এলাকা হরেক রকম আলোতে ভরে ওঠে। লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে লন্ডন আই-এর চারপাশে। নিচে টেমস
নদীর আশপাশের ল্যাম্পপোস্টগুলো জ্বলে উঠলে লন্ডনের চেহারাই বদলে যায়। আপনি যদি একবার ৩২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যাত্রীবাহী কেবিন বা ক্যাপসুলের যে কোনো একটিতে আরোহন করেন এবং আর আবহাওয়া যদি পরিস্কার ও রৌদ্রজ্জ্বল হয় তাহলে আপনি অবশ্যই লন্ডন শহরের চমৎকার দৃশ্য দেখতে পারেন। লন্ডন আই পরিদর্শনের সেরা সময় বড়দিন এবং নববর্ষের পূর্বদিন।

ইউকে পার্লামেন্ট ভবন
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ভবনটি লন্ডন আই-এর কাছে। হেঁটে হেঁটে আমরা পার্লামেন্ট ভবনে যাই। উঁচু ভবনটি সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাইর থেকেই পার্লামেন্ট ভবনটি দেখি ভেতরের এদিক সেদিকে রয়েছে বেশ কিছু ভাস্কর্য। সংসদ অধিবেশনের সময় বেশ কড়াকড়ি থাকে পৃথিবী কাঁপানো সা¤্রাজ্যের বর্তমান পার্লামেন্ট ভবন। তবে ভেতরে থাকা হাউস অব কমন্সেও প্রবেশ করা যায়।

টেমস নদী
পৃথিবীর বিখ্যাত নদীর তালিকায় আছে লন্ডনের টেমস নদীর নাম। পুরো লন্ডনকে ঘিরে আছে টেমস নদী। রাতেই টেমস নদী দেখতে গিয়েছিলাম। রাতেই টেমস সেজে ওঠে অপরূপ সাজে। এর আশপাশেই গড়ে ওঠেছে লন্ডনের নগরসভ্যতা। এই নদীতে ছোট ছোট জাহাজ ভাসতে দেখা যায়। এগুলোতে আছে খাবারের দোকান। রিভার ক্রুজ নামের অনেক প্যাকেজ আছে টেমসের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। দল বেঁধে সে প্যাকেজ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায় নদীতে। জানা যায় টেমস নদী একবার চক্কর দিলেই দেখা হয়ে যায় পুরো লন্ডন।

বার্কিংহাম প্যালেস
বার্কিংহাম প্যালেস বহুকাল আগে নির্মিত হয়েছিল যা রানি শার্লটের বাসভবন ছিল। এই প্রাসাদ শুরু থেকে বহুবার সংস্কার করা হয়েছে। তবে এর মূল স্থাপত্যের জাকজমক এখনো অক্ষত রয়েছে। বার্কিংহাম প্রাসাদ ব্রিটিশ রাজ পরিবারের লন্ডনের বাসস্থান এবং বর্তমানে পৃথিবীতে বিদ্যমান বৃহত্তম রাজকীয় প্রাসাদ। প্রাসাদটি রাজ পরিবারের বিভিন্ন রাজকীয় অনুষ্ঠান, অবসরকালীন বিনোদনের জন্য নির্মিত হয়েছিল। নির্মাণ কালে প্রাসাদটির নাম ছিল বার্কিংহাম হাউজ। এখন এটি একটি পর্যটক আকর্ষণ।
বর্তমানে, বার্কিংহাম প্রাসাদ এডিনবার্গের রানি এবং ডিউকের বাসভবন। শুধু তাই নয়, এই প্রাসাদ ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রশাসনিক সদর দপ্তর। রানি এই স্থানে তাঁর অতিথিদের আপ্যায়ন করেন ও সাক্ষাৎ করেন। বার্কিংহাম প্যালেসে ৪৫ মিনিটের চেঞ্জিং গার্ড অনুষ্ঠান, প্রতি বছর বহু স্থানীয় এবং হাজার হাজার পর্যটকদের দ্বারা পরিদর্শিত হয়।
শিল্প ও চিত্রকলার দিক দিয়ে লন্ডনের বার্কিংহাম প্যালেসে বিশ্বের অত্যন্ত সমৃদ্ধ শিল্পকলার সংগ্রহ রয়েছে। এগুলো রাষ্ট্রীয় আসরে প্রদর্শিত হয় এবং রুবেনস, রেমব্রান্ট, ভারমের, পুসান এবং ক্লডের মতো কিংবদন্তীদের শিল্পকর্মগুলো এই প্রাসাদে প্রদর্শিত হয়।
প্রাসাদের পশ্চিমে অবস্থিত সুবিশাল রাষ্ট্রীয় ভোজনশালা একটি অত্যন্ত পরিদর্শনযোগ্য কক্ষ যেখানে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং রানি একত্রে ভোজন করেছেন।
বিগ বেন
বিগ বেন টেমস নদীর পাশে ওয়েস্ট মিনিস্টার, সেন্ট্রাল লন্ডনে দ্য হাউস অফ পার্লামেন্টের উত্তর প্রান্তে এলিজাবেথ টাওয়ারে পাওয়া যায়। ১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দে, সংসদের হাউসগুলোর জন্য নতুন ভবনগুলোর মধ্যে একটি টাওয়ার এবং একটি ঘড়ি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
বিগ বেন নামের উৎপত্তি জানা যায়নি, যদিও দুটি ভিন্ন তত্ত¡ বিদ্যমান। প্রথমটির নামকরণ করা হয়েছিল স্যার বেঞ্জামিন হলের নামানুসারে, প্রথম কমিশনার অফ ওয়ার্কস, একজন বড়লোক যিনি বাড়িতে স্নেহের সাথে ‘বিগ বেন’ নামে পরিচিত ছিলেন। দ্বিতীয় তত্ত¡টি হলো যে তৎকালীন একজন হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন বেঞ্জামিন কান্টের নামে-এর নামকরণ করা হয়েছিল। ‘বিগ বেন’ নামেও পরিচিত, এই ডাক নামটি সাধারণত সমাজে তার শ্রেণির সবচেয়ে ভারী কিছুর জন্য দেওয়া হত।

দর্শনীয় স্থানসমূহ কবি একেএম আব্দুল্লাহ ভাইর অনুপস্থিতিতে আমরা দুইজন অবলোকন করলাম। কারণ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় কবিকে সাথে পাইনি। মিস করেছি তাঁকে বারবার। তারপর কবি আব্দুল্লাহ ভাই আমাদেরকে কিংক্রসে মোসাইদ বন্ধুর বাসার সামনে পৌঁছে দিলেন। আব্দুল্লাহ ভাইর ভালোবাসায় মুগ্ধ হলাম। আমরা বাসাতে চলে গেলাম। ভাবী খাবার রেডি করে অপেক্ষা করছেন। যাওয়ার সাথে সাথে হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসলাম। এরপর চলল আমাদের আড্ডা। গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আড্ডা দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।

লন্ডনে চৌ দ্দ দি ন

২৩শে জানুয়ারি ২০২৩
সো ম বা র

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাতার এয়ারওয়েজে ২২শে জানুয়ারি, রবিবার রাত ৯.৩০মি. যাত্রা করি ইংল্যান্ডের উদ্দেশে। আমাকে ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেয় ভাগনা জুবেল। রাতে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কাতার এয়ারওয়েজ দোহার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। একজন যাত্রী খুঁজছিলাম হিথ্রো পর্যন্ত যাকে গাইড হিসেবে অবলম্বন করা যায়। শেষ পর্যন্ত গোলাপগঞ্জের একজন ষাটোর্ধ্ব মুরব্বি পেয়ে গেলাম। এক সাথেই কাতার এয়ারওয়েজে উঠলাম। সীটের তফাৎ থাকায় উভয়ের অবস্থান বেশ দূরে হয়ে গেল। তবে আমার পাশের সীটে পেয়ে গেলাম মৌলভীবাজারের অধিবাসী ইংল্যান্ডের ব্যবসায়ী সাদেক সাহেবকে। তিনি বারী ভাইসহ অনেককেই চিনেন। ব্যবসায়ী কাজে ঢাকায় এসেছিলেন। তার সাথে জমে উঠলো আলাপ। সাহিত্য ও সংস্কৃতি ভালোবাসেন কিন্তু ব্যবসা ছাড়া কিছুই বুঝেন না। দোহাতে নেমে আর তাকে পেলাম না। গোলাপগঞ্জের মুরব্বি আমার জন্য অপেক্ষা করলেন এবং আমাকে দিকনিদের্শনা দিলেন। সে অনুসারে আমি দোহা টু হিথ্রোগামী কাতার এয়ারলাইন্সে উঠি। এবার পাশের সীটে সাদা ভদ্রমহিলা।

Exif_JPEG_420

হিথ্রো এয়ারপোর্টে কাতার এয়ারওয়েজ ল্যান্ড করার সাথে সাথে মোবাইলের সময় পালটে গেল। ইংল্যান্ডের সময় তখন দুপুর ১২টা। সুশৃঙ্খল লাইনে ইমিগ্রেশন শেষ করে বেরুলাম। কথা ছিল বারী ভাইয়ের বড় ছেলে সামিউল বারী সৌরভ আমাকে হিথ্রো থেকে রিসিভ করবে। সৌরভকে অবগত করলাম আমি হিথ্রো বিমানবন্দরে অবস্থান করছি। সেও আসছে জানালো। সম্ভবত সৌরভের সাথে বাংলাদেশে আমার একবার দেখা হয়েছিল। এখন দ্বিতীয়বার। ভাবছি তাকে চিনতে পারব কি না। কিন্তু সে-ই আমাকে প্রথম দর্শনে চিনে ফেলল। সৌরভ আমার জন্য কপি নিলো। আমরা এসেক্সের দিকে যাত্রার উদ্দেশ্যে সৌরভের জীপে উঠলাম এবং পাশাপাশি বসলাম।
হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে বেরুতেই দেখি নীরব নিস্তব্ধ প্রকৃতি। ¯েœা পড়ে আছে। লোকজন নেই, কোলাহল নেই, শুধু গাড়ি
চলছে রাস্তায়। ইংল্যান্ডে প্রথম ভ্রমণ তাই দৃশ্যগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছি এবং সৌরভের সাথে আলাপ করছি। পথিমধ্যে সৌরভের মোবাইল বেজে উঠলো। ভাবীর ফোন, ‘তোমার চাচাকে কি রিসিভ করেছ? উনাকে নাশতা খাওয়াইছ বাবা। ঠিক আছে চলে আসো।’ আমার সাথেও আলাপ হলো ভাবীর।
সৌরভ জানালো ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট লাগবে বাসায় পৌঁছতে। দ্রæত এগুচ্ছে গাড়ি। রাস্তার আশপাশের দৃশ্যগুলো অবলোকন করছি। পাতাবিহীন গাছ। নিচে ধবধবে সাদা ¯েœা। সূর্যবিহীন ও মানুষবিহীন দুপুর। পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে একদম ভোর। শুধু দ্রæতযানে মানুষ চড়ছে। গাড়ির পিছনে গাড়ি। প্রতিযোগিতা নেই। সুশৃংখল লাইনেই এগুচ্ছে গাড়িগুলো। হর্নের কোনো শব্দ নেই। হর্ন বাজানোর প্রয়োজন নেই। অনর্থক হর্ন বাজালে ট্র্যাফিক জরিমানা।

Exif_JPEG_420

ওয়েলো লজ
গ্রেসের এসেক্সের ওয়েলো লজে পৌঁছলাম। দোতলা বাড়ি। সামনের উঠোনে পার্কিং ব্যবস্থা। উঠোনে দুইটি কার রাখা। বাড়ির একদিকে খালি মাঠ অন্যদিকে একটু গ্যাপের পরেই আরেকটা বাড়ি। খুব নিরিবিলি পরিবেশ। দরজা খুলে ভাবী ও ভাই সাব আমাকে রিসিভ করলেন। জানতে চাইলেন ঠিক আছিতো। আমি বললাম ঠিক আছি। কোনো সমস্যা নেই। ভাইসাব বললেন, ঠান্ডা লাগাবে না। ঠান্ডা লাগলেই সমস্যা হয়ে যাবে। হাতমুখ ধুয়ে নাও। সকালের নাশতা করব। আর আমরা বিকালে বাইরে বের হব। তোমার জন্য ঠান্ডার কিছু কাপড় কিনব। বাংলাদেশের এসব কাপড়ে হবে না।
হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। ভাবী নানান জাতের পিঠাসহ নাশতা দিলেন। আমি ও ভাই সাব খাওয়া শুরু করলাম। ভাই সাবের ফোন নিয়ে মোসাইদ বন্ধুকে জানালাম বাসায় পৌঁছেছি এবং বিকেলে রয়েল রিজেন্সিতে দেখা হবে তাও ঠিক করলাম।
তারপর আমার জন্য সংরক্ষিত দোতলায় নির্ধারিত রুমে ভাইসাব নিয়ে গেলেন। সবকিছু দেখিয়ে দিলেন। ওয়াইফাই সংযোগ দিলেন। রেস্ট নিতে বললেন এবং লাঞ্চ করে আমাকে নিয়ে বিকালে বেরুবেন তাও জানালেন।

দোতলায় চারটি বেডরুম। অন্য বেডরুমগুলোতে তারা থাকলেও আমার জন্য সংরক্ষিত বেডরুমে সম্ভবত কেউ থাকেন না। আমার জন্য সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। চমৎকার সুন্দর পরিপাটি বেডরুমে ডুকে সৌন্দর্য অবলোকন করলাম। ঘুমোতে চেষ্টা করলাম। ঘুমাতে পারি নি। কারণ দিনে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস আমার নেই। শুরু করলাম একটার পর একটা ফোনালাপ। সবাইকে জানান দিলাম লন্ডনে আছি। অনেকে অবাকই হলেন। কারণ আমার ইংল্যান্ডের ভিসাপ্রাপ্তি কিংবা ইংল্যান্ড ভ্রমণ সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল ছিলেন না। এমনকি ইংল্যান্ডে যারা থাকেন তাদের মধ্যেও দুই চারজন যারা ভিসা প্রসেসিংয়ে জড়িত ছিলেন, তারা শুধু জানেন। তবে তারাও কাউকে বলেন নাই। কথা হয়েছিল আমি ইংল্যান্ড পৌঁছার পরেই সবাইকে জানানো হবে। তারাও কথা রেখেছিলেন। তাই ইংল্যান্ডের কথা শুনে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি অনেকে অগ্নিমূর্তি। কেউ কেউ ক্ষোভে বলাবলি শুরু করলেন এত ঘনিষ্ট সম্পর্ক অথচ একদিনও বলেনি ইংল্যান্ডের ভিসা হয়েছে! ইংল্যান্ড যাবে। ইংল্যান্ড পৌঁছে এখন ফেসবুক স্ট্যাটাস দিচ্ছে!
তারপর মোসাইদ বন্ধুর সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতা। ২৫ জানুয়ারির সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ ইউকে-এর অনুষ্ঠান কিভাবে সাজানো হয়েছে। দক্ষিণ সুরমাবাসী প্রোগ্রাম কিভাবে সফল করা যায় ইত্যাদি ছিল আলোচনার মূল বিষয়। পরিশেষে কথা হলো বিকেলে যখন দেখা হচ্ছে তখন বসে সবকিছু আলাপ করা যাবে।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভাইসাব লাঞ্চের জন্য ডাকলেন। তিনি ভাবছেন আমি হয়তো ঘুমিয়ে আছি। কিন্তু আমি ঘুমাইনি। ভাইসাব, ভাবী ও আমি একসাথে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসলাম। লাঞ্চ করলাম। বাংলাদেশি আইটেমের খাবার। যেন বাংলাদেশের সিলেটের খাবার। এর একটা কারণও ছিল ভাবী ও ভাইসাব আমার একদিন পূর্বেই বাংলাদেশ থেকে লন্ডন পৌঁছেছেন। তাই তারা বাংলাদেশের হরেক রকম তরিতরকারি, শাকসবজি ও মাছ নিয়ে এসেছেন।
বিকেলে বেরুবার কথা আগে থেকেই ছিল। তাই খাওয়া শেষে আমাকে রেডি হতে বললেন। আমি রেডি হলাম। চমৎকার সুন্দর ও আকর্ষণীয় গাড়ির ড্রাইভিং সীটে বসলেন ভাইসাব। আমি পাশের সীটে বসলাম। সীটবেল্ট লাগাতে বললেন, তারপর স্টার্ট দিয়ে বললেন, আমরা আগে কিছু শপিং করে নিই। তারপর রয়েল রিজেন্সিতে যাব।
পৌঁছলাম বিশাল একটি শপিংমলে। অবাক হয়ে দেখলাম শপিংমলের চেয়েও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা বিশাল মনে হলো। পার্কিংয়ে গাড়ি সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গাড়ি সাজিয়ে রাখার দিকনির্দেশনা দেওয়ার লোকবল নেই সেখানে। নিজ নিজ দায়িত্বে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে গাড়ি। পার্কিং স্পটে বেশির ভাগই কারজাতীয় গাড়ি নজর কাড়ল। বিশাল এ শপিংমলের এক তলা ও দোতলায় কাপড়ের আইটেম। ভাইসাব আমার জন্য শীতের কাপড় জাম্পার, সুইটার, মোজা কিনলেন। আর কিছু কিনতে চাইলেন আমি বারণ করলাম। আবার গাড়িতে চড়লাম। পৌঁছে গেলাম বাঙালির সুপরিচিত ও আমার কাক্সিক্ষত অভিজাত কমিউনিটি সেন্টার রয়েল রিজেন্সিতে। পৌঁছে দেখি মোসাইদ বন্ধু আমাদের জন্য অফিসে অপেক্ষা করছেন। মোলাকাত করলাম। কুশলাদি জানা হলো। একসাথে রয়েল রিজেন্সির অফিসে বসলাম।

Exif_JPEG_420

মোসাইদ বন্ধু ২৫শে জানুয়ারির সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ ইউকে-এর আয়োজন বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন। বারী ভাইকে আমন্ত্রণ করলেন এবং দক্ষিণ সুরমাবাসীর পক্ষ থেকে আমাকে নিয়ে একটি আয়োজনের ব্যবস্থা করা যায় কি না বারী ভাইয়ের পরামর্শ চাইলেন। সাথে সাথে আজিজ চৌধুরীর সাথে ইতঃপূর্বে এ ব্যাপারে আলাপ হয়েছে এ বিষয়টিও জানালেন। বারী ভাই সব শুনে বললেন, ‘তাকে নিয়ে বসার দরকার আছে। তবে আরও কিছু মানুষ সংযুক্ত করলে ভালো হয়।’ তিনি আজিজ চৌধুরীর সাথে ফোনে আলাপ করলেন এবং দক্ষিণ সুরমার দাউদপুর ইউনিয়নের অধিবাসী রাজনীতিবিদ মো. নাসির উদ্দিনকে ২৫শে জানুয়ারির অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানালেন। কথা দিলেন আজিজ চৌধুরী ও বারী ভাই ২৫শে জানুয়ারির সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের অনুষ্ঠানে থাকবেন এবং অনুষ্ঠান শেষে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব কিভাবে দক্ষিণ সুরমাবাসীকে নিয়ে অনুষ্ঠান করা যায়। বন্ধু মোসাইদ ও আমি খুব বেশি খুশি হলাম। আয়োজনের দায়িত্ব কমিউনিটির দুইজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিয়েছেন বলে।
রয়েল রিজেন্সির আলোচনা শেষ করে বারী ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মোসাইদ বন্ধুর বাসায় দুই দিনের আশ্রয় নিতে যাত্রা শুরু করলাম। হল থেকে বেরিয়েই বন্ধু মোসাইদ আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন ওয়েস্টার কার্ড। তিনি আমার জন্য ওয়েস্টার কার্ড ক্রয় করে রেখেছিলেন। আমি যাতে সেই কার্ড ব্যবহার করে বাস ও ট্রেন চড়তে পারি। ওয়েস্টার কার্ড দিয়েই শুরু হলো বাসযাত্রা। বাস এসে থামলো ইস্ট লন্ডন মসজিদের পাশে। বাস থেকে নেমেই বহুদিনের কাক্সিক্ষত এবং বাংলাদেশি মুসলমানদের নির্মিত আধুনিক ও নজরকাড়া স্থাপত্যশিল্প ইস্ট লন্ডন মসজিদ চোখের সামনে পড়ল।

ইস্ট লন্ডন মসজিদ
লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নির্মিত এক অসাধারণ স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন ইস্ট লন্ডন মসজিদ। বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিশেষ করে সিলেটিদের মিলনমেলার কেন্দ্রস্থল হোয়াইটচ্যাপলে অবস্থিত এ মসজিদটি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বৃহত্তম মুসলিম সম্প্রদায়কে ধর্মীয় সেবা প্রদান করে থাকে।
প্রায় সাত হাজার মুসল্লি এই মসজিদে একই সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা এই সুবিশাল মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে মূলত তিন তলা ভবনের এই মসজিদের কাজ শুরু হয় যা শেষ হয় ১৯৮৫ সালে। পরবর্তীতে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডন মুসলিম সেন্টার এবং ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে মারিয়াম সেন্টারের কাজ সম্পন্ন হয়। বিশাল এই মসজিদ কমপ্লেক্স তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ২২.৩ মিলিয়ন পাউন্ড। এই মসজিদে দুটি অংশের একটি হলো লন্ডন মুসলিম সেন্টার এবং মারিয়াম সেন্টার।
২০১১ সালে ইংল্যান্ডের উগ্রপন্থী দল ইংলিশ ডিফেন্স লীগ মসজিদের সামনে দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘোষণা দিলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের প্রতিরোধের মুখে সরকার মসজিদের সামনে সব রকমের সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সমগ্র ইউরোপে ইসলাম ধর্মের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে প্রতি মাসে এই মসজিদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে আসেন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানসহ মসজিদ ‘আল হারাম’ এবং ‘মসজিদ আল নববী’র ইমাম সাহেব এই মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। জানা যায় বছরের একটি বিশেষ সময়ে এই মসজিদের দরজা খুলে দেওয়া হয় অমুসলিমদের জন্য যাতে তারা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারেন।

মোসাইদ বন্ধু হেঁটে হেঁটে নিয়ে গেলেন মাইক্রোবিজনেস সেন্টারের ফেইথ প্রিন্টার্সে। সেখানে মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত বাংলাদেশিদের একটা জমজমাট আড্ডা থাকে। প্রথম দর্শনেই সেখানে দেখা হলো কবি হামিদ মোহাম্মদের সাথে। হামিদ মোহাম্মদের কবিতা ও নামের সাথে দীর্ঘদিন যাবত পরিচিত হলেও এটাই স্বশরীরে প্রথম সাক্ষাৎ। একজন স্পষ্টভাষী, জড়তাবিহীন, মমতায় ঘেরা মানুষ হামিদ মোহাম্মদ। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনর্গল কথা বলতে লাগলেন। সিলেটের সাহিত্যাঙ্গন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নও করতে লাগলেন। তীক্ষè বুদ্ধিসম্পন্ন কবির কথার উত্তরগুলো খুবই সতর্কতার সহিত দিতে হলো। কারণ বারবার বিপদের সম্ভাবনা মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখলাম হামিদ মোহাম্মদ অগ্রজ বন্ধুর মতো, ছায়ার মতো, আমার শেষ দিন পর্যন্ত পাশে ছিলেন। একজন ভালো মনের মানুষ। একজন বন্ধুবৎসল মানুষ হামিদ মোহাম্মদ ভাই।

ফেইথ প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী মোসলেহ উদ্দিন আহমদ ভাইয়ের ব্যবসায়ী ভীষণ ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে তবুও তাঁর সাথে চলছে সরব আড্ডা। মোসলেহ ভাই একসময় ‘যুগভেরী’ পত্রিকায় কাজ করতেন। সিলেটের মিডিয়া জগতের প্রায় সকলের সাথে তাঁর সুপরিচয় রয়েছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সিলেটের মিডিয়া জগতের বিভিন্ন জনের কুশলাদি জানতে চাইলেন। শান্তশিষ্ট মোসলেহ ভাইয়ের এই প্রিন্টিং প্রেস মনে হচ্ছে সিলেটি সৃজনশীল মানুষের অবসরের একটি সরব আড্ডাঘর।
ফেইথ প্রিন্টার্স থেকে মোসাইদ বন্ধু ২৫শে জানুয়ারির অনুষ্ঠানের ক্রেস্ট, ব্যানার দেখলেন। দক্ষিণ সুরমাবাসীর আয়োজনের ব্যানার ও দাওয়াতনামার ডিজাইন করতে করতে বেশ রাত হয়ে গেল। মোসাইদ বন্ধুর বাসা থেকে ভাবী বারবার ফোন দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা উঠতে পারছি না। তারপর মোসাইদ বন্ধুর বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম।
অনেক রাতে মোসাইদ বন্ধুর কিংক্রসের বাসায় পৌঁছলাম। ভাবী আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। বাচ্চারা আমাকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। বাচ্চাদের সাথে সকালে দেখা হবে না। কারণ সকালে আমরা ঘুমে থাকা অবস্থায় তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে যাবে। তাদের সাথে দেখা হলো, কথা হলো। ভাবী খাবাব দিলেন, আমরা খেলাম।
আমি বন্ধুর সদ্য ভ‚মিষ্ঠ হওয়া ‘গলিত মমের শহরে’ কাব্যগ্রন্থ তার হাতে দিলাম। তারপর বন্ধু মোসাইদ বের করলেন আমার জন্য খরিদ
করা লাইকা মোবাইলের সীম। যার নাম্বার ০৭৪৪০৬৬১৬৩৫। পর্যটক ব্যাগ, শীতের কাপড়, সেইভিং ক্রিমসহ চৌদ্দ দিনের চলার পথে আমার যা যা দরকার সবই সাজিয়ে রেখেছেন। আমি অবাক হয়ে দেখলাম। তার ভালোবাসাকে গভীর থেকে অবলোকন করলাম। তারপর গভীর রাত পর্যন্ত চললো বন্ধুর সাথে আলাপ আলোচনা। আবিষ্কার করা হলো একজন নাট্যকারকে। যাকে কবি ও গীতিকার হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে
চিনতাম। এখন মনে হচ্ছে একজন ভালো নাট্যকার। তার অনেক নাটক লন্ডনের ‘বেতার বাংলা’য় প্রচারিত হয়েছে। আঞ্চলিক ভাষার নাটকগুলো বেশ ফুরফুরে মজাদার মনে হলো। ডেস্কটপে সংরক্ষিত দুইটি নাটক শুনলাম। ভালো ম্যাসেজ আছে নাটকগুলোতে। স্কিপ্টগুলো হাতে করেই নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু ঘষামাজার কথা বলে তিনি রেখে দিলেন। তারপরও আশাবাদী আগামী মেলায় তার নাটকগুলোর সমগ্র প্রকাশিত হবে। রাতভর চললো লেখালেখি নিয়ে আলোচনা। আমাকে তার বেডে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিলেন।

(চলবে)

 

তানিয়া আক্তার পিংকি এর দুটি ছড়া

দুঃখ

দুঃখকে নেও বরণ করে
মিথ্যা হাসি হেসে,
কান্না দিয়ে জীবন শুরু
সুখ আসে শেষে।

কত দুঃখ, কত ব্যথা
হৃদয় উঠে কেঁপে
তবুও প্রশান্তি পাই
সব দুঃখ চেপে।

মিষ্টি মুখে স্বাদ বেশি
তেতো মুখে বিষাদ,
দুঃখ যদি না থাকে
ভালো থাকাই বাদ।

00000000000
কর্মফল

যে ফল ফল নয়
খেতে ও নয় মিষ্টি,
সে ফল কর্মফল
কাজ দিয়ে সৃষ্টি।

জন্ম যেথায় হোক
কর্ম করলে ভালো,
জীবন আলোকিত হয়
সরে যায় কালে।

জন্ম দিয়ে জীবন শুরু
মৃত্যু দিয়ে শেষ,
মধ্যেখানের সময়টুকু
হোক স্মরণীয় বেশ।

মোহাম্মদ ইকবাল ।। বন্ধুত্ব

বন্ধুত্ব হবে জনে জনে
প্রকাশ্যে কিংবা সংগোপনে।
বন্ধুত্ব হবে লোকালয়ে গহিন বনে।
জলে স্থলে অন্তরীক্ষে।
বন্ধুত্ব হবে সরবে নীরবে
চিৎকারে বা মৌনতায়।
বন্ধুত্ব হোক জাতিতে জাতিতে
বন্ধুত্ব হোক সত্তায় সত্তায়।
বন্ধুত্ব হবে নিরেট নিঃস্বার্থতার যৌক্তিকতায়।
বন্ধুত্ব হবে প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াবার প্রতিশ্রæতি রক্ষায়।
বন্ধুত্ব হবে আত্মায় আত্মায়।
বন্ধুত্বে কাটুক অমানিশার ঘোর অন্ধকার রাত।
ভোরের সূর্য বন্ধুত্বকে জানাক সুপ্রভাত।

খোদেজা মাহবুব আরা ।। ভালোবাসা

আরাধ্য ভালোবাসা জলে নাম লিখার মতো অদৃশ্য
জীবনের ব্যাপ্তি বিলাসে অজেয় প্রাপ্তির শেকল
পরতে পরতে কাঁটাঝোপ ঝাড়
এক রূদ্ধ জীবনের মন ভুলানো আধিপত্যের ইতিহাস।

সময়ের কোল ঘেঁষে পুষ্পিত সৌরভের আকাক্সিক্ষত স্বর্ণালি প্রভাত
এক উম্মাদ ঘোরে মশগুল যন্ত্রণার অশ্রæর কাব্য।

ভালোবাসা এক মদির জ্যোৎস্নায় অধীর আপন
শ্রান্ত গোধূলিবেলার প্রশান্তির গুঞ্জন।

বিষণœতার গৃহে এক মায়াময় শীতল অনুভবের প্রান্তর
হৃদয় আড়াল করে রাখে একান্ত ভালোবাসার পূর্ণিমা
আর সুরে গায় অন্তর গহিনের প্রচ্ছন্ন এক বুক ভালোবাসা।

শাহ্ মকসুদ আহমদ ।। লোক গীতি

তোমার কাছে চিরঋণী আমরা দেশবাসী
আজ তুমি নাইরে মুজিব আমরা তোমায় ভালোবাসি।

যদি মুজিব না দিত ভাষণ
বাংলার মানুষ যুদ্ধে কি আর জয় করত তখন
পাকিস্তানি করত হরণ, থাকতাম উর্দুভাষী।

যখন বাংলার বুকে পাকিস্তানি গুলি চালায়
বাংলাদেশে তখন রক্তের বন্যা বয়ে যায়
মা বোনেরা ইজ্জত হারায়, দেশকে নিলো শোষী।

জাতি সেদিন মেনেছিল তোমার উপদেশ
নয় মাস যুদ্ধ করে স্বাধীন হইল বাংলাদেশ
ধন্যবাদ তোমাকে অশেষ, তোমায় চিনে বিশ্ববাসী।

আয়শা মুমিন ।। শুদ্ধ প্রেমের ঋণ

এখন আমার ভীষণ প্রিয় শ্যাওলা পড়া দেয়াল
আর তোমার হীনমন্যতা, স্বচ্চ বেখেয়াল।
এক টুকরো রোদের ফাঁকে হালকা মেঘের ঝুম
বুকের ভেতর শোকের আওয়াজ দুম তানা দুম।
এখন আমার ভীষণ প্রিয় হৃদয় পোড়ার ঘ্রাণ
ব্যাক্টেরিয়ার আবাস ভূমে একের অধিক স্নান।
লাশকাঁটা ঘর, ভয় অথবা ডোমের লাল চোখ
রোড এক্সিডেন্টে তেতলে যাওয়া অজ্ঞাতজনের মুখ।
এখন আমার ভীষণ প্রিয় গুনে ধরা কাঠ
বুড়িগঙ্গার নোংরা পানি, জীর্ণ পথঘাট।
প্রিয় ভীষণ কাক ডাকা ওই তপ্ত রোদের দিন
তোমার কাছে জমে থাকা শুদ্ধ প্রেমের ঋণ।

এম আর মনজু ।। বর্ষাকাল

আষাঢ় শ্রাবণ বর্ষাকালে

বৃষ্টি পড়ে তালে

রিনিঝিনি শব্দ করে

ঘরে টিনের চালে।

পুকুর পাড়ে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর

ব্যাঙ ডাকে এই সুরে

ময়ূর নাচে পেখম মেলে

জলা হতে দূরে।

গাছের ডালে ভেঁজা পাখি

কাঁপছে থরোথরো

চুপটি করে বসে থাকে

ভয়ে জড়োসড়ো।

নদী বিলে পানি থইথই

নৌকা বাঁধা ঘাটে

সওদাগরের পশরা নিয়ে

রওনা দেবে হাটে।

এমন দিনে ঘরের বাহির

চায়না যেতে মন

ঘুমের পরি ঘুম দিয়ে যায়

যখন আর তখন।

নীপা চৌধুরী ।। রক্তে ভেজা বুক

রক্তে ভিজে গেছে বাংলার বুক

সুনামি  প্রবল প্রবাহিত তার ধারা

সাগর-নদী দিক-বিদিক হলো দিশেহারা

শোকে কাতর জনপদ সংসারী মুখ

বিদায় েেকন এই সংবর্ধাহীন বিদায়

এমন স্বাধীন বজ্রকণ্ঠের এ করুণ বিদায়

স্থানচ্যুত অস্থির শকুন ঠোঁট কুরে কুরে খায়

বিরহ ভূমির স্থুল-দেহীরা বিহ্বল কথায়

বিদ্রোহ বুলেট ছিন্ন করে তর্জনীর জীবন

শেকড় উপরে ফেলার একটা মরণপণ আয়োজন

উনুন ছেড়ে গাঁয়ের বধূ করে অনশন

অভিমানে হয় আয়ূশূন্য সবুজ উদ্যান বন

বিনিদ্র কবর কাঁদে শোকাহত বাংলায়

অজপাড়াগাঁয়ে যুবা বৃদ্ধের চোখ আলো হারায়

সেদিন হায়েনার অট্টহাসি করে জ্বালাতন

বারুদ আগুন খেলায়

গভীর শোক ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে তীব্রতায়

সমূহ সম্ভবনাময় নগরী স্ব ভূমির মায়ায়।

Developed by: