মুশফিকুর রহিমআতঙ্ক…মনোযোগ…নতুন লক্ষ্য। শব্দগুলো বিচ্ছিন্নভাবে বলা। কিন্তু এই শব্দগুলোকে একসঙ্গে জোড়া লাগালে যে ক্যানভাসটা তৈরি হয়, সেটা যেন ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক ছবিটা তুলে ধরতেই।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টটা তিন দিনে জেতা গেলেও সেটার ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে ছিল দুশ্চিন্তা এবং সেটির সৃষ্টি ব্যাটিং থেকে। খুলনায় আজ থেকে শুরু দ্বিতীয় টেস্টে অন্য সব বাদ দিয়ে তাই ব্যাটিং নিয়েই বেশি চিন্তিত বাংলাদেশ দল, যার প্রতিফলন কালকের সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকের মুখ থেকে আসা ওই শব্দগুলোতে—
আতঙ্ক: এই ‘আতঙ্কে’র কারণ প্রথম টেস্টের ব্যাটিং। মুশফিক বলছিলেন, ‘যেকোনো টেস্ট ম্যাচে একটি-দুটি বাজে আউট থাকতেই পারে। এটা বড় দলগুলোর ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় পাঁচ-ছয়জন ব্যাটসম্যান বাজেভাবে আউট হয়ে যায়। এটা সত্যিই আতঙ্কের।’
মনোযোগ: দ্বিতীয় টেস্টে নতুন করে এই আতঙ্কের সামনে পড়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে একটাই পথ খোলা দেখেন মুশফিক—ব্যাটিংয়ে আরও মনোযোগ দেওয়া, ‘আমার মনে হয় মনোযোগ…এই জায়গাটাতেই বেশি কাজ করার চেষ্টা করছি আমরা।’
নতুন লক্ষ্য: আগের টেস্টের আতঙ্ক ফিরে আসা ঠেকাতে ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেওয়ার বিকল্প দেখছেন না অধিনায়ক। আর ব্যাটিংয়ে মনোযোগটা ধরে রাখতে পারলে অসম্ভব মনে করেন না নতুন লক্ষ্যপূরণও। তা কী সেই নতুন লক্ষ্য? শুনুন মুশফিকের মুখ থেকেই, ‘আমরা একটা জিনিস সবাইকে জানানোর চেষ্টা করেছি। কারও ৫০ রান হয়ে গেলেও আরও ৫০টা রান যেন সে দলের জন্য করে। এটা আমাদের নতুন লক্ষ্য। এটা সম্ভব হলে দলের জন্য বড় একটা অর্জন হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক আর যা যা বললেন, সবই ওই তিনটি শব্দকে ঘিরে। তাঁর কথা থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার—দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটিংয়ে উন্নতির ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ দল। সেটা অবশ্য শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে গত দুই দিনের অনুশীলনেও স্পষ্ট। অনুশীলনে ব্যাটিং নিয়ে যে খুব আলাদা কিছু হয়েছে তা নয়। তবে মাঠের এক পাশের নেটে যখন নিয়মিত ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন চলছিল, অন্য পাশের নেটে তখন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহদের সঙ্গে আলাদাভাবে কাজ করেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আর মুশফিক তো সরাসরিই বলেছেন, ‘ব্যাটিংয়ের প্রতিই আমাদের মূল মনোযোগ।’ সঙ্গে ফিল্ডিংয়ের ভুলগুলো শুধরে ভালো বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার লক্ষ্য তো আছেই।
ব্যাটিং নিয়ে নতুন পরিকল্পনায় দলের অংশ হতে পারেন মার্শাল আইয়ুব কিংবা এনামুল হকও (বিজয়)। সে ক্ষেত্রে কিছু অদলবদল হতে পারে ব্যাটিং অর্ডারে। ছয়ে সাকিব আল হাসানকে দিয়ে পাঁচে উঠে আসতে পারেন মুশফিক, মার্শাল বা এনামুলের মধ্যে যে-ই খেলুন, তিনি নামতে পারেন সাত নম্বরে। এ রকম পরিবর্তনের ইঙ্গিত আছে মুশফিকের কথায়ও, ‘আমার পাঁচ নম্বরে খেলারও সম্ভাবনা আছে। তবে যেখানেই খেলি না কেন, দলের জন্য অবদান রাখতে চেষ্টা করব।’
নিজে যেটার প্রতিশ্রুতি দিলেন, দলের অন্যদের কাছেও মুশফিকের সেই একই আর্জি। টেস্ট ক্রিকেটে একটি-দুটি বল ব্যাটসম্যানের সামর্থ্যকে হারিয়ে দিতেই পারে। তাতে ইনিংসের শুরুতেও হড়কাতে পারে পা। তবে সব বলই তো আর ও রকম কঠিন হয় না। তার পরও অনেক সময় ব্যাটসম্যানরা থিতু হয়েও উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। শুধু এই জিনিসটা যেন না হয়, সেটাই চান অধিনায়ক, ‘আমরা যে-ই উইকেটে সেট হই না কেন, সে যেন ইনিংসটা বড় করতে পারে। শুধু তার জন্য নয়, এটা পুরো দলের জন্য তাকে করতে হবে। এটা টিম রুলস। এটা অবশ্যই তাকে করতে হবে, তা সে আমি হই আর যে-ই হোক না কেন।’
ব্যাটিং শোধরানোর টেস্টে ব্যাটসম্যানদের উদ্দেশে অধিনায়কের এই একটাই বার্তা—ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখতে চান সবাইকে। বড় বড় দলের বড় বড় ব্যাটসম্যানরা সেটা করেই বড় হয়েছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাহলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তা করতে পারবেন না কেন?
ব্যাটিংয়ে অখণ্ড মনোযোগ ঢেলে দিয়ে আগের ম্যাচে সৃষ্ট আতঙ্কটাকে জয় করতে পারলেই সম্ভব ‘টিম রুলস’ অনুযায়ী নতুন লক্ষ্য পূরণ। বড় হওয়ার পথে আরেকটু এগিয়ে যাওয়া।