বন্দর খুলে দিতে জাতিসংঘের আহবান

ঢাকা, ১৫ মে- পাচারকারীদের নৌকায় কয়েক হাজার মানুষ সাগরে আটকে থাকার খবরে উদ্বেগ জানিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বন্দর ও সীমান্ত এই বিপদগ্রস্তদের জন্য খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন।

বৃহস্পতিবার তার মুখপাত্রের পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্দামান সাগর ও মালাক্কা প্রণালীতে যে সঙ্কট ঘনিয়ে উঠেছে তা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব শঙ্কিত। সেখানে কয়েক হাজার মানুষ পাচারকারীদের নৌকায় আটকা পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কয়েকটি দেশ তাদের সীমানায় এসব নৌকা ঢুকতে বাধা দিচ্ছে বলে প্রতিবেদন এসেছে, যা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।

সাগরে বিপদগ্রস্তদের সহায়তা করতে এবং যারা আসছে ‘তাদের জোর করে ফিরিয়ে না দেওয়ার নীতি’ সমুন্নত রাখতেও ওই অঞ্চলের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানান বান কি-মুন।

“যারা সাগরে বিপদে পড়েছেন, তাদের দ্রুত নৌকা থেকে নামিয়ে তীরে নিয়ে আসার এবং বিপদগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য বন্দর ও সীমান্ত খোলা রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।”

সম্প্রতি থাইল্যান্ডের জঙ্গলে পাচারকারীদের একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে অবৈধ অভিবাসীদের গণকবরের খোঁজ পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সমুদ্রপথে মানব পাচার নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।

এক সপ্তাহ আগে ইউএনএইচসিআরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা মানব পাচারের শিকার হয়েছে। এ সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।

ভাগ্য বদলাতে মাছ ধরার ট্রলারে করে বাংলাদেশিদের সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ায় চেষ্টার খবর প্রায়ই সংবাদপত্রের শিরোনামে আসছে। আর মিয়ানমারে জাতিগত বৈষম্যের শিকার রোহিঙ্গারাও দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন, যার সুযোগ নিচ্ছে পাচারকারীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে এই অবৈধ অভিবাসীদের নৌকায় তুলে পাচারকারীরা প্রথমে নিয়ে যাচ্ছে থাইল্যান্ডে। সেখানে জঙ্গলের মধ্যে তাদের কিছুদিন রেখে সুযোগ বুঝে আবারও নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়া উপকূলে।

থাই সরকার পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় এবং মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সরকার তাদের সমুদ্র সীমায় নজরদারি বাড়ানোয় অন্তত আট হাজার মানুষ মাঝ সমুদ্রে পাচারকারীদের নৌকায় আটকা পড়ে আছেন বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য।

মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী বৃহস্পতিবারও এরকম দুটি এবং থাই নৌবাহিনী একটি নৌযান তাদের জলসীমা থেকে গভীর সাগরের দিকে ঠেলে দেয়। এর মধ্যে একটি নৌকা ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে গিয়ে ডুবতে শুরু করলে স্থানীয় জেলেরা প্রায় আটশ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে তীরে পৌঁছে দেন।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরও এ ধরনের ‘পুশব্যাকের’ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সাগরে এই সঙ্কটকে একটি ‘আঞ্চলিক সমস্যা’ বিবেচনা করে সমাধানের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের বিবৃতিতে বলা হয়, “এ বিষয়ে একটি আঞ্চলিক সম্মেলন করার উদ্যোগের কথা মহাসচিব জানতে পেরেছেন এবং এ সমস্যার মূল উৎপাটনে একক ও যৌথ উদ্যোগ জোরদার করতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।”

Developed by: