জনপ্রশাসন মন্ত্রী হলেন সৈয়দ আশরাফ

8ca41b96f27580de62c6801b103b7f33জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন সদ্য এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি পাওয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরইমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
গত ৯ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সৈয়দ আশরাফকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। আর এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে।
এরপর দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সৈয়দ আশরাফের রাজনীতিতে থাকা না থাকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। এছাড়া অাওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতারাও তার সঙ্গে কথা বলেছেন।
দলীয় সাধারণ সম্পাদককে দপ্তরবিহীন করার সিদ্ধান্তে অনেকেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি। অন্যদিকে আবার তাকে দপ্তরবিহীন করার জন্য দলের একটা অংশ অনেকদিন ধরে কাজ করেছে। অনেকে বলছিলেন, রাজনীতি থেকেই চলে যেতে পারেন সৈয়দ আশরাফ।
তবে, দপ্তরবিহীন করার পর গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ডেকে নিয়ে তার সাথে একান্তে আলাপ করেছেন। এ বৈঠকের সময়েই প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফকে যেকোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে আহ্বান জানান বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে আশরাফ এখন যেভাবে আছেন, সেভাবেই থাকতে চান বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইফতারের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোন করে আবারও সৈয়দ আশরাফকে গণভবনে ডেকে নেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা তাঁরা একান্ত বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে এ বৈঠকের পরই তাঁর পূর্বনির্ধারিত লন্ডন যাত্রা স্থগিত করেন তিনি।
সর্বশেষ বুধবারও প্রধানমন্ত্রী আশরাফকে গণভবনে ঢেকে নিয়ে কথা বলেছেন।
বুধবারও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আশরাফের বেইলি রোডের বাসভবনে গিয়ে দেখা করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ কয়েকজন সাংসদ তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। এ ছাড়াও সৈয়দ আশরাফের নির্বাচনী এলাকার বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী তাঁর সঙ্গে দেখা করেন।
এছাড়া লন্ডন থেকে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানাও সৈয়দ আশরাফের সাথে কয়েকবার টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।
এরপর থেকেই গুঞ্জন ওঠে, সৈয়দ আশরাফের প্রত্যাবর্তনের। উঠে আসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নাম। জনপ্রশাসন, পররাষ্ট্র কিংবা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন তিনি, এমন খবরও প্রকাশ হয়। আবার অনেক সংবাদমাধ্যম সৈয়দ আশরাফকে উপপ্রধানমন্ত্রী করা হতে পারে বলেও খবর প্রকাশ করে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রভাবশালী এই নেতাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার মধ্য দিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়।
উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সাংসদ আশরাফ ছাত্রজীবনে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জেলখানায় তাঁর পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর লন্ডনে চলে যান আশরাফ। তাঁর স্ত্রী সন্তানরা এখনো লন্ডনেই বসবাস করছেন। সেখানেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হন সৈয়দ আশরাফ। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২০০৯ সালে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ওয়ান ইলেভেনের পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তাঁকে দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। পাঁচ বছর ওই মন্ত্রণালয় চালানোর পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন শেষে তাঁকে ফের একই মন্ত্রণালয় দেয়া হয়।

Developed by: