তিন অপরাজিতার কথা

দক্ষতা আর চারিত্রিক গুণাগুণ যাচাই করে ভোটাররা ভোট প্রদান করেন : টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক
এলাকার কল্যাণে কাজ করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা নিরলসভাবে করে যাব। আমার ক্ষতি করার জন্য যারা চেষ্টা করেছিলেন তাদের জন্য দুঃখ হয়। প্রার্থীর দক্ষতা আর চারিত্রিক গুণাগুণ যাচাই করে ভোটার ভোট প্রদান করেন। এভাবেই নির্বাচনে জয়ী টিউলিপ তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, পরম করুণাময়ের অশেষ রহমতে এবং ভোটারদের দোয়ায় আমি নির্বাচিত হয়েছি। আমার সমর্থক এবং এলাকাবাসীকে রইল প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়ন পান। রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা টিউলিপ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। লন্ডনের ক্যামডেন কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলর ও সংস্কৃতিবিষয়ক কেবিনেট মেম্বার টিউলিপ শেখ রেহানা ও ড. শফিক সিদ্দিকের বড় মেয়ে। টিউলিপের জন্ম লন্ডনের মিচাম এলাকায়। তার শৈশব কেটেছে ব্রুনাই, ভারত, সিঙ্গাপুর এবং বাংলাদেশে। তিনি লন্ডনে কিংস কলেজ থেকে রাজনীতি, পলিসি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ব্রিটেনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, গ্রেটার লন্ডন অথরিটি ও সেভ দ্য চিলড্রেন ফান্ড চ্যারিটির জন্য কাজ করেন। লেবার পার্টির লিডার এড মিলিব্যান্ডের লিডারশিপ ক্যাম্পেইনেও তিনি কাজ করেন। এছাড়া টাওয়ার হ্যামলেটের সাবেক এমপি উনা কিং, সাদিক খান এমপি, হ্যারি কোহেনের
সঙ্গে কাজ করেন।
২০০৮ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে অংশ নেন টিউলিপ। ২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি নারী
কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের তিনি একজন সদস্য। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে স্থানীয় লেবার পার্টির সদস্যদের ভোটে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়ন লাভ করেন। এর আগে আসনটিতে এমপি ছিলেন অস্কার পুরস্কার বিজয়ী নেত্রী লেবার দলের গেন্ডা জ্যাকসন। তিনি টানা ২৩ বছর এমপি থাকার পর বার্ধক্যজনিত কারণে অবসরে যান। ফলে আসনটিতে নতুন একজনকে মনোনয়ন দেয় পার্টি। টিউলিপ সেখানে এমপি পদের প্রার্থীর জন্য মনোনীত হন। টিউলিপ সিদ্দিক ক্যামডেন অ্যান্ড ইজলিংটন এনএইচএস ট্রাস্টের গভর্নর, রয়েল সোসাইটি অব আর্টের একজন ফেলো। স্থানীয় পত্রিকা হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেইট এক্সপ্রেসের নিয়মিত লেখক। স্বামীর সঙ্গে ওয়েস্ট হ্যামস্টেডে বসবাস করেন।
দায়িত্ব পালনে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব : রূপা আশা হক
হাউসিং সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে আমি আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করব। নির্বাচনের সময় যারা আমার পক্ষে কাজ করেছেন তাদের এবং আমার এলাকাবাসী যারা আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন তাদের অনেক ধন্যবাদ। সবার সহযোগিতা পেলে বিরোধী প্রার্থীর চেয়ে আরও ভালো কাজ করতে পারব। জনগণের কল্যাণের জন্য সর্বদা আমি সোচ্চার ছিলাম, নির্বাচিত হওয়ার পর দায়িত্ব পালনে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। নির্বাচিত রূপা হক এভাবেই তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টি হয়ে ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন রূপা হক। এর আগে লন্ডন বারা অব ইলিং-এর সাবেক ডেপুটি মেয়র রূপা হক ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে ২০০৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০০৫ সালে লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চেশাম অ্যান্ড এমারশাম আসন থেকে লড়েন। গত বছরের ২ নভেম্বর লেবার পার্টি থেকে ইলিং সেন্ট্রাল ও অ্যাকটন পার্লামেন্টারি আসনে মনোনয়ন পান তিনি। পাবনার মেয়ে রূপা ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৯৩ সালে রাজনীতি, সমাজ বিজ্ঞান এবং আইনে গ্রাজুয়েশন করেন। কালচারাল স্টাডিজের ওপর ১৯৯৯ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। কিংস্টন ইউনিভার্সিটির সোসিওলোজির সিনিয়র লেকচারার রূপা হক-এর জন্ম লন্ডনের ইলিংয়ে ১৯৭২ সালে। ষাটের দশকে তার মা-বাবা ব্রিটেনে বসবাস শুরু করেন। তিনি ১৯৯১ সালে লেবার পার্টির সদস্য হন। তখন থেকেই তিনি বিভিন্ন নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থীদের জন্য ক্যাম্পেইন করেন। ২০০৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে, ২০০৫ ও ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থীদের জন্য ক্যাম্পেইনে বিশাল ভূমিকা রাখেন রূপা হক। ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান, সানডে অবজারভার, ট্রিবিউন প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলাম লেখেন। তার লেখা তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ইংলিশনেস, রেইস ও কমিউনিটি রিলেশন্সে লেবার পার্টির নীতিনির্ধারকদের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। টনি বেন এমপি ও প্যাট্রিশিয়া হিউট এমপির রিসার্চার হিসেবে কাজ করেছেন রূপা। বর্তমানে তিনি কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে সোসিওলোজি ও ক্রিমিনালজিতে লেকচারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রূপা হকের মতে, তার এলাকার বর্তমান এমপি কনজারভেটিভ দলীয় এমপি থেকে ভালো কিছু দিতে পারবেন জনগণকে।
ভোটাররা আমাকে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ ভোট দিয়েছেন : রুশনারা আলী
এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে আপনারা আমাকে অনেক সমর্থন, সহযোগিতা করেছেন। আপনারা আমাকে আবার এমপি নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেষ করতে পারব না। গত নির্বাচনের তুলনায় এবার দ্বিগুণ ভোট প্রদান করে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। ভোটার, সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষীদের উদ্দেশ্যে এভাবেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নির্বাচিত এমপি রুশনারা আলী তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মেয়ে রুশনারা আলী ২০১০ সালের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। এবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি নির্বাচিত হন লেবার পার্টি থেকে।
রুশনারার জন্ম সিলেটে ১৯৭৫ সালে ১৪ মার্চ। তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় সিলেটে। দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত এখানে পড়ে সাত বছর বয়সে তিনি বাবা-মার সঙ্গে পাড়ি জমান লন্ডনে। লেখাপড়া করেন পূর্ব লন্ডনের মালবারি গার্লস স্কুলে। পরে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে রাজনীতি, দর্শন এবং অর্থনীতিতে ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রথম বাঙালি এমপি। প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হয়েই তিনি লেবার পার্টির রাজনীতির সামনের কাতারে চলে আসেন। গত পাঁচ বছরে রুশনারা তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। কয়েক হাজারেরও বেশি বাসিন্দার হাউসিং, ইমিগ্রেশন, এন্টি-সোস্যাল বিহেভিয়ার ইত্যাদি মোকাবেলায় সহযোগিতা করেন। তিনি শ্যাডো ডিএফআইডি মিনিস্টারের দায়িত্ব পালন করেন লেবার পার্টির এমপি হিসেবে। পরে এডুকেশন মিনিস্টারের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় ব্রিটেনের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। লেবার পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে হাউস অব কমন্সের ১৩ সদস্যবিশিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ট্রেজারি সিলেক্ট কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ব্রিটেনের অর্থসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি তদারকি করাই হচ্ছে এই কমিটির প্রধান কাজ। টাওয়ার হ্যামলেট হাউসিং সমস্যার সমাধানেও তিনি ব্যাপক চেষ্টা চালান। তার লবিংয়ের ফল হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের নিউ হোমস বোনাস ফান্ডিং থেকে এই বারা ১৬৫ মিলিয়ন পাউন্ড লাভ করে। ডিএফআইডি মিনিস্টারের দায়িত্ব পালনকালে মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে তাদের কষ্টের চিত্র প্রথমবারের মতো পশ্চিমা বিশ্বের নজরে আনেন। তাছাড়া লেবাননে সিরিয়ানদের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে সেখানকার দুর্দশা লাঘবে ব্রিটিশ সরকার এবং জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সফর করেন কেনিয়ার খরা পীড়িত অঞ্চল। বাংলাদেশের জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক জনমত গড়ার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি। গার্মেন্ট কর্মীদের ন্যায্য বেতন এবং বাংলাদেশের বহুল আলোচিত গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। নো মোর ফ্যাশন ভিকটিম আন্দোলনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষকও রুশনারা। 2_2654782_265478

Developed by: