সিলেট নগরে যানজট প্রচুর

সমন্বয়হীনতায় যানজট সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে সিলেট নগরে। গাড়ির চাকা ঘোরে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সড়কে। রমজানের আগে এমন দুর্বিষহ অবস্থায় নগরবাসী হাঁপিয়ে উঠেছেন। এর দায়ভার নিচ্ছেন না কেউ। সিটি কর্মকর্তারা এ নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। পুলিশ বলছে; নগরে সংস্কার কাজ চলার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যানজটের কারণ অনুসন্ধান করে নগরবাসী বলেছেন- হঠাৎ করে সিলেট নগরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি হকাররা দখল করে আছে ফুটপাথ, অর্ধশতাধিক অবৈধ গাড়ির স্ট্যান্ড দখল করে আছে সড়ক, পার্কিং হচ্ছে যত্রতত্র, অবৈধ গাড়ি বেড়েছে নগরে।

এ কারনে যানজট তীব্র হচ্ছে। আর যানজটের কারণে নগরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভও দেখা দিচ্ছে। নগরের পুলিশ লাইন পয়েন্ট। দরগাহের পেছনের এলাকা। ওই পয়েন্ট সব সময় নিরিবিলি থাকে। কখনো যানজট হয় না। গত দু’দিন ধরে পুলিশ লাইন পয়েন্টে যানজট তীব্র হচ্ছে। নগরের জিতু মিয়ার পয়েন্ট, তালতলা পয়েন্টে পরিসর বড় হলেও যানজট ওই দুই এলাকার নিত্যসঙ্গী। আর লামাবাজার পয়েন্টেও তো সময় সময় জট লেগেই থাকে। কোর্ট পয়েন্ট ও বন্দরবাজার এলাকার ফুটপাত পুরোটাই হকারদের দখলে। আর সড়ক দখলে অবৈধ গাড়ির স্ট্যান্ডের। কোর্ট পয়েন্টে লেগুনা, সিএনজি অটোরিক্সা স্ট্যান্ড মোট তিনটি। আবার হাসান মার্কেটের সামন ও কুদরত উল্লাহ মসজিদ, সিটি করপোরেশনের সামনের এলাকা হকার ও অবৈধ স্ট্যান্ডের দখলে। এতে সকাল ১০ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা দুঃসহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরের জিন্দাবাজার, বারুতখানা, জেলরোড, নয়াসড়ক,  চৌহাট্টা এলাকায় যানজট বেড়েছে। এসব পয়েন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এছাড়া সুনামগঞ্জ ও তামাবিল সড়কের অন্তত ১০টি স্থানে যানজট তীব্র দিনে দিনে আরও তীব্র হচ্ছে। সুবহানীঘাট পয়েন্ট থেকে নগরের নাইওরপুল পয়েন্ট রাস্তা গত দুই মাস ধরে বন্ধ। রাস্তা সংস্কারের নামে সওজ কর্তৃপক্ষ ওই সড়ক বন্ধ করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তা সংস্কার কাজ দীর্ঘ হওয়ার কারণে নাইওরপুল, ধোপাদিঘীরপাড়, সুবহানীঘাট, কাঁচাবাজার, উপ-শহরে যানজট লেগেই থাকে। ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। নগরের আম্বরখানা পয়েন্ট, দরগাহ গেইট, রিকাবীবাজার এলাকায় চলছে কালভার্ট নির্মাণ কাজ। একপাশের রাস্তা বন্ধ করে কাজ চলার কারণে ওই সব এলাকার গাড়ির চাপ গিয়ে পড়ছে অন্য এলাকায়। আম্বরখানা এলাকায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন- রাস্তায় কালভার্টের কাজ চলার কারণে ওই এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আর রাত ৯ টার পর শুরু হয় ট্রাকের যানজট। পাশের দু’টি সড়ক হাউজিং স্টেট ও বড়বাজার গলি পর্যন্ত যানজটের বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। ফলে আবাসিক এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। উপ-শহরের মুখেও কাজ চলছে। এতে করে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত যানজট দেখা দিয়েছে। এছাড়া- নগরের দক্ষিণ অংশেও বেড়েছে যানজট। সিলেট নগরে যানজট বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন- যানজট নিরসন ও নগরের শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা হকারদের পুনর্বাসন করছি। আশা করছি রমজানের আগেই হকাররা রাস্তা ছেড়ে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে চলে যাবে। এর বাইরে যেসব সংস্কার কাজ চলছে সেসব সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন- নগরে অবৈধ স্ট্যান্ড, যত্রতত্র পার্কিং দেখবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এজন্য তারা সহায়তা চাইলে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সেটি করা হবে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন- আজ থেকে নগরের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে আইন মেনে চলতে সচেনতা অভিযান শুরু করা হচ্ছে। সকালে নগরের চৌহাট্টা এলাকা এ অভিযানের শুভ সূচনা করবেন পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন- নগরে চলমান সংস্কার কাজের কারণে যানজট বেড়েছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় বিকল্প রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে। সচেতনতা বাড়ালে কিছুটা কাজ হবে বলে জানান তিনি। এদিকে- নগরে চলমান যানজট নিয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ। তারা জানিয়েছেন- রমজানের আগে অসহনীয় যানজটের কারণে মানুষ বিরক্ত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানোর কোনো বিকল্প নেই। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাহমিন আহমদ জানিয়েছেন- আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে নগরে রিকশা ও অটোরিকশা দুই ভাগে ভাগ করে দেয়া। এজন্য দু’টি রঙ ব্যবহার করা। যেসব রিকশা ও অটোরিকশা সকালে চলবে তারা যেন বিকালে না চলতে পারবে না। এটা করা হলে নগরে যানবাহনে চাপ কমে আসবে। ফুটপাথ দখলমুক্ত করা সিটি করপোরেশনের কাজ। তবে এর বাইরে রমজানে আমরা বিশেষ প্রোগ্রাম নিতে যাচ্ছি। আলীয়া মাঠে অস্থায়ী ভিত্তিতে একটি বাজার বসানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন, চেম্বার, জেলা প্রশাসন মিলে এই উদ্যোগ নেয়ার চিন্তা রয়েছে। যদি এটি কার্যকর হয় তাহলে রমজানে যেসব হকার রাস্তায় বসবে তাদের ব্যবসার পরিধি সীমিত হয়ে যাবে। ফলে রাস্তা এবং ফুটপাথ ছেড়ে দিতে তারা বাধ্য হবে বলে জানান তিনি।
 

Developed by: