এক ম্যাচ হাতে রেখেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বিদায় ঘণ্টা বাজল ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি ইংল্যান্ডের। সোমবার এক শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ইংলিশদের ১৫ রানে হারিয়েছে টাইগাররা।
রাজনৈতিক আগুনে যখন পুরো দেশের বিবর্ণ অবস্থা, তখন অবিস্মরণীয় এই জয় পুরো দেশটাকে আনন্দের জোয়ারে ভাসালো। ম্যাচ শেষের সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে আনন্দ মিছিল বের হয়েছে।
সোমবার অস্ট্রেলিয়ার এডিলেডে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ইংল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করে মাহমুদউল্লাহর শতকে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ২৭৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।
জবাবে ২৬০ রানে অল আউট হয় ইংল্যান্ড। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ১৫ রানের জয় পায় মাশরাফিরা। রুবেলের অসাধারণ বোলিং ছিল নজর কাড়ার মতো। তিনি নেন ৪ উইকেট। মাশরাফি ও তাসকিন নেন ২টি করে উইকেট। এর আগে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি আর মুশফিকের ৮৯ রানের সুবাদে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৭৫ রান।
এই জয়ের ফলে ৫ ম্যাচ থেকে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের তৃতীয় স্থানে উঠে গেছে বাংলাদেশ। সমান সংখ্যক ম্যাচ থেকে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের নিচে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। আর সমান ম্যাচ থেকে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ২ পয়েন্ট।
২৭৬ রানে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলীয় ৪৩ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতন হয় ইংল্যান্ডের। রান আউটের শিকার হন মইন আলী।
দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন আলেক্স হেলস ও ইয়ান বেল। হেলসকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন মাশরাফি। তার বলে মুশফিকুরের গ্লাভসবন্দি হন হেলস।
দলীয় ১২১ রানের মাথায় জোড়া আঘাত হানেন রুবেল হোসেন। বেল ও মর্গ্যানকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভবনা উজ্জ্বল করেন তিনি।
এরপর তাসকিন আহমেদের হাতে ইমরুলের তালুবন্দি হন জেমস টেইলর। ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ১৩২/৫। তবে এখানেই ম্যাচের রহস্য শেষ হয়নি। ধারাবাহিকভাবে ছোট ছোট জুটি গড়তে থাকে ব্রিটিশরা। ১৬৩ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলা ইংল্যান্ডকে খেলায় ফেরান জস বাটলার ও ক্রিস ওকস। ৬১ বলে ৭৫ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা বাটলারকে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করে বিপজ্জনক জুটি ভাঙেন তাসকিন। ৫২ বলে খেলা বাটলারের ৬৫ রানের ইনিংসটি গড়া ৬টি চার ও ১টি ছক্কায়। অসম্ভব একটি রান নিতে চেয়েছিলেন ক্রিস জর্ডান। রান নেয়া সম্ভব নয় বুঝতে পেরে ফেরার চেষ্টা করেন তিনি। সাকিবের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় তাকে।
শেষ দুই ওভারে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ১৫ রান। তবে তাদের স্কোর এখান থেকে আর এগোতে দেননি রুবেল হোসেন। দুর্দান্ত বল করে বোর্ড ও এন্ডারসনকে বোল্ড করে দলকে কাঙ্ক্ষিত জয় এনে দেন রুবেল হোসেন। দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ চারটি উইকেট নিয়েছেন এই ফাস্ট বোলার।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো না হলেও মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের অর্ধশতকে ভর করে ৭ উইকেটে ২৭৫ রান করে বাংলাদেশ। শুরুতেই ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবালকে ফিরিয়ে দেন জেমস অ্যান্ডারসন। কায়েস থার্ড স্লিপে ক্রিস জর্ডানের হাতে ক্যাচ দেন। একবার জীবন পাওয়া তামিম ফিরে যান প্রথম স্লিপে জো রুটের তালুবন্দি হয়ে।
পাঁচ রানের মধ্যে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল্লাহর ব্যাটে। তৃতীয় উইকেটে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা জুটি উপহার দেন এই দুই জনে।
চার দিয়ে শুরু করা সৌম্যর বিদায়ে ভাঙে ১৮.১ ওভার স্থায়ী জুটি। জর্ডানের বাউন্সার ঠিকভাবে খেলতে না পেরে জস বাটলারের গ্লাভসবন্দি হন তিনি। পরের ওভারেই আরেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসানের বিদায়ে অস্বস্তিতে পড়ে বাংলাদেশ।
পাঁচ রানের মধ্যে সৌম্য-সাকিবের বিদায়ের পর প্রতিরোধ গড়েন মাহমুদুল্লাহ-মুশফিক। বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক করা মাহমুদল্লাহ দেখেশুনে খেললেও শুরু থেকেই রানের গতি বাড়িয়ে নেয়ার দিকে মনোযোগী ছিলেন মুশফিকুর। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি উপহার দেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। পঞ্চম উইকেটে ১৪১ রান করেন এই দুই জনে।
আগের রেকর্ডেও ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচেই ১৩৯ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। ম্যাচ সেরা হন ১০৩ রান করা মাহমুদুল্লাহ।

