পবিত্র লাইলাতুল কদর পেরিয়ে গেছে। মাহে রমজানের ২৭তম দিনটি যাচ্ছে আজ। রোজা প্রায় শেষ, ঈদের কেনাকাটার পর্বও চুকিয়ে ফেলেছেন বেশির ভাগ মানুষ। ঈদের ছুটিতে রাজধানী বা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাঁরা বাড়িতে যাবেন, এখন চলছে তাঁদের জিনিসপত্র গোছানোর পালা। অনেকে চলেও গেছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়েছে বাড়িফেরার পালা। ঈদের আগের এই দিনগুলো কাটবে বাড়িফেরার প্রস্তুতি আর শেষ মুহূর্তের টুকিটাকি কিছু কেনাকাটার মধ্য দিয়ে।
ঈদ উপলক্ষে শেষ পর্যায়ের কেনাকাটার মধ্যে প্রধানত থাকে আতর, সুরমা, টুপি—এসব। গতকাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম-সংলগ্ন রাজধানীর আতর-টুপির প্রধান বাজারটিতে গিয়ে দেখা গেল, দারুণ জমে উঠেছে বেচাকেনা। এখানকার আতর-টুপির ব্যবসায়ীরা জানালেন, বেচাকেনা বরাবরের মতোই। তবে গত বছরের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল, সেই ক্ষতির ধাক্কা তাঁরা এখনো সামলে উঠতে পারেননি। টুপি ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানালেন, তাঁর দুটি দোকান ছিল। মালামাল ছিল প্রায় পাঁচ লাখ টাকার। দোকানপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। সেই টাকা আর ধারকর্জ করে একটি দোকান চালু করেছেন। টুপির দাম গত বছর যা ছিল, এবারেও তাই। গোল হাজি টুপি ৫০ থেকে ২০০ টাকা, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার কিস্তি টুপি এবং ওমানি টুপি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা। পাকিস্তানি সুলতানি টুপি ২০০ টাকা। ক্রস কাঁটায় হাতে বোনা সুতার টুপি ৫০ টাকা। পাকিস্তানি জিন্নাহ টুপি ২০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। বাচ্চাদের জরির কাজ করা তুর্কি টুপির দাম ৫০ টাকা। সর্বনিম্ন ১০ টাকায় পাওয়া যাবে পাতলা নেটের টুপি।
আতর আছে হরেক রকমের। সাত হাজার টাকা আউন্সের উদ আতর থেকে ১০০ টাকার জুঁই, বেলি, জান্নাতুল মাওয়া পর্যন্ত। আতর বিক্রেতা মিজান মুন্সি জানালেন, দামি আতরের মধ্যে আছে ছয় হাজার টাকা আউন্সের খস, সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার হোয়াইট উড, তিন হাজার টাকার আলবে জোহরা, দুই হাজার টাকার জান্নাতুল নাঈম ইত্যাদি। দেশের তৈরি আতরের মধ্যে রয়েছে আলিফ, মারজান, বিলকিস, জেসমিন, রজনী, মদিনা—এসব। এই আতরগুলোর দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
বাজারের সবচেয়ে ভালো মানের সুরমা মিসরের। এর প্রতি তোলার দাম সাড়ে ৩০০ টাকা। পাকিস্তানি সুরমার তোলা ১২০ টাকা এবং ভারতীয় সুরমা ৬০ টাকা তোলা।
রোজার শেষ দিনগুলোতে জায়নামাজের বিক্রিও বেশ বেড়েছে। সবচেয়ে কম দামের মোটা সুতি কাপড়ের জায়নামাজের দাম ১০০ টাকা। মখমলের তৈরি পাকিস্তানি জায়নামাজ পাওয়া যাবে ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকায়। ইন্দোনেশিয়ার মখমলের জায়নামাজের দাম ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
রোজার শেষ দিনগুলো বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়েই কাটাতে চেষ্টা করবেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। সারা মাসের এই সিয়াম, সংযম, আত্মশুদ্ধির সাধনার পরিসমাপ্তি ঘটবে ঈদের আনন্দের মধ্য দিয়ে।