অনুষ্ঠান উপস্থাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীকে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করেছে একদল সন্ত্রাসী । তিনি চ্যানেল আইয়ের ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন।
রাজধানীর ফার্মগেটের পূর্ব রাজাবাজারে নিজ বাসায় রাত সোয়া নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তিনি পূর্ব রাজাবাজারের ১৭৪ নম্বর বাসায় দ্বিতীয় তলায় সপরিবারে বাস করতেন।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, ‘এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। খুব শীঘ্রই দোষীদের খুঁজে বের করা হবে।’
প্রাথমিকভাবে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, মাওলানা ফারুকী জঙ্গি রোষানলে পড়েছিলেন। বেশ কিছুদিন থেকেই এলাকায় তারা বাসার আশপাশে অচেনা লোকদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছিল।
এদিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ, ডিবি, সিআইডি, র্যাবসহ গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা উপস্থিত আছেন। তারা আলামত সংগ্রহ করছেন। সেখানে কোনো সংবাদকর্মীকে আপাতত ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সময়ের কণ্ঠস্বর -কে জানিয়েছেন, ঘটনার আলামত দেখে মনে হচ্ছে এ কাজে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে তার বাসায় দুজন যুবক আসেন। এর আগে গত পরশু তারা হজে যাওয়ার কথা বলে তার পরামর্শ নিতে বাসায় আসেন। এরপর গতকালও একবার আসেন কিন্তু তিনি বাড়ি ছিলেন না বলে দেখা হয়নি। আজ সন্ধ্যায় আবার তারা এসে কথা বলেন। এক পর্যায়ে তারা বলেন, ‘যিনি হজে যাবেন তিনি এসে আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।’ এই বলে তার বাসায় অপেক্ষা করতে থাকেন।
এরপর হঠাৎ বাসার মধ্যে ছয়-সাতজনের একটি দল ঢুকে পড়ে। এসেই তারা মাওলানা ফারুকীর মাথায় অস্ত্র ধরে এবং তার পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে অন্য ঘরে বন্দি করে ফেলে। ফারুকীর এক ভাতিজা সেখানে উপস্থিত থাকায় তার চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর তারা ফারুকীর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।
তারা বলে, ‘টেলিভিশনে কাজ করে অনেক টাকা আয় করেন। আমাদের ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে।’ সে সময় তারা তাকে গালিগালাজ করে এবং গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি হাই কোর্ট মাজার মসজিদের খতিব ছিলেন ।
ফারুকীর বাসা গ্রিন রোডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ হোস্টেলের কাছেই। রাতে সেখানে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এক দল কর্মীকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
ফারুকী এই সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন বলে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলের আশে পাশে উপস্থিত লোকজন জানান, মাওলানা ফারুকী অত্যন্ত সহজ সরল ইসলাম ভক্ত মানুষ ছিলেন, কেও তাকে এত নির্মম ভাবে হত্যা করতে পারে টা অকল্পনীয় ।
এছাড়াও প্রতিবছর রমজান মাসে তার উপস্থাপনায় মধ্যপ্রাচ্যের নবী-আউলিয়াদের ঐতিহাসিক পূণ্যভূমিগুলোর ওপর বর্ণনাসহ সচিত্র ধারণ করা অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ও ছিল ভীষণ জনপ্রিয়।
এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে চ্যানেল আই পরিবার।
উল্লেখ্য, মাওলানা নুরুল ইসলাম চ্যানেল আইয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ‘শান্তির পথে’ নামের সাপ্তাহিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনা ও নির্দেশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়সহ সামাজিক কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা করায় অনুষ্ঠানটি মুসলমান দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়।

