ডিজিটাল হচ্ছে দেশের সব সিটি করপোরেশন

5f229bba39250ba4228836d40ddcd51c রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় প্রতিটি সিটি করপোরেশনেই ডিজিটালাইজেশন (অটোমেশন) কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে অনিয়ম ও সঠিক সংখ্যা নিরুপনের জন্য সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।

ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশনকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী কাজও শুরু করে দিয়েছে বেশ কয়েকটি সিটি করপোরেশন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাজেট বক্তৃতায় সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনছার আলী খান বলেন, ‘আমাদের বর্তমান হোল্ডিং সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৬০টি। বাস্তবে এর চেয়ে বেশি হলেও হিসাবে নেই। তাই এবার প্রকৃত হোল্ডিং সংখ্যা নির্ধারণে ডোর টু ডোর সার্ভে করা হবে। বসানো হবে ডিজিটাল প্লেট। এতে নতুন হোল্ডিংগুলো করের আওতায় আসবে। পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকি কমবে।’

সূত্র জানায়, দিনদিন বাড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে হোল্ডিং সংখ্যা। কিন্তু করপোরেশনের হাতে সঠিত তালিকা না থাকা ও জরিপ না হওয়ায় নতুন হোল্ডিংগুলো থেকে কোনো রাজস্ব পায় না সিটি করপোরেশন।

দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মতো রাজধানী ঢাকাতেও দীর্ঘ ২৮ বছর পর্যন্ত কোনো হোল্ডিং জরিপ করা হয়নি। পূর্ব নির্ধারিত সে হোল্ডিং সংখ্যা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করছে সংস্থাটি। এ সুযোগেই সংস্থার রাজস্ব বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা নতুন হোল্ডিংগুলোকে রাজস্বের আওতায় না এনে অসদুপায়ে টাকা উপার্জন করে থাকেন। এ থেকে মুক্তি পেতেই সরকার হোল্ডিং প্লেটগুলোকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটি সিটি করপোরেশনে যথা নিয়মে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হলে করপোরেশনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। এজন্যই ডিজিটালাইজেশন বা অটোমেশন পদ্ধতি প্রয়োজন। এ পদ্ধতি চালু হলে প্রতিটি হোল্ডিংয়ের (আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প-কারখানা) ট্যাক্স বা কর সঠিকভাবে নির্ধারিত হবে।

ডিসিসি সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের বাকি সিটি করপোরেশনগুলোতে আয় বাড়াতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি দেশের সবকটি সিটি করপোরেশনকে ডিজিটাল বা অটোমেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে হোল্ডিং ট্যাক্স খাতে আয় বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। সে মোতাবেক ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম ও খুলনা সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে।

সূত্র জানায়, নতুন এ পদ্ধতি অসুসারে যেকোনো ব্যক্তি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে তার নিজের হোল্ডিংয়ের নির্ধারিত ট্যাক্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। ট্যাক্স পরিশোধ করার পর প্রতিটি হোল্ডিংয়ের হালনাগাদ তথ্যও পাওয়া যাবে ওয়েবসাইটে। ফলে সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের কোনো প্রকার হয়রানির শিকার হতে হবে না।

সূত্র আরও জানায়, নিয়মানুযায়ী বাড়ির মালিককে মোট ভাড়া আদায়ের ওপর বছরে ১২ শতাংশ হারে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হবে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুইমাসের ভাড়া ছাড় দিয়ে বছরে ১০ মাসের ভাড়ার ওপর ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া বাড়ির মালিক নিজে যে ফ্ল্যাটে থাকেন তার হোল্ডিং ট্যাক্স ধরা হয় না। কিন্তু এরপরও অনেক বাড়ি মালিক ট্যাক্স ফাঁকি দিতে ভাড়াটিয়ার সংখ্যা কম দেখান। আর বেশিরভাগ ফ্ল্যাট পরিবারের সদস্যদের নামে দেখিয়ে থাকেন।

এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মনিটরিং ও জবাবদিহিতা না থাকায় ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া এবং আদায়কারীদের কমিশন-বাণিজ্যের কথা কেউ জানতে পারে না। নতুন এ পদ্ধতি চালু হলে হোল্ডিং ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার সুযোগ অনেকাংশে কমে আসবে। কেননা, যে কারো হোল্ডিং ট্যাক্সসংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত থাকবে। কোনো তথ্য গোপন রাখা যাবে না। তখন যে কেউ যে কারো হোল্ডিং সংক্রান্ত বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে অভিযোগ দিতে পারবেন। ভাড়াটিয়ারাও চাইলে বাড়ির মালিকের হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানসংক্রান্ত যে কোনো তথ্য জানাতে পারবেন।

হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ ও আদায় কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ট্যাক্সদাতা ও আদায়কারী উভয়ে লাভবান হচ্ছেন।  ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সিটি করপোরেশন। এ অবস্থায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ ও আদায় করা সম্ভব হলে অনেকাংশে দুর্নীতি কমিয়ে আয় বাড়ানো সম্ভব হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘ডিএসসিসি ও ডিএসসিসিতে যে পরিমাণ হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হওয়ার কথা তার অর্ধেকও আদায় হয় না। প্রতিবছর করপোরেশন যে পরিমাণ হোল্ডিং ট্যাক্সের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে তার দুই-তৃতীয়াংশও আয় হয় না।’

ডিজিটাল হোল্ডিং (অটোমেশন) নম্বর বসানোর ব্যপারে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার আলী খান বলেন, ‘এর মাধ্যমে একটা বড় ধরনের সুফল পাওয়া যাবে। আশা করছি এবার কিছুটা হলেও হোল্ডিং সংখ্যা বাড়বে। তবে এজন্য নগরবাসীর সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন।’

এরআগে প্রত্যাশা উন্নয়ন সংস্থা ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামক দুটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় গত ২১ জুলাই সোমবার সকালে ডিএসসিসির অঞ্চল-২ এর ১ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর রোডে ডিজিটাল (অটোমেশন) হোল্ডিং প্লেট বসানো কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ডিএসসিসির প্রশাসক মো. ইব্রাহীম হোসেন খান।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে প্রত্যাশা উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতি (অটোমেশন) চালু করে দিয়েছে। এর মধ্যেমে সিটি করপোরেশন তার হোল্ডারদের সঠিক সংখ্যা জানতে পারবে। তাছাড়া অসাধু কর্মকর্তাদের অনিয়মের মাত্রা কমে আসবে। অনিয়ম করলেও এর মাধ্যমে ধরা পড়বে খুব সহজেই।

Developed by: