ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ওপর চলমান বিমান হামলায় ব্রিটেনের যোগ দেওয়ার পক্ষে দলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ছায়া প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়লেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার কয়েক মিত্র দেশের সঙ্গে যোগ দিয়ে ইরাকে আইএসের ওপর হামলা চালানো হবে কি না তা নিয়ে শনিবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ভোট হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ৫২৪ ও বিপক্ষে ভোট পড়ে ২৩টি।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ ও লিব ডেমের পাশাপাশি বিরোধী দল লেবার পার্টিও ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।
লেবার পার্টির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে ছায়া শিক্ষামন্ত্রীর পদ ছাড়েন রুশনারা আলী।
এক চিঠিতে লেবার পার্টির প্রধান এড মিলিব্যান্ডকে পদত্যাগের বিষয়ে রুশনারা আলী লিখেছেন, “আমার জন্য এটি একটি বিরাট সুযোগ ছিল, গত চারবছরে ছায়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমি একসঙ্গে দুটি ভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি।
“তাই এটি দুঃখজনক আমাকে ইরাকে আইএসের ওপর সামরিক হামলা চালানোর বিষয়ে ভোট দেওয়ার আগেই পদত্যাগ করতে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার ধারণা রয়েছে এবং সামরিক হামলার বিরুদ্ধে ভোট পড়বে না। কিন্তু আমার বিবেক এই সিদ্ধান্তে সায় দিচ্ছে না। তাই আমি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছি।”
সিলেটে জন্মগ্রহণকারী রুশনারা বলেছেন, আইএসের সদস্যদের ‘ভয়ঙ্কর ও বর্বরোচিত’ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যদের সঙ্গে একমত হলেও, তিনি মনে করেন সামরিক হামলার সিদ্ধান্ত ইরাকের সাধারণ মানুষের জন্য আরও রক্তপাত নিয়ে আসবে।
রুশনারার চিঠির জবাবে মিলিব্যান্ড লিখেছেন, আমি মর্মাহত যে, আপনি এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে পারছেন না। আমার বিশ্বাস অনেক ভেবে চিন্তেই আপনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপনার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করছি।
লেবার পার্টির নেতা মিলিব্যান্ডকে লেখা রুশনারা আলীর চিঠি এবং জবাব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসে পৌঁছেছে।
রুশনারার জন্ম ১৯৭৫ সালে সিলেটে। মাত্র সাত বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে চলে যান লন্ডনে। বাংলাদেশে তার পৈতৃক নিবাস সিলেটের বিশ্বনাথের বুরকি গ্রামে। রুশনারা রাজনীতি, অর্থনীতি ও দর্শন পড়েছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে।
১৭ বছর বয়স থেকে রুশনারা লেবার পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়। এই দীর্ঘ পথ চলায় তিনি দীক্ষা নিয়েছেন ১৯৫৪ সালে লেবার পার্টির মেনিফেস্টোর অন্যতম লেখক মাইকেল ইয়াংয়ের কাছে।
লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে ২০১০ সালে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে প্রথম বাঙালি হিসেবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যান রুশনারা। ছায়ামন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পরও তিনি ওই দুই আসনের এমপি’র দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
রুশনারার আগে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে লেবার পার্টির সর্বশেষ এমপি ছিলেন ওনা কিং, যিনি ইরাক যুদ্ধের পক্ষে পার্লামেন্টে আনা প্রস্তাবে ভোট দিয়ে ২০০৩ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন।
২০১৫ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য ব্রিটিশ নির্বাচনের মাত্র আট মাস আগে রুশনারা ছায়ামন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।

