মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীর ৯৬ তম জন্মবার্ষিকী আজ

indexমুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল আতাউর গণি ওসমানীর ৯৬ তম জন্ম বার্ষিকী আজ। সিলেটের কৃতি সন্তান ক্ষণজন্মা এই মহানায়ক ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে বাবার কর্মস্থলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস সিলেটের বর্তমান ওসমানী নগর উপজেলার দয়ামীর গ্রামে। বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানীর পিতার নাম খান বাহাদুর মফিজুর রহমান এবং মাতা জোবেদা খাতুন। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। বাংলাদেশের গর্বিত সন্তান বঙ্গবীর আতাউল গণি ওসমানী ছোট বেলা ‘আতা’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯২১ সালে আসামের কটনস স্কুলে। সর্বশেষ আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এম এ ১ম পর্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে বাংলার এই বীর সেনানী ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। কিন্তু তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগ না দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৪০ সালে তিনি দেরাদুন সাময়িক প্রশিক্ষণ একাডেমি থেকে ইন্ডিয়ান আর্মির ‘কিংস কমিশন’ লাভ করেন। পাক-ভারত বৃটিশ সেনাবাহিনীর তিনি ছিলেন, সর্বকনিষ্ঠ মেজর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে বার্মা রনাঙ্গনে সেনাবাহিনীর অধিনায়কত্ব লাভ করে তিনি অনন্য নজির স্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালের ৭ অক্টোবর তিনি পাকিস্তানে আসেন এবং ওই সময় তাকে লে: কর্ণেল পদে উন্নীত করা হয়। ১৯৪৮ সালে তিনি কোয়েটা স্টাফ কলেজে স্টাফ কোর্সে যোগদান করেন। সেখান থেকে তিনি পিএসসি ডিগ্রী লাভ করে সেনাবাহিনীর তদানীন্তন চীফ অব দি জেনারেল স্টাফ মেজর জেনারেল রেহিলেন হার্ট এর সহযোগী হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি খুলনা, যশোর, ঢাকা ও চট্টগ্রামের স্টেশন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ সালের ৭ নভেম্বর ব্রিগেডে অস্থায়ী ব্রিগেড কমান্ডার নিযুক্ত হন। তারপর ওই বছরই তিনি পাকিস্তান রাইফেলস’র কমান্ডার নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালের মে মাসে তিনি মিলিটারী অপারেশনের ডেপুটি ডাইরেক্টর নিযুক্ত হন এবং কর্ণেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক ইন্টারমিনিস্ট্রারিয়েল কমিটি গঠন করলে ওসমানীকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রতিনিধি ও মুখপাত্র নিযুক্ত করেন। ১৯৬৪ সালে তাকে আধুনিক সামরিক ব্যবস্থা ও বৈজ্ঞানিক উন্নতি অনুধাবনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। ১৯৬৫ সালে ওসমানীকে পাক-ভারত যুদ্ধে ডেপুটি ডাইরেক্টর অব মিলিটারী অপারেশন পদে নিযুক্ত করা হয়। পরে ১৯৬৭ সালে আইয়ূব খান সামরিক বাহিনী থেকে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেন। তিনি বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙ্গে দেয়ার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেন। মূলত জেনারেল এম এ জি ওসমানী ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্টের স্বপ্নদ্রষ্ঠা। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ২ থেকে ৬ ব্যাটালিয়নে উন্নীত, সেনাবাহিনীতে বাঙালী নিয়োগ শতকরা দুই ভাগ থেকে দশভাগ বৃদ্ধি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চল চল চল কবিতাকে মার্চ পাস্ট সঙ্গীতের মর্যাদা, বেঙ্গল রেজিমেন্টের মাসরিক বাদ্যযন্ত্রে ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ ইত্যাদি প্রচলন করেন। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে তিনি এম এন এ নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শতাব্দীর অন্যতম ঘটনা। স্বাধীনতাকামী কোটি কোটি মানুষকে পাকিস্তানী হায়ে না বাহিনীর রক্তাক্ত থাবা থেকে মুক্ত করার এক মহান ব্রত তিনি পালন করেন। বিক্ষিপ্তভাবে যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনীকে সমন্বিত করে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান মুক্তিযুদ্ধে। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করেন। ওসমানীর অসামান্য নেতৃত্বে মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে বীর বাঙালি স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর নেন ওসমানী। ১৯৭৩ সালেও তিনি স্বাধীন দেশে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু বাকশাল প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে তিনি আইন সভার সদস্য পদ ত্যাগ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী ১৯৮৪ সালের ১৬ আগস্ট ৬৬ বছর বয়সে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। দেশের এই ক্ষণজন্মা বরেণ্য ব্যক্তিত্বের ৯৬তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে তাঁর মাজার জিয়ারত, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল। জাতীয় জনতা পার্টির : জাতীয় জনতা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর ৯৬তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় জনতা পার্টির ৩৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রোববার বাদ জোহর হযরত শাহজালাল (র:) মাজার সংলগ্ন ওসমানীর মাজার জিয়ারত, পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় জনতা পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ এডভোকেট নুরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে মাজার জিয়ারত, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আইন উপদেষ্টা প্রবীণ আইনজীবী আলহাজ্ব আব্দুল মতিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি কাজী আব্দুল মুনিম, লেখক কলামিষ্ট মির্জা মোঃ রাজা মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম মর্তুজা, বীর মুক্তিযোদ্ধা কচির আলী, সাধারণ সম্পাদক আকলিছ আহমদ চৌধুরী, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট তাহসিমুল ইসলাম খান, মহানগর কমিটির সভাপতি সাবের সফফত আহমদ চৌধুরী, সহ-সভাপতি সৈয়দ যাবীর আনোয়ার সুমিত, সেলিম আহমদ চৌধুরী, শফিকুর রহমান শফিক, ইকবাল আহমদ চৌধুরী, জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কমান্ডার শাহাবুদ্দিন আহমদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ মিয়া, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মৌলানা ফজেল আহমদ, মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদুর রহমান সাবাজ ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক তুহিন আহমদ খান, জেলা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে এম সামিউল আলম, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ক কমিটি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহমদ খান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর জাসদের দপ্তর সম্পাদক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী এহিয়া, যুব নেতা কামাল আহমদ, ডাক্তার আব্দুল ওয়াহিদ, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, ফটো সাংবাদিক দুলাল হোসেন, শেখ আশরাফুল আলম নাসির, এম আর টুনু তালুকদার, শাহিন আহমদ, কয়েছ আহমদ, শামীম আহমদ, আনিস রহমান, শাকিল আহমদ সোহাগ, শ্যামানন্দ দাস, নিরানন্দ পাল, ফেরদৌসআহমদ, আলমগীর হোসেন, জুয়েল আহমদ, জাকারিয়া তালুকদার প্রমুখ। জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদ : অধ্যাপক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেছেন, জাতির সূর্যসন্তান জেনারেল এম এ জি ওসমানীর বিভা এখনও সম্পূর্ণরূপে পরিস্ফুটিত হয়নি। আমাদের স্বাধীনতার কর্ণধার হিসেবে পরিচিত এম এ জি ওসমানীকে এখনও জাতীয়ভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। অথচ একটি জালিম সশস্ত্র বাহিনীকে কিভাবে পরাস্ত করে একিট মজলুম দেশকে বিজীয় করা যায় তা আমাদের শিখিয়েছেন ওসমানী। আজকের যুব সমাজ যদি ওসমানীর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জীবনপথের পাথেয় খুজে নেয় তবে গড়ে উঠবে একটি আদর্শিক যুবক সমাজ। গতকাল রোববার বঙ্গবীর ওসমানী জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবীর জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ৯৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নগরীর দরগাহ গেইটস্থ আর কে ধর হলে আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীবর ওসমানী জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক আতাউর রহমান। পরিষদের যুগ্ম সদস্যসচিব এনামুল হক লিলুর পরিচালনায় এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাকেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী আর কে ধর, এডিশনাল পিপি এডভোকেট শামসুল ইসলাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবু হুরায়রা ছাদ মাস্টার, উদযাপন পরিষদের সদস্যসচিব মনোরঞ্জন তালুকদার, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী এহিয়া ও জাদুশিল্পী বেলাল উদ্দিন। উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সদস্যসচিব মিজানুর রহমানের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে সূচিত সভায় আর বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গির আলম, সুজন তালুকদার, আলী আহসান হাবিব, শাহ আল, নোবেন্দ্র সিংহ, আনফর খান, আফিকুর রহমান আফিক, হুমায়ূন রশীদ শাহিন, মাহবুব ইকবাল মুন্না প্রমুখ। শুরুতে পবিত্র কালামে পাক থেকে তেলাওয়াত করেন শফিকুর রহমান শফিক। ভাসানী ওসমানী স্মৃতি সংসদ : বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী ৯৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভাসানী ওসমানী স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে সংগঠনের কার্যালয়ে আজ বাদ জোহর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম মর্তুজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমদ ও প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন সমাজসেবক আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর আলম। এতে সকলের উপস্থিতি কামনা করা হয়েছে। সুরমা যুব পরিষদ : দক্ষিণ সুরমা যুব কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী ৯৬তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে মাজার জিয়ারত পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ সুরমা যুব কল্যাণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কামাল আহমদ তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এম এ ছালামের পরিচালনায় সভায় অন্যান্য মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ফিরিজপুর সেটেলাইট ক্লিনিকের ভ’মিদাতা হাজী শাহিনুর রহমান, যুব সংগঠক জাহাঙ্গীর খান, শিক্ষক সুফিয়ান আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম, নুরুজ্জামান লিটন, আবুল কালাম, মো: নুর মিয়া, সাহেদ আহমদ শান্ত, শহিদুল ইসলাম, আব্দুস সামাদ শাহিন, তুহিন আহমদ প্রমুখ।

Developed by: