জাতিসংঘ স্কুলে ফের ইসরাইলি হামলা শিশুসহ ১০ জন নিহত

4-2ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার জাতিসংঘ পরিচালিত আরেকটি স্কুলে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। গাজার রাফাহতে হামলায় গতকাল রবিবারই নিহত হয়েছেন ৩০ জন। স্কুলে আশ্রয়গ্রহণকারীরা যখন খাদ্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তখন নৃশংস এই হামলা চালিয়ে ইসরাইল শিশুসহ ১০ জনকে হত্যা করে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জাতিসংঘ পরিচালিত কোনো স্কুলে ইসরাইলের এটি দ্বিতীয়বারের মতো হামলা। গতকাল গাজায় ইসরাইলি হামলার ২৭তম দিনে নিহতের সংখ্যা সাড়ে ১৭শতে পৌঁছেছে। এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়ছে। হাসপাতালগুলোতে লাশের স্তুপ হয়ে আছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের রান্নাঘরেও লাশ রাখা হচ্ছে। খবর বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, আল-জাজিরা ও নিউইয়র্ক টাইমসের।

জাতিসংঘের অন্যতম মুখপাত্র ক্রিস গানেস জানিয়েছেন, গাজার দক্ষিণের রাফাহ এলাকার এই স্কুলে অনেক নাগরিক আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে বিমান হামলা চালানো হয়। তবে এই হামলা যে ইসরাইলের পক্ষ থেকেই করা হয়েছে সেটা তিনি নিশ্চিত করেননি। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্কুলের প্রবেশমুখেই বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ সময় খাদ্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন নিহতরা। মোহাম্মেদ মুয়াফাই নামে বেঁচে যাওয়া জাতিসংঘের একজন কর্মী জানিয়েছেন, বিমান থেকে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালানোর সময় তিনি স্কুলের ভেতরেই ছিলেন। তিনি ফ্লোরে লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। নিহতদের মধ্যে দুইজন নিরাপত্তারক্ষী এবং একজন সুইপার ছিলেন বলে জানান ওই কর্মী। বাকি সাতজনের সবাই এখানে জীবন বাঁচাতে আশ্রয়ের জন্য এসেছিলেন। স্কুলটিতে প্রায় ৩ হাজার ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন। পুরো রাফাহ এলাকায় গতকালের হামলায় নিহত হয়েছে ৩০ জন। আহত হয়েছে দেড়শত’র বেশি। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের আছেন ৯ জন। রাফাহ’র আবু ইউসেফ আল-নাজ্জার হাসপাতালের ডাক্তার আব্দুল্লাহ শিহাদা জানিয়েছেন, ওই স্কুল থেকে ৩০ জনের বেশি আহতকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়েছে। গত বুধবার জাবালিয়ায় জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মর্টার হামলায় নিহত হয় ১৬ জন। ওই স্কুলটিও শরনার্থী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছিল। গতকাল ইসরাইলি বাহিনী রাফাহ এলাকায় ১৩ বার বিমান হামলা চালিয়েছে। আর হামাস ইসরাইলে নিক্ষেপ করেছে দুটো রকেট।

হাসপাতালে লাশের স্তুূপ

গাজার রাফাহ এলাকার হিলাল এমিরাতি মেটারনিটি হসপিটাল। মাতৃসদনটি ব্যবহূত হয় মা এবং শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য। কিন্তু মাতৃসদন এখন আর সেই সেবার দিতে পারছে না। সেখানে এখন মা এবং শিশুরা চিকিত্সার জন্য আসছেন না। এখনো অনেকেই সেখানে আসছেন, তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তারা এখন আর নতুন জীবনকে স্বাগত জানাতে পারছেন না। মাতৃসদনটি এখন মর্গ হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। মাতৃসদনটির ফ্লোরেই কেবল লাশের স্তুূপ নয়, রান্নাঘরেও লাশের সারি দেখা গেছে। মাতৃসদনের কর্মীরা এখন নিহতদের আত্মীয়-স্বজনের অপেক্ষায় আছেন। পরিচয় পেলেই তাকে কবর দেওয়া হচ্ছে।

Developed by: