বিভাগ: ব্যক্তিত্ব

জাতীয় কবি নজরুলের জন্মদিন আজ

60555‘গাহি সাম্যের গান/ যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান/ যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-খ্রিস্টান’…

আজ বুধবার ২৫ মে, ১১ জ্যেষ্ঠ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী। দ্রোহ, প্রেম ও সাম্যের কবি হিসেবেও বাংলা সাহিত্যের অনন্য প্রতিভা নজরুল ইসলামকে অভিহিত করা হয়।

১৮৯৯ সাল, ১৩০৬ বঙ্গাব্দের এইদিনে বর্ধমান জেলার (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে) আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে কাজী পরিবারে নব জাগরণের এ কবির জন্ম।

জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবির ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে নানা কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। এ বছর জাতীয় পর্যায়ের এই অনুষ্ঠান হচ্ছে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। কবির জন্মদিনের এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ।

জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশাল, কুমিল্লায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের অন্যান্য জেলায়ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে নজরুলের জন্মবার্ষিকীতে।

বেসরকারি উদ্যোগেও রয়েছে নানা আয়োজন। ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে।

জাতীয় কবির জন্মদিনে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জাতীয় সব দৈনিক কবির জন্মদিনে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। টেলিভিশন ও রেডিও প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

বাংলা সাহিত্যে নজরুল ইসলাম জনপ্রিয় হয়েছেন কবিতা ও গানে। ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কবিতা ও গান লিখে বিদ্রোহী কবি হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসেন নজরুল ইসলাম। রচনা করেন ‘বিদ্রোহী’ ও ‘ভাঙ্গার গান’র মতো কবিতা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ব্রিটিশ সরকার কবিকে জেলে পাঠায়। সেখানে বসে কবি রচনা করেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। বাংলা সাহিত্যে নজরুল ইসলামের আবির্ভাবকে ধুমকেতুর আত্মপ্রকাশ হিসেবেও দেখেন অনেকে।

বহুমুখী প্রতিভার এ কবি বাংলা সাহিত্যের বিশাল অঙ্গনে ভূমিকা রাখেন ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক হিসেবে। সাহিত্যকর্মের উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে রয়েছে তার গান। প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেন নজরুল ইসলাম। ইসলামি গজল লিখে বাংলা গানে নতুন এক ধারার সৃষ্টি করেন তিনি। গান রচনার পাশাপাশি সেগুলোতে সুরারোপ করে সমৃদ্ধ করেছেন সঙ্গীতাঙ্গনকে।

নাটক লিখেছেন, ছেলেবেলায় লেটো দলে যোগ দিয়ে নাটকে অভিনয় করেছেন, পরিণত হয়ে লিখেছেনও নাটক। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন, পরিচালনা এবং অভিনয়ও করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ছেলেবেলায় লেটো দলে শুরু হয় নজরুলের সাহিত্যচর্চা, যা পরিণতি পায় সৈনিক জীবন থেকে ফেরার পর। সৃষ্টির সময় মাত্র দুই দশক। যুদ্ধ থেকে ফিরে ১৯২২ থেকে ১৯৪২ সাল। স্বল্প এ সময়ে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় নজরুলের অবদান অনন্য বলেও মত তাদের।

বরেণ্য এ কবি নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতা কাজী ফকির আহমেদকে হারিয়ে এলামেলো হয়ে যায় সামনে চলার পথ। আর্থিক অনটনে পড়ে বই-খাতা রেখে রোজগারে নেমে পড়তে বাধ্য হন নজরুল। কখনও মসজিদের ইমামতি, মাজারের খাদেমগিরি, চায়ের দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়েছে তাকে। ছেলেবেলায় তার নাম রাখা হয় ‘দুখু মিয়া’।

আসানসোলের চা-রুটির দোকানে রুটির কাজ করার সময় সেখানে কর্মরত দারোগা রফিজ উল্লাহ’র সঙ্গে পরিচয় হয় নজরুলের। তিনি কিশোর নজরুল নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। এটা ১৯১৪ সালের কথা। মাধ্যমিকের প্রিটেস্ট পরীক্ষা না দিয়ে ১৯১৭ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন নজরুল ইসলাম। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে।

১৯৪২ সালে আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়েন নজরুল। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, বাংলা সাহিত্যের অনন্য প্রতিভার এ কবি পিকস ডিজিজে আক্রান্ত। এক পর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন চিরবিদ্রোহী এ কবি। এতে তার সাহিত্যচর্চা পুরোপুরি থেমে যায়।

কোলকাতায় পারিবারিক তত্ত্বাবধানে থাকা বাকরুদ্ধ এ কবিকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রাখা হয় নজরুল ইসলামকে। অভিসিক্ত করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদায়।

চিরবিদ্রোহী এ কবি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ‘আজান’ কবিতায় চাওয়া শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয় চির জাগরণের এ কবিকে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন।

বৈমানিক মো. আবদুল বাসিত মাহতাব

2-17বৈমানিক মো. আবদুল বাসিত মাহতাব দণি সুরমার বরইকান্দি ইউনিয়নের চান্দাই গ্রামে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা (মরহুম) মো. আবদুল মন্নান। আবদুল বাসিত মাহতাব সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাস করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি এ্যারনোটিক্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন এবং পাইলট অফিসার হিসেবে যোগ
দেন। পরবর্তীকালে তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ফাস্ট অফিসার (পাইলট) হিসেবে যোগ দেন। তিনি ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ক্যাপটেন হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

অধ্যাপক ড. আহমদ কবীর

2-18শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কবীর দণি সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের নিদনপুর (লতিপুর) গ্রামে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হাজি মো. রিয়াজুল ইসলাম ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ট্রেজারি একাউন্টেন্ট ও দাদা (মরহুম) হাজি আবদুর রহমান ছিলেন ডিসি অফিসের জেলা নাজির। ড. আহমদ কবীর ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে এস.এস.সিতে প্রথম বিভাগে, ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের এইচ.এস.সিতে প্রথম বিভাগে পাস করেন। তিনি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি (সম্মান) প্রথম বিভাগে পাস করেন এবং ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এস.সি প্রথম বিভাগে পাস করেন। তিনি ২০০১ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৬ থেকে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিষয়ে পোস্ট ডক্টরেট আন্ডার কমনওয়েলথ ফেলোশিপ লাভ করেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি এই বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়া তিনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক সমিতির ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।

জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক

31-22বাংলাদেশের হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বর দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ (নোয়াগাঁও) গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সে তিনি তাঁর পিতা মো. ফুরকান আলীকে হারান। মাতা সৈয়দা নূরুন্নেছা খাতুনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই আজ তাঁর এতদূর আসা! মায়ের পূর্বপুরুষ সৈয়দ আফজল খন্দকার (রহ.) ছিলেন হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর ৩৬০ আউলিয়ার মধ্যে অন্যতম। তাঁর মাজার সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমার জালালপুর, মিরারগাঁও এ অবস্থিত।
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে এম.বি.বি.এস পাস করেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সকল পরীক্ষায় তিনি সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি এম.আর.সি.পি (ইউ.কে), এফ.আর.সি.পি (গ্লাসগো), এফ.আর.সি.পি (এডিনবার্গ), এফ.সি.পি.এস (বিডি), এফ.সি.সি.পি (ইউ.এস.এ), এফ.এ.সি.সি (ইউ.এস.এ) ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে তিনি পাকিস্তান আর্মি মেডিকেল কোরে যোগ দেন। চাকুরিতে পেশাগত দক্ষতার কারণে সরকারি খরচে পরিবারসহ ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিলাতে যান। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি এম.আর.সি.পি পাস করেন এবং হ্যামার স্মিথ হসপিটাল অ্যান্ড পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল স্কুল, লন্ডন থেকে কার্ডিওলজিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশে ফেরেন এবং তখন থেকে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মিলিটারি হসপিটাল এবং আর্মডফোর্সেস মেডিকেল কলেজ রাওয়ালপিন্ডিতে শিক্ষক এবং কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এম.এইচ রাওয়ালপিন্ডিতে কার্ডিওলজি ইউনিট স্থাপন করেন, যেখানে মার্চ ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। এজন্য পাকিস্তান সরকার তাঁকে টি.আই পদবিতে ভূষিত করেন।
তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে হৃদরোগের কোনও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা ছিল না। এজন্য তিনি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন আই.পি.জি.এম.আর, ঢাকাতে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রফেসর অব কার্ডিওলজি হিসেবে যোগ দেন এবং কার্ডিওলজি ইউনিট স্থাপন করেন। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেখানে কর্মরত ছিলেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে তিনি ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কাম অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই ইনস্টিটিউটে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। ১৯৮৮ থেকে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জাতীয় বাতজ্বর ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে সরকারি চাকুরি থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটি, সার্ক কার্ডিয়াক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থা এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি জড়িত আছেন।
তিনি কিছু ডাক্তার এবং অন্যান্য পেশার সমাজ সেবকদের নিয়ে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ গঠন করেন। এই ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক, সেবামূলক, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ও সাহায্যপুষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এটি ডড়ৎষফ ঐবধৎঃ ঋবফবৎধঃরড়হ (ডঐঋ) এবং ডড়ৎষফ ঐুঢ়বৎঃবহংরড়হ খবধমঁব (ডঐখ) এর সদস্য। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এই ফাউন্ডেশনের একটি প্রকল্প। বর্তমানে এই হাসপাতালটি ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি আন্তর্জাতিক মানসস্পন্ন আধুনিক হৃদরোগ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে হৃদরোগের সব ধরনের সর্বাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এর ৩৩টি এফিলিয়েটেড বডি আছে। তিনি ফাউন্ডেশনের অনারারি মহাসচিব হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
কর্ম সুবাদে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর রচনাবলি বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ‘জীবনের কিছু কথা’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন; যার বিক্রয়লব্ধ সমুদয় অর্থ গরিব রোগীদের জন্য গঠিত ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের লিল্লাহ ফান্ডে জমা হয়। হৃদরোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য তিনি বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় অধ্যাপক পদে ভূষিত হন।
ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত সুখি এবং সফল মানুষ তিনি। তাঁর স্ত্রী মিসেস আশরাফুন্নেসা খাতুন একজন সমাজসেবিকা, এক কন্যা প্রফেসর ফজিলা-তুন-নেছা মালিক বাংলাদেশের খ্যাতনামা কার্ডিওলজিস্ট, এক পুত্র মাসুদ মালিক ব্যবসায়ী এবং দ্বিতীয় পুত্র মনজুর মালিক কানাডায় চাকুরিরত।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী

31-21ঢাকা বারডেম হাসপাতালের হেপাটোবিলিয়ারি পেনক্রিয়াটিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী দক্ষিণ সুরমার জালালপুর ইউনিয়নের খতিরা গ্রামে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা (মরহুম) হাজি মো. সিকন্দর আলী। ডা. মোহাম্মদ আলী সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে কৃতিত্বের সঙ্গে এম.বি.বি.এস পাস করেন। উল্লেখ যে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ওই পরীক্ষায়
মেধা তালিকায় মেডিসিনে অনার্স সহ চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স থেকে সার্জারি বিষয়ে এফ.সি.পি.এস ডিগ্রি অর্জন করেন। পি.জি হাসপাতাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেজিস্ট্রার ও রেসিডেন্ট সার্জন হিসেবে চিকিৎসক ও শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বারডেম হাসপাতালের হেপাটোবিলিয়ারি পেনক্রিয়াটিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক।
তিনি ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে সৌদি সরকারের অধীনে সার্জারি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সৌদি আরবে কাজে যোগ দেন এবং মদিনার ইস্টামবু হাসপাতাল, বদর হাসপাতাল এবং পরিশেষে মদিনা মনোয়ারার কিং ফাহাদ হাসপাতালে অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সৌদি সরকারের ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেন। তিনি ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব সার্জন এডিনবরা থেকে সার্জারি বিষয়ে এফ.আর.সি.এস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি লিভার গলব্লাডার পেনক্রিয়াস হেপাটোবিলিয়ারি পেনক্রিয়াটিক সার্জারি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারিতে বাস্তব প্রশিক্ষণ ও ফেলোশিপ অর্জনের জন্য অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্রিজবেনে প্রিন্সেস আলেকজান্ডা হাসপাতালে যোগ দান করেন। ওই হাসপাতালে বিশ্বের প্রথম সফলকাম লিভিংডনার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন প্রফেসর রাসেল ডাবলুর্ড স্ট্রংগ এর সঙ্গে লিভার সার্জারি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করায় ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাডেমিক এক্সেলেন্স অ্যাওয়র্ড লাভ করেন।
বাংলাদেশে হেপাটোবিলিয়ারি পেনক্রিয়াটিক সার্জারি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট শুরু করার উদ্দেশে তিনি ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীকালে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম হেপাটোবিলিয়ারি পেনক্রিয়াটিক সার্জারি বিভাগ তিনিই শুরু করেন। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শত শত রোগী, লিভার গলব্লাডার বাইল ডাফট ও পেনক্রিয়াসের বিভিন্ন জটিল সার্জারির সুফল পেতে শুরু করে। যা দেশে এবং বিদেশে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়।
বারডেমের ওই ডিপার্টমেন্টে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলসহ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশে লিভার প্রতিস্থাপন লিভার ট্রান্সপ্লান্ট এর সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করেছেন এবং তিনি প্রথম বাংলাদেশে সফল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর অনেক তথ্যবহুল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ দেশে বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ফলরিডাস্ত বিখ্যাত মেয়োডিক্লনিক থেকে প্রকাশিত ট্রান্সপ্লান্ট বিষয়ে লিখিত একটি অধ্যায়ের লেখক হিসেবে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জাপানের টোকিও এবং কিয়োটো ইস্টগিতেও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট এর বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
বারডেম হাসপাতালে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ঢাকায় অনারারি কনসালটেন্ট হিসেবেও মানব সেবায় নিয়োজিত আছেন। তিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত লিভার বিশেষজ্ঞ ও সমাজসেবীদের সমন্বয়ে লিভার রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি লিভার রোগের প্রতিরোধে গণসচেতনতা, সুলভে চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণার উদ্দেশ্যে ‘লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’ নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে গঠন করেন। অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হিসেবে সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন। ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম দেশে এবং বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। বিশ্বের হেপাটাইটিস লিভার রোগ প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠিত জেনেভাস্থ ওয়াল্ড হেপাটাইটিস এলায়েন্স এলায়েন্সে লিভার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এই সংগঠনের বারো সদস্যবিশিষ্ট পাবলিক হেলথ প্যানেলের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।

আইরিন খান

indexমানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর সপ্তদশ মহাসচিব আইরিন খান। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকিত এই সফল নারী হচ্ছেন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রথম এশীয় মুসলিম নারী। সর্বোপরি প্রথম বাংলাদেশি মহাসচিব। আইরিন খানের জন্ম ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায়। তাঁর গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের বিরাহিমপুর গ্রামে। পিতার নাম সিকান্দর আলী খান। দক্ষিণ সুরমার উজ্জ্বল নক্ষত্র আইরিন খান ম্যানচেস্টার
বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি দীর্ঘদিন বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনে যোগদান করেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার সাদাকো ওগাটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে কসোভো সংকটের সময় যুগোশ্লোভিয়ায়ও একই দায়িত্ব পালন করেন এবং ওই বছরের শেষের দিকে তিনি এই.এন.এইচ.সি.আর এর উপপরিচালক নিযুক্ত হন। তিনি এ পর্যন্ত বিভিন্ন একাডেমিক পুরস্কার লাভ করেছেন। ফোর্ড ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ পেয়েছেন। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ওম্যান অব দ্যা ইয়ার পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে সিডনি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। আমাদের গর্ব আমাদের অহংকার আইরিন খান বাঙালি জাতির জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।

Developed by: