শামছুন নাহার

000কবি শামছুন নাহার কবিতার স্বপ্নীল ভূবনে বসবাস করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাঁর জন্ম ১৯৬২ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা জেলার অন্তর্গত সাভার উপজেলার ভাদাইল গ্রামে। পিতা জালাল উদ্দিন আহমদ ও মাতা মৃত রাবেয়া বেগম। পিতার নাটকে সংশ্লিষ্টতার সুবাদে তাঁর সাহিত্যের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা। ছোট বেলা থেকেই ছড়া, কবিতা, গল্প ইত্যাদি লেখার প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক ছিলো। তাই স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা ‘ভালোবাসা’ শিরোনামে ১৯৮২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সিলেটের যুগভেরী পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত হয়। এরপর ‘সিলেট কণ্ঠ, সাপ্তাহিক জালালাবাদী ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। তিনি সাভারে থাকেন অথচ প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় সিলেটে। এর কারণ হলো তাঁর সিলেটে বেশ কয়েকজন ‘পেনমামা’ ছিলেন। তাদের কাছে তিনি লেখা পাঠাতেন আর সে লেখা তাঁর অজান্তেই ছাপা হতো সিলেটের পত্র পত্রিকায়। পরবর্তীতে বেগম পত্রিকা সহ অন্যান্য জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তাঁর লেখা নিয়মিত বেরুতে থাকে।
কবি শামছুন নাহারের এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো- *ভালোবাসার নীল দুয়ার, *কষ্টের ঝোল বারান্দা, *অনুভবে ছুঁয়েছি তোমায়, *নগ্ন রাতের ঘ্রাণ, *ফিরে এসো পুরাণের পাখি হয়ে। প্রকাশিতব্য *বাংলাদেশের জন্ম (ছোটদের জন্য)।
কবিতায় অনন্য অবদানের জন্য তিনি ২০০৬ ও ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সাহিত্য ও সংস্কৃতি পুরস্কার এবং ২০১০ সালে সাংবাদিক বজলুর রহমান স্মৃতি স্বর্ণপদক লাভ করেন। ২০০৫ সালে জাতীয় লেখক ফোরাম কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে ভূষিত হন।
কবি শামছুন নাহার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে øাতক এবং ময়মনসিংহ ভেটেরিনারি ইন্সটিটিউটে অধ্যয়ন করেছেন। এরপর টহরহাবৎংরঃু ড়ভ ঐঁফফবৎংভরবষফ ধহফ ঈড়সসড়হবিধষঃয ঝবপৎবঃধৎরধঃব ওহ ট.ক হতে ণড়ঃয উবাবষড়ঢ়সবহঃ এ চড়ংঃ এৎধফঁধঃব উরঢ়ষড়সধ (উণউড) পরবর্তীতে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি বাংলাদেশ পশু সম্পদ অধিদপ্তর ঢাকায় কর্মরত আছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। তাঁর স্বামী মোহাম্মদ আমির হোসেন। শাওন ও তন্ময় নামক দুই পুত্র সন্তানের তিনি জননী।
তার অসংখ্যা লেখা থেকে পাঠকদের উদ্দেশ্যে দুটি লেখা পত্রস্থ করা হলো-

অদম্য পুরুষ তুমি
জানি না কোন সে জাগরণ থেকে
স্পর্শের উষ্ণতা ছড়াতে চাও
যৌবনের এই ছেঁড়া শরীরে।
তুমুল স্বাধীন নিঃসঙ্কোচে করেছো প্রকাশ
নোনা স্বাদ পেতে চাও কোমল ভালোবাসার।
অদম্য পুরুষ তুমি
বুকজুড়ে এত টান
বৃরে শিকড়ের মতো
অরণ্যের গোপন ঘ্রাণের মতন
চুমুর চিহ্ন এঁকে দিতে চাও
ঠোঁটের কোণে লুকানো ছিল যা এতকাল।
অরণ্যের সবুজের মতোই
পাশাপাশি থেকেও বুঝতে পারিনি
তোমার হৃদয়ের হাওয়া- মেঘবৃষ্টি।
পরখ করিনি কখনো আমার অনুভবে
তোমার অস্তিত্বের খিল কতখানি আঁটা।
তোমার ব্যাকুলতাগুলি ওম দিয়েছে
একখন্ড শীতবস্ত্রের মতো আর তাই
শখের কুলঙ্গিতে তুলে রেখেছি
একরাশ শাদা জুঁইয়ের মতো
হয়তো কোনো উদাসীন দুপুরে
বিহ্বল করে তুলবে এই অপোয়।

অঘ্রাণের সুখ
কীর্তনখোলার বুকে বজরা ভাসিয়ে
আমি রবীন্দ্রনাথ হবো না।

কতটুকু হারিয়ে খুঁজেছে মানুষ
অঘ্রাণের সুখ।
অন্তহীন নবান্নের উৎসবে
কতদিন বাজেনি মাদল
মনে পড়ে না।

তবু স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা
নবীন পুরুষেরা জানে না
নিঝুম বসে থাকা
ছানিপড়া বৃদ্ধের দল
পাঁজরের তে কতটা ব্যথা নিয়ে
তাকিয়ে রয়েছে বৃত্তাবদ্ধ জীবনের দিকে।

আকাশকে কাব্য করে বলি
হে দূরের আকাশ
তুমি একবার বৃষ্টি দাও
পোড়ামাটি পোড়াগাছ
বীজ বোনা ভালোবাসাকে
তামাটে করো না।

পাহাড় ফেটে ছুটে আসুক হিমস্রোত।
আকাশ ভেঙে নামুক অঝোর ধারা
শ্যামলতার সারাৎসার শুষে
মৃত্তিকা ফুঁড়ে নতুন জন্ম
দিতে পারে উর্বর শস্যদানা।

আমার মন পড়ে রয় কীর্তনখোলার বুকে
জলের গন্ধ কড়া নাড়ায়
স্বপ্নস্মৃতির অপরূপ ক্যানভাসে
ধানের গন্ধ জালের স্বপ্ন, অসীম পিপাসা
উঠে আসছে কীর্তনখোলার অপরূপ ক্যানভাসে।

Developed by: