সিলেটে বাম্পার বোরো কাটছেন কৃষাণীরা

IMG_0044-300x200সিলেট বিভাগের চার জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। পুরুষরা শহরে কাজে। ধানক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমেছে। কোনো উপায় না থাকায় কৃষানীরাই ধানক্ষেতে রোদেপুড়ে ধান কাটছেন। তলিয়ে যাওয়ার আগেই সিলেটে বোরো ধান ঘরে ওঠছে কৃষানীদের ঘামে-শ্রমে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অফিস সূত্র জানায়, এবার সিলেট বিভাগে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫২৯ হেক্টর। অর্জন হয়েছে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৫১৮ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বোরো ধান এখনো কাটা চলছে। হাওরে শতকরা ৮৮ ভাগ ও সমতলে ৬২ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আগেই এবার বোরো ধান ঘরে ওঠে যাচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, সিলেট জেলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩ হাজার ১৮৬ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে ৭৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ৭১ হাজার ৩২৪ মেট্রিক টন বোরো ধান। অর্জন এর চেয়ে বেশিই হবে। দেখা গেছে, সিলেট বিভাগে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর বোরো বেশি আবাদ হয়েছে। যে কারণে শিলাবৃষ্টি তেমন একটা ক্ষতি করতে পারেনি।
সরেজমিনে শাহপরাণ বাইপাস ধানক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, এখানে ফসলের মাঠে বৃষ্টির পানি স্থির হয়ে আছে। বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢলের পানি নদী হয়ে এই সব ক্ষেতে ওঠে ডুবু ডুবু অবস্থা। ধান গাছের ডগা ছুঁই ছুঁই পানি। আর সামান্য বৃষ্টি হলেই ধান পানিতে তলিয়ে যাবে। সেই ধান তলিয়ে যাওয়ার আগেই কৃষক পরিবারের নারীরা কেটে ঘরে তুলছেন। সারি বেঁধে একেকটি ক্ষেতে ধান কেটে আঁটি বানছেন নারীরা।
কড়া রোদে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম স্থানীয় বহর গ্রামের কৃষানী কুলসুমা বেগমের। জমির আলে দুপুরের খাবারের গাঁট। পুরুষের মতো ধান খেতে তিনি জমিতেই দুপুরের খাবার খাবেন। কুলসুমা জানালেন, তার স্বামী রহিম একজন রিকশা চালক। শহরে রিকশা চালিয়ে তিনি সংসার চালান। স্বামী ধান কাটলে সংসারের সন্ধ্যার বাজার হবে না। তাই নিজে পাশের বাড়ির আরও কৃষানীদের নিয়ে দলবদ্ধভাবে ধান কাটতে জমিতে নেমেছেন। এখানে তারা এক নারী অন্য নারীকে ধান কেটে সাহায্য করছেন।
দক্ষিণ সুরমার ডুবলির হাওরে গিয়ে দেখা গেল, পানি জমে গেছে ধান ক্ষেতে। পানি কালচে রঙ ধারণ করেছে। আরেকটু বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাবে ধান। ভাগ্যিস, রোদ ওঠেছে প্রখর। নিচে পানি, ওপরে হলদে ধান খেতে হলদে রোদ চকচক করছে। পাকা ধানে ছেয়ে গেছে বিস্তির্ণ মাঠ। পানির তলায় হাতড়ে হাতড়ে ধান কাটছেন কৃষকরা।
বদিকোনা গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া বলেন, হিলে (শিলা) কিছুটা ধানের ক্ষতি করছে। তবে, পানিত ডুববার আগে আগে আমরা ধান কাটিলাইরাম। আরও এক সপ্তাহ রইদ (রোদ) দিলে ধান কাটা শেষ হইযাইবো।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাদির উদ্দিন বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। শিলা বৃষ্টি সামান্য ক্ষতি করলেও তা পুষিয়ে নেওয়া গেছে বাড়তি বোরো আবাদে। তবু , ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’ ছবি:: বকুল আহমদ।।

Developed by: