বিভাগ: লেখালেখি

সোহেল মল্লিক ।। মানুষ নামতে পারে নিচে, কতটা নিচে

মানুষ নামতে পারে নিচে, কতটা নিচে

ততটা নিচে, যতটা নিচে অন্ধকার থাকে…

ঘুটঘুটে কালো রাতের মতো, নির্জলা মিথ্যার মতো,

স্বার্থপরতার মতো, অমঙ্গলের মতো, চৈতন্যহীনতার মতো,

কপটতার মতো, নির্বুদ্ধিতার মতো, দুর্ভাগ্যের মতো,

নিষ্ঠুরতার মতো, মলমূত্র বিষ্ঠার মতো, কুৎসিত নোংরার মতো,

ড্রাকুলার দাঁতের মতো।

মানুষ নামতে পারে নিচে, কতটা নিচে

ততটা নিচে, যতটা নিচে বর্বরতা থাকে…

হিং¯্র নখের মতো, বীভৎস হত্যার মতো,

পাশবিক উল্লাসের মতো, গণধর্ষণের মতো,

ড্রিল মেশিন দিয়ে শরীর ছিদ্র করার মতো,

পশুর ন্যায় পিটিয়ে হত্যা করার মতো,

হাবিয়া দোজখের মতো।

মানুষ নামতে পারে নিচে, কতটা নিচে

ততটা নিচে, যতটা নিচে অসভ্যতা থাকে…

বিত্ত-বৈভবের মতো, ভোগবিলাসের মতো,

ব্যাংক লুটেরার মতো, জুয়া খেলার মতো,

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মতো,

ঘুষ-দুর্নীতির মতো।

মানুষ উঠতে পারে উপরে, কতটা উপরে

ততটা উপরে, যতটা উপরে…

সত্য থাকে, সত্য থাকে, সত্য থাকে।

শাহিদা হক শাপলা ।। পড়শি

আমি তোমার জন্য বসে থাকি
পলে পলে জমে থাকি
খুলে রাখি আরশি,
ছাদের উপর কোন্ মায়া, পড়শি?

আমি তোমাতেই রাখি নষ্ট সময়
তোমাতেই বাঁচি-মরি,
তোমারই মায়া খুঁজে খুঁজে
একলা আকাশ ধরি।

আমার সময় হারিয়েছে নিখোঁজ
আমি তোমাতেই তবু বিভোর,
তোমার দুইপাশ চারপাশ সবুজ হয়
আমার সবই ধূসর।

তবুও আমার একটাই ছাদ
গোটা আকাশের আরশি,
ছাদের উপর কোন্ মায়া পড়শি?

মৃণাল কান্তি দাস ।। মাস্কমঙ্গল কাব্য

ধরলে পুলিশ, পড়ব পায়ে, চাইব না-হয় মাপ

বলব হে স্যার, করুন ক্ষমা, ডাকব না-হয় বাপ!

থাকব না-হয় দুকান ধরে, ব্যাঙের মতো ঝুঁকে

কিন্তু আমি পরব না মাস্ক, আমার সোনা মুখে!

ম্যাজিস্ট্রেটের মোবাইলকোর্টে ধরলে চেপে কলার

বলব আমার হাজার খানেক, কথা ছিল বলার।

মুখোশ পরে বলব কথা, এ কোন আজব আইন

মুখোশ আমি পরব না স্যার, করলে করুন ফাইন!

স্বাধীন দেশের হালুম আমি, ঢোকান যদি জেলে

উকিল ধরে ছাড়িয়ে নেবে আমার বোনের ছেলে।

থাকব না-হয় জেলেই ক’দিন, খাব না-হয় রুটি

কিন্তু আমি ঢাকব না ভাই, আমার রাঙা ঠুঁটি।

কেমনে এত মারল বাঙাল? করেন যদি আস্ক

বলবে কোভিড ‘এদের মরার প্রধান কারণ মাস্ক।’

হিসেব নিকেশ করে…

বলব, কোথায় কোভিড না ছাই, মরছি সর্দিজ্বরে।

এহিয়া সামি ।। ভন্ড নেতার দল

রিলিফের টাকা খায়
ওরা বুঝি নেতা
লম্বা লম্বা ভাষণ দিয়ে
ঘুরে বেড়ায় যেথা সেথা।

কেউ-বা চেয়ারম্যান, কেউ-বা মেম্বার
কেউ-বা আবার সংসদে যায়
লম্বা লম্বা বুলি ওরা
সংসদে গিয়ে উড়ায়।

আসলে ওরা সবাই স্বার্থপর
ভন্ড নেতার দল
খুঁজে বেড়ায় সারাক্ষণ
কেমনে করবে ছল।

মুখোশ পড়ে ওরা থাকে
ঝুপ বুঝে কুপ মারে
এমনি করে ওরা তাদের
আখের গোজার করে।

আনোয়ার হোসেন মিছবাহ্ ।। গান

অমন করে লুকিয়ে তুমি মনটা নিলে কাছে

মেঘলা দিনে একলা বেলা তোমায় পেয়ে নাচে।।

 

এখন আমি পুড়তে পারি উড়তে পারি মনে

আকাশ রবি সাগর নদী গভীর বনে বনে

তোমার বুকে বসত গড়ি যে যা ই বলে পাছে।

অমন করে লুকিয়ে তুমি মনটা নিলে কাছে

মেঘলা দিনে একলা বেলা তোমায় পেয়ে নাচে।।

 

মনের জ্বালা পরম জ্বালা আগলে রেখে তুমি

বুকের জমি নিলাম দিতে কলজেখানা চুমি

তোমায় যেন জনম ভরে পাই গো বাঁকে বাঁকে

মৌমাছি রোজ যেমন করে রাণী কে তার রাখে

তেমনি করে তোমায় নিয়ে প্রাণটা যেন বাঁচে।

অমন করে লুকিয়ে তুমি মনটা নিলে কাছে

মেঘলা দিনে একলা বেলা তোমায় পেয়ে নাচে।।

আসমা মতিন ।। প্রজাপতির স্বপ্ন

চল আমরা জানালায় একটু আকাশ দেখি
অহংকার স্ত‚পে স্তূপে জমাট বেঁধেছে
অভিমানি ঠোঁটের থরথরানি বেড়েছে
বহুগুণ সরলরেখা ওগো,
তোমাকে চিনতে করিনি ভুল
হাতের মুটোয় কত না স্বস্তি জমা একবারই
হাতে হাত রেখেছি।
ভ্রুলেখায় নাসিকা ডুবায়ে আত্তরের
গন্ধ নেয়া মনে আছে খুব
এসো স্বপ্ন দেখি, তোমার স্বপ্নের হাসিটা দেখি,
রাতকে আপন করে কোয়াশার তুষার ভেঙে
প্রজাপতি হব আমরা বসব গিয়ে
জোনাকি শাখায়
ঐ গলিপথ সবখানে তোমাকে খুঁজেছি
আর দেখি না কোথাও
শুধু তুমি সখী
এই পথে এসেছিলে একবার!

মোহাম্মদ জুনায়েদ খোরাসানী ।। নন্দ বাবুর মন্দ ছড়া

নন্দ বাবু ছড়া লিখেন

লিখেন কিছু ছন্দ,

ছন্দ বাবু ছন্দ বোঝেন

লেখা দেখেন মন্দ।

নন্দ বাবু ঘাটাঘাটি

লিখলেন একটি ছড়া,

ছড়া নাকি কচু তাই

কুমড়ো ফুলের বড়া।

ছন্দ বাবুর পাতায় নাকি

ছাপতে তাই মানা,

নন্দ বাবুর মন্দ লেখা

নন্দর হলো জানা।

নন্দ বাবু পণ করেছেন

লিখে যাবেন ছড়া,

ছড়া টরা হউক না হউক

ডাল পিয়াজু বড়া।

নন্দ বাবু ছাপবেন ছড়া

ছন্দ মনের পাতায়,

ভাবের দেখা মনের আয়না

লিখবে নন্দ খাতায়।

মো. সাদিকুর রহমান রুমেন ।। নিন্দুকের পরিণতি

নিন্দা হলো প্রশংসার বিপরীত কর্ম
নিন্দাবাদ জিন্দা রাখা নিন্দুকের ধর্ম
নিন্দায় ভালোও কালো হয়ে যায়
নিন্দায় আলোতেও আঁধার দেখায়।
পরের নিন্দামন্দ যে করে প্রচার
জগতে সে সবচে বড়ো দুরাচার
অপরের নিন্দা চর্চা ভারী বদভ্যাস
নিন্দাচারী অসৎ আর চাক্ষুষ বদমাশ।
পরের নিন্দায় যে সদা পঞ্চমুখ
নিজের নিন্দা শুনতে সেও তো বিমুখ?
নিন্দায় অপরের যা করে ক্ষয়ক্ষতি
নিন্দুকের ভাগ্যে জুটে সমুচিত দুর্গতি।

এম মোসাইদ খান ।। জিহ্বা

প্রায় প্রতিদিন কাটাচেরা হচ্ছে চোরাজিহ্বায়
টেবিল থেকে টেবিলে আর সুনশান রাতের গুহায়।
সুযোগ সুবিধায় ধার দেয়া জিহ্বা চালিয়ে
দেওয়া হচ্ছে কথার ফাঁকে,
ফুরফুরে মেজাজে কাগজের চোখ
ফাঁকি দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড়
করে দেওয়া হচ্ছে সরস বুক।
ভাগাভাগি করে লিকলিকে গরম জিহ্বা
চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে নরম পাছায়
চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে
এর পিছে
ওর পিছে
খুনি জিহ্বায় আয়োজন করে
কাটা হচ্ছে রোদের জমিন।
চেতন-অচেতনে বাড়িয়ে
দেওয়া হচ্ছে ডানে-বামে,
উপরে-নিচে
হাটে-মাটে
বাসা-বাড়িতে
ঘাতক জিহ্বা পকেটে শতশত লোক।

আবদুল মুমিন মামুন ।। আঙ্গুল

সেদিন ঘুমন্ত চোখে নির্জনতায়
মুঠোফোনের নির্জিব নোটিফিকেশনে
চোখমেলেই দেখি নতুনের আহবান-
আলোতে ভরে ওঠে চোখ;
সে যেন এক স্বপ্নছোঁয়া-
স্পর্শে বিভূর কান্ত দু’চোখ।

মনের জানালা খোলেছে দেখে বাহিরে তাকাই
সাধের নীলাকাশ সেদিন জেনো মেলেছে ডানা-
কত বসন্তে ফুটেনি ফুল
কলমিলতায় জড়িয়ে থাকা শিরিষের ডাল
আমাকে অপ্লুত করে-
নীলের ক্যানভাসে চোখ-
ধাঁধানো তার সবুজ আঙিনা।

এভাবেই চলছি পথে-রাগ-
অভিমানের দোলাচলে
সান্ত¦নার অভয়বাণী যদি বা কখনো
মুঠোফোনে আসে ভেসে-
আমিও তখন ওই আকাশের নীল দিগন্তে
আগন্তুকের কোমল আঙ্গুল সন্ধানে
হাসিমুখেই হারিয়ে যাব একান্তে।

Developed by: