যুক্তরাজ্য বিএনপির নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষোভ

001গোলাম মোস্তফা ফারুক, লন্ডন থেকে যুক্তরাজ্য বিএনপির ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর নতুন করে দলের মধ্যে চলছে অসন্তোষ। দক্ষ ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দের লোক ১০১ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। এক্ষেত্রে আঞ্চলিকতার চাপ রয়েছে। আর ত্যাগী নেতারা বাদ পড়ায় খোদ দলের সিনিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে তার পরামর্শও উপেক্ষা করা হয়েছে।
দলের সিনিয়ার সহ-সভাপতি তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন। সেখান থেকে তিনি দল পরিচালনায় যেমন দেশে পরামর্শ দিচ্ছেন, তেমনি যুক্তরাজ্য কমিটিতে প্রধান প্রধান পদে কে থাকবে কে বাদ পড়বে তার অনুমতি ছাড়া সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। নতুন কমিটি গঠনের পূর্বে যদিও বলা হয়েছিল, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরের কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করে তাদের পরামর্শ নিয়ে যুক্তরাজ্য কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। বৈঠক করেছেন ঠিকই কিন্তু নেতাদের অধিকাংশের অভিযোগ, তাদের পরামর্শ কিংবা মতামতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি বিএনপি যুক্তরাজ্য কমিটিতে।এর আগের কমিটিতেও দলের ত্যাগী ও নিষ্ঠাবানদের বাদ দিয়ে তারেক রহমান নিজের একক সিদ্ধান্তে সাইস্তা চৌধুরী কুদ্দুসকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে কয়সর এম আহমদকে বসিয়েছিলেন।
তখনও দলের গঠনতন্ত্র কিংবা জোনাল কমিটির ভোটাধিকার না নিয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগ তার প্রতি ছিল। তেমনি চলতি নতুন কমিটি বাছাইয়ে তিনি একক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে কমিটিতে ১০১ সদস্য অন্তর্ভুক্তিতে সভাপতি এমএ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদের তত্ত্বাবধানে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি চলছে। আর এতেই নেতাকর্মীরা বেশি হতাশা ব্যক্ত করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, কমিটিতে নিজেদের পছন্দের লোকজন বেশি স্থান পাচ্ছেন। বিশেষ করে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমদের সুনামগঞ্জ জেলার লোকজন বর্তমান কমিটিতে বেশি স্থান পাচ্ছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনুগতরাই সুযোগ পাচ্ছেন। এতে পদাধিকারীদের অতীত রাজনৈতিক পরিচয়ও জানা হচ্ছে না। অতীতে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক ছিল না বরং যারা আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত তারাও স্থান পাচ্ছেন ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে। যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, আঞ্চলিকতার ছায়া এত ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে যে, নতুন কমিটির ৩৭ জন সদস্যই সুনামগঞ্জ জেলার। উপদেষ্টা কমিটিতেও ২২ জন স্থান পেয়েছেন এ জেলার। সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি এ জেলাতে হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে তাদের ধারণা। অপরদিকে এসব নেতা আরও অভিযোগ করেন, অতীতে দলের একজন সিনিয়র নেতা তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করেছেন। এ নিয়ে প্রত্যক্ষ প্রমাণও তারেক রহমানের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল। সেই নেতা এখনও তার পুরাতন দেয়া-নেয়া ব্যবসায় সক্রিয়। যুক্তরাজ্যে বিএনপির সিনিয়র নেতারা কর্মীদের এ ক্ষোভ মিটাতে ঘন ঘন বৈঠক করে যাচ্ছেন। আরও কয়েকজন পদত্যাগের হুমকি দেয়ায় তা সামাল দিতে ব্যস্ত সিনিয়র নেতারা।
তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে এখনও তিনি দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন বলে তারা অভিযোগ করেন। এর আগে একই অভিযোগে তাকে আহ্বায়কের পদ থেকে তারেক রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেই সরিয়ে দেন। এ নিয়ে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নানা কথা চাউর হতে থাকে। কয়েকটি অভিযোগও পড়ে তার বিরুদ্ধে তারেক রহমানের হাতে। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওই নেতাকে বাদ দেন। বর্তমানে আবার তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করায় নেতাকর্মীরা হতাশ। নাম ভাঙিয়ে ফায়দা নিতে গিয়ে বেকায়দায় পড়া এ নেতা কিছুদিন যুক্তরাজ্য বিএনপি কার্যক্রমে নিস্তব্ধ ছিলেন। কিন্তু দলে তার ত্যাগী অবদান রয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্য বিএনপির পুরাতন নেতাদের অন্যতম।
এদিকে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে যোগ্য স্থানে পদ না পেয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী বিপ্লব কুমার পোদ্দার ও রাজিব আহমদ পদত্যাগ করেছেন। তাদের মতে ত্যাগী যোগ্যদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত নবাগত লোকদের স্থান দেয়া হয়েছে কমিটিতে। অপরদিকে সম্প্রতি তারেক রহমানের উপদেষ্টা পদে থাকা তমিজ উদ্দিনকে আবারও পদ দেয়ায় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। তমিজ কিছুদিন আগে প্রতারণার দায়ে লন্ডন পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছিলেন। তখন তারেক রহমান তাকে বহিষ্কার করেন। তার পূর্ণ নিয়োগে দলে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ নেতা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন এবং তার আইনি প্রাকটিস সনদ বাতিল করা হয়েছে। নতুন কমিটি নিয়ে হতাশা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে তারেক রহমানও ক্ষুব্ধ। দলকে গুছিয়ে আনার প্রাণপন চেষ্টা করেও তিনি কিছু লোভী সুযোগসন্ধানী নেতাদের খপ্পর থেকে যেন বেরিয়ে আসতে পারছেন না।
আরও জনা দশেক নেতা কাক্সিক্ষত পদ না পেয়ে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। তাদের সুবিধাজনক পদে স্থান দিতে তদবির চলছে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে।

Developed by: