রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

28-06ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ/ তোর সোনাদানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ/ দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ/ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে/ যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ/ ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ… আজ সন্ধ্যায় শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। বুধবার সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে আজ চাঁদ দেখা না গেলে ৩০ রোজা পূর্ণ হবে। ঈদ হবে বৃহস্পতিবার। তবে বুধবার ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
পবিত্র কোরআন নাজিল ও মাগফিরাতের মাস রমজান শেষে ঈদের চাঁদ দেখামাত্র ছোট-বড়, ধনী-গরিব প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে বইবে আনন্দের ঝরনাধারা। ঈদের দিন সকালে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব মুসলমান এক কাতারে ঈদের নামাজ আদায় শেষে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। কোলাকুলি আর ফিরনি সেমাই খাওয়ার ধুম থেকে বাদ যাবে না কেউই।
ইতোমধ্যে সবাই ঈদের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছেন। কিনেছেন জামাকাপড়সহ পছন্দের নানা জিনিস। বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিভিন্ন উপহারসামগ্রী বিতরণ করছেন। পাশাপাশি ঈদ কার্ডে মনের কথা লিখে প্রিয়জনকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন অনেকেই। অন্যদিকে ঈদ যতই কাছে আসছে মোবাইল ফোন খরচ ততই বাড়ছে। আর মোবাইল কোম্পানিগুলোও ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করছে। এসব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এখন ব্যস্ত সবাই। মোবাইল থেকে কলের পাশাপাশি এস এম এস ও বিভিন্ন লগো পাঠিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে অনেকেই। এসবের পাশাপাশি ইমেইলের মাধ্যমেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছে অনেকে।
প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর মদিনাতে হিজরতের অব্যবহিত পরই সংযম আর আনন্দের প্রতীক পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতর উৎসব শুরু হয়। সৃষ্টি হয় সংযম আর সমপ্রীতির বৈষম্যমুক্ত এক নতুন মূল্যবোধের। প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘চাঁদ দেখে রোজা পালন এবং চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন করবে। চান্দ্র মাস ২৯ দিনে হয়, আবার ৩০ দিনেও হয়। যদি আকাশে মেঘ থাকায় চাঁদ দেখা না যায়, তবে ৩০ দিনের গণনা পূর্ণ করবে।’
হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, রমজানের চাঁদ দেখা না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা রোজা রেখো না। আর শাওয়ালের চাঁদ না দেখা পর্যন্ত তোমরা ইফতার করো না। আকাশ মেঘলা থাকার দরুন চাঁদ তোমাদের দৃষ্টিগোচর না হলে রমজানের দিনগুলো পূর্ণ করে নেবে। চাঁদ দেখার ব্যাপারে ইমামদের বক্তব্য হচ্ছে, শাওয়ালের চাঁদ দেখা প্রমাণিত হওয়ার জন্য কমপক্ষে দুজন বিশ্বস্ত লোকের সাক্ষ্য অপরিহার্য। আর মেঘ মুক্ত বা পরিষ্কার আকাশ থাকলে অনেক লোকের চাঁদ দেখা শর্ত। উল্লেখ্য, মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হয়ে গেলে চাঁদ দেখার প্রয়োজন নেই।
এদিকে আজ চাঁদ দেখা যাক বা না যাক সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের প্রচলিত নিয়মের একদিন আগেই চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে কাল পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। যদিও এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে ক্রমেই দ্বন্দ্ব বাড়ছে। বিশেষ করে নবপ্রজন্ম আগাম ঈদ পালনে নারাজ। তারা সরকারি নিয়মে ঈদ উদযাপন করতেই আগ্রহ দেখাচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯২৮ সাল থেকে সাদ্রা পীর সাহেবের অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদযাপন করে আসছেন। তাদের ধারণা, পৃথিবীর যে অঞ্চলেই চাঁদ দেখা যাক না কেন রোজা ও ঈদ এক সাথে উদযাপন করা যাবে। সেই অনুসারে গত কয়েক যুগ ধরে সরকারি নিয়ম না মেনে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে দেশের এক দিন আগে ঈদ ও রোজা উদযাপন করে আসছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।
এদিকে যথাযথ নিয়ম মেনে ঈদের আনন্দে শামিল হতে সারাদেশ এখন উৎসুক। সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন। আলাদা আলাদা বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন-বেতারসহ বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশনগুলো ৫ থেকে ৭ দিনের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। দেশের জাতীয় দৈনিক ও সাময়িক পত্রিকাগুলো ইতোমধ্যে ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।
নগরীর প্রধান প্রধান সড়কদ্বীপে শোভা পাচ্ছে বাংলা ও আরবিতে ‘ঈদ মোবারক’ খচিত পতাকা। সরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঈদের খুশি থেকে বাদ যাবে না হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রোগী, শিশু সদনের অনাথ শিশু, কারাবন্দি কয়েদিরাও। হাসপাতাল, শিশু সদন, আশ্রয়কেন্দ্র ও কারাগারে বিশেষ খাবার দেয়া হবে ঈদের দিনে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বিনা টিকিটে জাদুঘর, চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ পাবে।
রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে ও প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সকাল থেকেই গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। দেশের প্রধান ঈদের জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায় হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এতে অংশ নেবেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মোট ৫টি ঈদ-জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বায়তুল মোকাররমে সকাল ৭টায়, ৮টায়, ৯টায়, ১০টায় এবং ১১টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশন উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ৩ শতাধিক মসজিদ, মাঠ ও ঈদগাহে ঈদের জামাতের আয়োজন করেছে। সারাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতটি অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়।

Developed by: