বিশ্বের কয়েকটি স্থান আছে যে স্থানগুলোর মানুষরা দীর্ঘ জীবনের অধিকারী। এসব স্থানের মানুষদের নিয়ে বহু গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এতে জানা গেছে, এসব স্থানের মানুষের কয়েকটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এ লেখায় তুলে ধরা হলো তেমন কয়েকটি বিষয়। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে হাফিংটন পোস্ট।
১. আইকেরিয়া, গ্রিস
গ্রিসের এ অঞ্চলের মানুষকে দীর্ঘ জীবনলাভ করতে দেখা যায়। তাদের জীবনযাপন পর্যবেক্ষণ করলে পাওয়া যায় তারা রিলাক্স জীবনযাপন করে। যেমন তারা স্বাভাবিকভাবে ঘুম থেকে ওঠে (ঘড়ির অ্যালার্মে নয়), তাদের বাগানে কাজ করে, দুপুরে ঘুমায় এবং ঘুম থেকে উঠে খাবার খায়, সন্ধ্যার পর প্রতিবেশীদের সঙ্গে নীরব সময় কাটায় এবং ট্র্যাডিশনাল শারীরিক অনুশীলন করে (দৌড়, সাইক্লিং ও ক্রসফিট)।
এ অঞ্চলের মানুষরা যে খাবারগুলো খায় তার মধ্যে রয়েছে নিজস্ব বাগানের সবজি, সবুজ পাতাযুক্ত শাক ও প্রচুর জলপাই তেল (অলিভ অয়েল)। তাদের খাবারও সাধারণ। যেমন ছাগলের দুধ দিয়ে নাস্তা, ওয়াইন, সেগ টি বা কফি, মধু ও ব্রেড। এ ছাড়া তাদের দুপুরের খাবারে শিম, ডাল, ছোলা, আলু ও স্থানীয় মৌসুমী নানা সবজি থাকে। তাদের রাতের খাবারে থাকে রুটি ও ছাগলের দুধ। এ ছাড়া এ অঞ্চলের মানুষরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত হারবাল চা পান করতেও অভ্যস্ত (যেমন ওয়াইল্ড মিন্ট বা রোজম্যারি)।
২. ওকিনাওয়া, জাপান
জাপানের ওকিনাওয়া অঞ্চলেও দীর্ঘজীবী মানুষের ছড়াছড়ি। এ অঞ্চলে মানুষ কারাতে অনুশীলন করে, প্রাকৃতিক পরিবেশে বাস করে এবং আধ্যাতিক নানা বিষয় চর্চা করে। বংশানুক্রমে তারা নানা স্বাস্থ্যকর বিষয় শিশুদের শেখায়।
ওকিনাওয়ায় মানুষের দীর্ঘ জীবনের কারণ অনুসন্ধানে তাদের জীবনযাপন পর্যবেক্ষণ করেছেন বেশ কিছু বিদেশি। এতে অঞ্চলের মানুষের ভিন্ন ধরনের খাবার ও জীবনযাপনের নমুনা পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে রয়েছে ভাত ও টফু (সয়াবিনের একটি খাবার)। এ ছাড়া বাঁশের কচি ডগার তরকারি, সামুদ্রিক লতা-পাতার তরকারি, আচার, শুকরের ভুড়ির অংশবিশেষ এবং ছোট কেক থাকে তাদের খাবারের তালিকায়। এ অঞ্চলের মানুষের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের হারও খুবই কম। প্রতি সপ্তাহে তিনটি সার্ভিস-এ মাছ খায় এ অঞ্চলের মানুষরা। তাদের খাদ্যতালিকায় থাকে দানাদার শস্যের খাবার, সবজি ও সয়াবিনের বিভিন্ন পণ্য। এ ছাড়া তারা অক্টোপাস ও স্কুইডের খাবার খায় এবং টউরিন পান করে।
৩. সার্ডিনিয়া, ইটালি
ইটালির সার্ডিনিয়া অঞ্চলের মানুষরাও বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘজীবী জনগোষ্ঠী। তারা প্রতিদিন কয়েক মাইল করে হাঁটাহাঁটি করে। এতে তাদের শরীর ফিট থাকে। এ ছাড়াও তাদের মাঝে কয়েকটি সামাজিক চল রয়েছে যেমন পরিবারকে গুরুত্ব দেওয়া, বয়স্কদের মানসম্মান করা, হাঁটা ও বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি করা।
এ অঞ্চলের মানুষ খাবারের ক্ষেত্রে সবজিকেই প্রাধান্য দেয়। গাজর, টমেটো ইত্যাদি সবজি ছাড়াও তারা ছাগলের দুধ ও পনির খায়। এ ছাড়া মটরশুটি, কার্বহাইড্রেট ও বার্লি থেকে তৈরি খাবার তারা পছন্দ করে।
৪. লমা লিন্ডা, ক্যালিফোর্নিয়া
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লমা লিন্ডা এলাকাও দীর্ঘ জীবনযাপনের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলের মানুষ অন্যদের তুলনায় গড়ে ১০ বছর বেশি বাঁচে। এ জন্য তাদের জীবনযাপনও গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেন। এতে দেখা যায়, তারা নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করে, প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে সময় ব্যয় করে, অন্যদের সাহায্য করে, প্রত্যহ তাড়াতাড়ি হালকা রাতের খাবার খায় ও প্রচুর পানি পান করে। এ অঞ্চলের মানুষরা যেসব খাবার খায় তার মধ্যে সবজির আধিক্য রয়েছে। এ ছাড়া তারা দানাদার খাবার, ফলমূল, বাদাম ও মাছ খায়। প্রাকৃতিক চিনি তাদের প্রিয়।