(পূর্ব প্রকাশের পর)
২৪শে জানুয়ারি ২০২৩
ম ঙ্গ ল বা র
বন্ধু মোসাইদ খানের বাসা থেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করি বিলেতে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনদের সাথে এবং ২৫শে জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ ইউকে-এর ‘বাসিয়ার বই আলোচনা’ ও আমাকে নিয়ে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের দাওয়াতও দেই। পুরো সকাল দুই বন্ধু মিলে চৌদ্দ দিনের ভ্রমণের পরিকল্পনা করি। তারপর দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে বেরিয়ে যাই বিলেতের দর্শনীয় স্থান দেখতে। প্রথমে ঢুকি ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে।
ব্রিটিশ লাইব্রেরি
বইয়ের ঘ্রাণ শুকতে যুক্তরাজ্যের জাতীয় গ্রন্থাগার ‘ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে’ চলে যাই। অবাক হয়ে দেখতে থাকি সাজানো রয়েছে বই আর বই।
গ্রন্থাগারটিতে মুদ্রণ ও ডিজিটাল উভয় প্রকারের বই, পাÐুলিপি, জার্নাল, সংবাদপত্র, পত্রিকা, শব্দ ও সংগীত রেকর্ডিং, ভিডিও, প্লেস্ক্রিপ্ট, পেটেন্ট, ডাটাবেস, মানচিত্র, স্ট্যাম্প চিত্র রয়েছে। বিশাল লাইব্রেরির সংগ্রহে পাÐুলিপিগুলির যথেষ্ট পরিমাণে সঞ্চয় ও ২০০০ খ্রিস্টপূর্বের আইটেমসহ প্রায় ১৪ মিলিয়ন বই।
জানা যায় গ্রন্থাগারটি ১৯৭৩ সালের আগে ব্রিটিশ জাদুঘরের অংশ ছিল। লাইব্রেরিটি এখন লন্ডনের সেন্ট প্যানক্রাসের ইউস্টন রোডের উত্তর দিকে (ইউস্টন রেলওয়ে স্টেশন এবং সেন্ট প্যানক্রাস রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি) একটি বিশেষভাবে নির্মিত ভবনে অবস্থিত এবং বোস্টন স্পার কাছে পশ্চিম ইয়র্কশায়ার ওয়েদারবির নিকটবর্তী একটি অতিরিক্ত সংগ্রহ ভবন ও পাঠকক্ষ রয়েছে।
আমরা হেঁটে হেঁটে লাইব্রেরির বিভিন্ন বই পুস্তক দেখলাম। অনেকে বসে বই পড়ছেন। অনেকে নোট করছেন। নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশ। কারও সাথে কারও আলাপ আলোচনা নেই। শুধু বইয়ের সাথে দেখা হচ্ছে। নির্যাস সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল রেলওয়ে স্টেশন
ব্রিটিশ লাইব্রেরি, রিজেন্টস ক্যানেল এবং লন্ডন কিংসক্রস রেলওয়ে স্টেশনের পাশেই সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল রেলওয়ে স্টেশন অবস্থিত। স্টেশনটি একটি কেন্দ্রীয় লন্ডন রেলওয়ে টার্মিনাস। এটি বেলজিয়াম, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডস থেকে লন্ডন পর্যন্ত ইউরোস্টার পরিষেবার টার্মিনাস। এটি মিডল্যান্ড
মেইন লাইনে লিসেস্টার, কর্বি, ডার্বি, শেফিল্ড এবং নটিংহামে ইস্ট মিডল্যান্ডস রেলওয়ে পরিষেবা, এবসফিট ইন্টারন্যাশনাল এবং অ্যাশফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল হয়ে কেন্টে দক্ষিণ-পূর্ব উচ্চ-গতির ট্রেন এবং বেডফোর্ড, কেমব্রিজ, পিটারবরো, ব্রাইটনে থেমসলিংক ক্রস-লন্ডন পরিষেবা প্রদান করে। এটি একটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন।
স্টেশনটি উইলিয়াম হেনরি বার্লো দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল এবং একটি একক-স্প্যান লোহার ছাদ দিয়ে নির্মিত হয়েছিল।
সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল হোটেল
সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল রেলওয়ে স্টেশনের সম্মুখভাগেই সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল হোটেল স্থাপত্য শিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন। খ্যাতিমান এ হোটেলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এখানে এসে অবকাশ যাপন করেন। এখানকার পরিবেশ খুব মনোমুগ্ধকর। আন্তর্জাতিক স্টেশনের পাশে অবস্থিত বলেই হোটেলটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নান্দনিক কারুকার্যের জন্য হোটেলটি যে কোনো পর্যটকের মন আকৃষ্ট করে। হোটেলটির মনোরম দৃশ্য অবলোকন করলে মানুষের মন তৃপ্তিতে ভরে ওঠে। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য হোটেল ও তার পারিপার্শ্বিকতা খুবই উপভোগ্য।
হোয়াইটচ্যাপেল
বিকেলে চলে যাই হোয়াইটচ্যাপেলে। বাঙালি অধ্যুষিত বিশেষ করে সিলেটিদের আড্ডার কিংবা অবসর কাটানোর একটি মনোমুগ্ধকর জায়গা হোয়াইটচ্যাপল। যা বাঙালি পাড়া নামেও খ্যাত। এখানে এলেই আপনি যেমনই সিলেটিদের দেখা পাবেন তেমনই সিলেটি পণ্য পান, সুপারি, সুটকি, কাঁচামরিচ, নাগামরিচ, ধনিয়াপাতাসহ দুর্লভ অনেক কিছুই পাওয়া যায় এবং সিলেটি ভাষায় দোকানের মালিকরা পণ্যের নাম ধরে ধরে হাক দিয়ে পণ্য বিক্রি করছেন এমন আজব দৃশ্য দেখে আপনিও অবাক হবেন। ভাববেন আপনি বাংলাদেশেই আছেন।
হোয়াইটচ্যাপল মানে বাংলাদেশ। মানে সিলেট। সেখানে ঘোরাঘুরি করলে শুধু বাংলাদেশি নয় সিলেটি লোকজনের দেখা পাবেন নিশ্চিন্তে। এমনকি পরিচিত অনেকের দেখাও পেতে পারেন। আবার বিকেলবেলা যাদের কাজ কর্ম থাকে না তারা মনানন্দে আড্ডা দিতে আসে এই এলাকায়।
সেখানে অবাক করার মতো অনেক দৃশ্যও আছে। যেমন ইংরেজির পাশাপাশি হোয়াইটচ্যাপল স্টেশনের নাম বাংলায়ও লেখা রয়েছে। বিদেশের মাটিতে নিজের বর্ণমালায় স্টেশনের নাম লেখা দেখে শিহরিত হলাম। এ কাজে যারা অবদান রেখেছেন তাঁদেরকে স্যালুউট দিলাম। তবে অনেক স্থান বা স্থাপনায় বাংলা বর্ণমালার সরব উপস্থিতি রয়েছে। ভালো লাগলো বাঙালিদের রক্ত দিয়ে মাতৃভাষা জয় করার এ দুর্লভ স্বার্থকতা।
হোয়াইটচ্যাপলে হাঁটতে গিয়ে কাকতালীয়ভাবে দেখা হয়ে গেল ভাতিজা ফজলের সাথে। সে পর্তুগাল থেকে লন্ডনে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। দীর্ঘদিন পরে তার সাথে দেখা। রাস্তায় দাঁড়িয়েই কুশল বিনিময়। তারপর বাসায় যাওয়ার আবদার করে ফজল বিদায় নিল।
দুই বন্ধু হাঁটছি। হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এক ভদ্রলোক। অতি পরিচিত মনে হলো কিন্তু মিলাতে পারছি না হিসাব নিকাশ। কবে আসছি জানতে চাইলেন। তারপরও মিলাতে পারছি না। মোসাইদ বন্ধুও কথা বলছেন কিন্তু মিলাতে তো পারছিই না। হঠাৎ মনে হলো আকরাম বন্ধু। বাংলাদেশে থাকতে আমার বাসিয়া প্রকাশনীতে প্রায়ই যার যাতায়াত ছিল। এমনকি দক্ষিণ সুরমা সাহিত্য পরিষদের সাহিত্য আসরগুলোতে নিয়মিত যোগ দিত আকরাম। সিলেটের জিন্দাবাজারে একসময় লাইব্রেরি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ছিল সে। সেই আমিনুর রহমান আকরাম বন্ধু আমাদেরকে জোর করে তার অফিস জাইমা পাঠাগারে নিয়ে গেল। পাঠাগারের তালা খুলে আমাদের দুইজনকে তার পাশে বসালো। দেখলাম দলীয় পোস্টার, পেস্টুনে সয়লাম পুরো পাঠাগার। বন্ধু আকরাম জাইমা পাঠাগারের নামের বিশ্লেষণ করল। এ প্রতিষ্ঠান শুধু পাঠাগার নয় জব সেন্টার হিসেবেও কাজ করছে। আমরা থাকা অবস্থায় অনেকে এসেছেন তার কাছে চাকরির জন্য। বেশ জমজমাট এবং সিলেটিদের আড্ডার একটা স্থান বলে মনে হলো। অতীত নিয়ে অনেক আলোচনা হলো। দক্ষিণ সুরমাবাসীর মতবিনিময় সভায় থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
অজবন স্ট্রিটে আমার আপন মামাতো ভাই কামাল থাকে, তাকে ফোন দিলাম। ভাবলাম তার সাথে দেখা করে যাব। প্রথমে সে ফোন ধরলেও পরবর্তীতে আর ফোন ধরেনি। মোসাইদ বন্ধু রাগ করে আর তাকে ফোন দিতে চাননি।
মোসাইদ বন্ধুর কাছে জানতে চাইলাম মাইল্যান্ড কত দূর। উত্তরে বললেন কাছেই। তখন ফোন দেই সোনাফর আলী মামাকে। তিনি বললেন, মাইল্যান্ড কুইনমেরি ইউনিভার্সিটির বিপরীত পাশেই তাঁর বাসা। ভাবলাম সন্ধ্যায় মামার সাথে দেখা করে নিই। পোস্টকোর্ড নিয়ে আমরা চলে গেলাম। খুঁজে বের করতে একটু বেগ পেতে হলো। তারপর সহজে পেয়ে গেলাম। মামা ফ্লাটের দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। দোতলার সুন্দর ফ্লাটের ড্রয়িংরুমে বসলাম। মামা ও মামানির সাথে দীর্ঘক্ষণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা হলো।
উল্লেখ্য, সোনাফর আলী মামা আমাদের সুখ-দুঃখে বিদেশ কিংবা দেশ থেকেই অভাবনীয় সহযোগিতা করে থাকেন। আমাদের গ্রামে তিনিই একমাত্র প্রবীণ মুরব্বি এবং প্রথম লন্ডন প্রবাসী। তাই আমার ভ্রমণের প্রথম সারিতেই তাঁর সাথে দেখা করার বিষয়টি মাথায় নিয়ে এগিয়েছিলাম। ঠিকই প্রথম দিকেই তাঁর সাথে দেখা হয়ে গেল।
মামার একমাত্র ছেলে ফরিদ ফুটবলপ্রেমিক। সে বিকেলে খেলাতে চলে গেছে। তার সাথে দেখা হবে না। তাই চা নাশতা শেষে বিদায় নেওয়ার প্রাক্কালে কাকতালীয়ভাবে ফরিদ এসে উপস্থিত হলো। তার সাথে এক যুগেরও বেশি সময় পরে দেখা। কুশলাদি জানলাম। ২৫শে জানুয়ারি ও ২রা ফেব্রæয়ারির অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানালাম। সে ২রা ফেব্রæয়ারির অনুষ্ঠানে থাকবে বলে প্রতিশ্রæতি দিলো। ফরিদ লন্ডনে কাউন্সিল অফিসে চাকরির পাশাপাশি ফুটবল খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে সে বেশ কয়েকবার ঢাকায় খেলে গেছে। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম বিলেতে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার ফুটবল টিম আছে। সে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ফুটবল টিমেও খেলে। ফরিদ আমাদেরকে গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দিতে চাইল। আমরা বারণ করলাম। তারপরও সে আমাদেরকে বাসার বাইরে এগিয়ে দিয়ে গেল।
মামার বাসা হতে আমরা হোয়াইটচ্যাপলে এসে ঢাকা র্বিরানীতে রং চা খেলাম এবং সেখানে বসেই লন্ডনের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখানোর জন্য মোসাইদ বন্ধু কবি একেএম আব্দুল্লাহকে ফোন দিলেন। কবি আব্দুল্লাহ ইস্ট লন্ডনের কেনিং টাউনের বাসা থেকে শত ব্যস্ততা উপেক্ষা করে আমাকে সময় দিতে চলে এলেন।
আমরা তার গাড়িতে উঠলাম। শুরু হলো খাঁটি সিলেটি ভাষায় তিনজনের আড্ডা। আড্ডায় আড্ডায় শীতের রাতে পৌঁছে গেলাম টাওয়ার ব্রিজের পাশে। এখানে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই কবি আব্দুল্লাহ ভাই গাড়ির গতিবেগ ¯েøা করে আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন। বন্ধু মোসাইদ ও আমি ঘুরে ঘুরে টাওয়ার ব্রিজ দেখলাম।
টাওয়ার ব্রিজ
লন্ডনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে টাওয়ার ব্রিজ অন্যতম। লন্ডন যাওয়ার আগে যত পর্যটক দেখেছি লন্ডন ঘুরে এসেছেন তাদের প্রথম ছবিই দেখি টাওয়ার ব্রিজে। সাথে সাথে সিনেমা ও স্থিরচিত্রে বারবার দেখা টাওয়ার ব্রিজ স্বচক্ষে দেখার প্রবল আগ্রহ ছিল। সুযোগ হয়ে গেল কবি মোসাইদ খান ও কবি একেএম আব্দুল্লাহ ভাইর সৌজনে টাওয়ার ব্রিজটি দর্শন করার। হাজার হাজার দর্শনার্থী বিভিন্ন দেশ থেকে দেখতে আসে এ টাওয়ার ব্রিজ। ব্রিজটির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি মাঝ বরাবর স্থানে আলাদা হয়ে উপরের দিকে উঠে যেতে পারে যাতে করে বড় আকারের কোনো জাহাজ এর নিচ দিয়ে নদী পথে চলে যেতে পারে এবং জাহাজ চলে যাওয়ার পরে আবার ব্রিজটি যান চলাচলের উপযোগী হয়ে যায়। এ বিরল দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি।
তবে রাতে অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড়ে ব্রিজটি ঘুরে ঘুরে দেখলাম। লন্ডন শহর জুড়েই বেশ কয়েকটি ব্রিজ রয়েছে তবে তার মধ্যে টাওয়ার ব্রিজই সকলের কাছে বেশি জনপ্রিয়।
এদিকে ব্রিজটির ইতিহাস পড়লে জানা যায় ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে। প্রায় ৮ বছর ধরে চলে এ নির্মাণ কাজ। নির্মাণ কাজে অংশ নেয় ৪৩২জন শ্রমিক এবং
পুরো কাজটি শেষ হয় ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। টেমস নদীর ওপর নির্মিত এ ব্রিজের দৈর্ঘ্য ২৪৪ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ মিটার। এ ব্রিজের নির্মাণ ব্যয় তৎকালীন হিসাবে ১১ লক্ষ ৮৪,০০০ পাউন্ড। ব্রিজটি নির্মাণে প্রায় ১১ হাজার টন স্টিল প্রয়োজন হয়। এ ব্রিজটির উদ্বোধন করা হয় ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। উদ্বোধন করেন তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাজা অ্যাডওয়ার্ড-৪ ও রানি আলেকজান্ডারা।
লন্ডন আই
রাতেই গিয়েছিলাম লন্ডন আই দেখতে। রাতে লন্ডন আই ও এর চারপাশের এলাকা হরেক রকম আলোতে ভরে ওঠে। লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে লন্ডন আই-এর চারপাশে। নিচে টেমস
নদীর আশপাশের ল্যাম্পপোস্টগুলো জ্বলে উঠলে লন্ডনের চেহারাই বদলে যায়। আপনি যদি একবার ৩২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যাত্রীবাহী কেবিন বা ক্যাপসুলের যে কোনো একটিতে আরোহন করেন এবং আর আবহাওয়া যদি পরিস্কার ও রৌদ্রজ্জ্বল হয় তাহলে আপনি অবশ্যই লন্ডন শহরের চমৎকার দৃশ্য দেখতে পারেন। লন্ডন আই পরিদর্শনের সেরা সময় বড়দিন এবং নববর্ষের পূর্বদিন।
ইউকে পার্লামেন্ট ভবন
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ভবনটি লন্ডন আই-এর কাছে। হেঁটে হেঁটে আমরা পার্লামেন্ট ভবনে যাই। উঁচু ভবনটি সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাইর থেকেই পার্লামেন্ট ভবনটি দেখি ভেতরের এদিক সেদিকে রয়েছে বেশ কিছু ভাস্কর্য। সংসদ অধিবেশনের সময় বেশ কড়াকড়ি থাকে পৃথিবী কাঁপানো সা¤্রাজ্যের বর্তমান পার্লামেন্ট ভবন। তবে ভেতরে থাকা হাউস অব কমন্সেও প্রবেশ করা যায়।
টেমস নদী
পৃথিবীর বিখ্যাত নদীর তালিকায় আছে লন্ডনের টেমস নদীর নাম। পুরো লন্ডনকে ঘিরে আছে টেমস নদী। রাতেই টেমস নদী দেখতে গিয়েছিলাম। রাতেই টেমস সেজে ওঠে অপরূপ সাজে। এর আশপাশেই গড়ে ওঠেছে লন্ডনের নগরসভ্যতা। এই নদীতে ছোট ছোট জাহাজ ভাসতে দেখা যায়। এগুলোতে আছে খাবারের দোকান। রিভার ক্রুজ নামের অনেক প্যাকেজ আছে টেমসের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। দল বেঁধে সে প্যাকেজ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায় নদীতে। জানা যায় টেমস নদী একবার চক্কর দিলেই দেখা হয়ে যায় পুরো লন্ডন।
বার্কিংহাম প্যালেস
বার্কিংহাম প্যালেস বহুকাল আগে নির্মিত হয়েছিল যা রানি শার্লটের বাসভবন ছিল। এই প্রাসাদ শুরু থেকে বহুবার সংস্কার করা হয়েছে। তবে এর মূল স্থাপত্যের জাকজমক এখনো অক্ষত রয়েছে। বার্কিংহাম প্রাসাদ ব্রিটিশ রাজ পরিবারের লন্ডনের বাসস্থান এবং বর্তমানে পৃথিবীতে বিদ্যমান বৃহত্তম রাজকীয় প্রাসাদ। প্রাসাদটি রাজ পরিবারের বিভিন্ন রাজকীয় অনুষ্ঠান, অবসরকালীন বিনোদনের জন্য নির্মিত হয়েছিল। নির্মাণ কালে প্রাসাদটির নাম ছিল বার্কিংহাম হাউজ। এখন এটি একটি পর্যটক আকর্ষণ।
বর্তমানে, বার্কিংহাম প্রাসাদ এডিনবার্গের রানি এবং ডিউকের বাসভবন। শুধু তাই নয়, এই প্রাসাদ ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রশাসনিক সদর দপ্তর। রানি এই স্থানে তাঁর অতিথিদের আপ্যায়ন করেন ও সাক্ষাৎ করেন। বার্কিংহাম প্যালেসে ৪৫ মিনিটের চেঞ্জিং গার্ড অনুষ্ঠান, প্রতি বছর বহু স্থানীয় এবং হাজার হাজার পর্যটকদের দ্বারা পরিদর্শিত হয়।
শিল্প ও চিত্রকলার দিক দিয়ে লন্ডনের বার্কিংহাম প্যালেসে বিশ্বের অত্যন্ত সমৃদ্ধ শিল্পকলার সংগ্রহ রয়েছে। এগুলো রাষ্ট্রীয় আসরে প্রদর্শিত হয় এবং রুবেনস, রেমব্রান্ট, ভারমের, পুসান এবং ক্লডের মতো কিংবদন্তীদের শিল্পকর্মগুলো এই প্রাসাদে প্রদর্শিত হয়।
প্রাসাদের পশ্চিমে অবস্থিত সুবিশাল রাষ্ট্রীয় ভোজনশালা একটি অত্যন্ত পরিদর্শনযোগ্য কক্ষ যেখানে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং রানি একত্রে ভোজন করেছেন।
বিগ বেন
বিগ বেন টেমস নদীর পাশে ওয়েস্ট মিনিস্টার, সেন্ট্রাল লন্ডনে দ্য হাউস অফ পার্লামেন্টের উত্তর প্রান্তে এলিজাবেথ টাওয়ারে পাওয়া যায়। ১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দে, সংসদের হাউসগুলোর জন্য নতুন ভবনগুলোর মধ্যে একটি টাওয়ার এবং একটি ঘড়ি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
বিগ বেন নামের উৎপত্তি জানা যায়নি, যদিও দুটি ভিন্ন তত্ত¡ বিদ্যমান। প্রথমটির নামকরণ করা হয়েছিল স্যার বেঞ্জামিন হলের নামানুসারে, প্রথম কমিশনার অফ ওয়ার্কস, একজন বড়লোক যিনি বাড়িতে স্নেহের সাথে ‘বিগ বেন’ নামে পরিচিত ছিলেন। দ্বিতীয় তত্ত¡টি হলো যে তৎকালীন একজন হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন বেঞ্জামিন কান্টের নামে-এর নামকরণ করা হয়েছিল। ‘বিগ বেন’ নামেও পরিচিত, এই ডাক নামটি সাধারণত সমাজে তার শ্রেণির সবচেয়ে ভারী কিছুর জন্য দেওয়া হত।
দর্শনীয় স্থানসমূহ কবি একেএম আব্দুল্লাহ ভাইর অনুপস্থিতিতে আমরা দুইজন অবলোকন করলাম। কারণ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় কবিকে সাথে পাইনি। মিস করেছি তাঁকে বারবার। তারপর কবি আব্দুল্লাহ ভাই আমাদেরকে কিংক্রসে মোসাইদ বন্ধুর বাসার সামনে পৌঁছে দিলেন। আব্দুল্লাহ ভাইর ভালোবাসায় মুগ্ধ হলাম। আমরা বাসাতে চলে গেলাম। ভাবী খাবার রেডি করে অপেক্ষা করছেন। যাওয়ার সাথে সাথে হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসলাম। এরপর চলল আমাদের আড্ডা। গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আড্ডা দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।