প্রেমিকার চোখের প্রশংসায় বুঁদ বন্ধুটিকে বকে বকে উদ্ধার করি, বলি অমন ন্যাকা কতো দেখেছি! কিন্তু এটা যে এখন সত্যি প্রমাণ হয়ে গেলো! আসলেই কারও চোখের দিকে একটানা তাকিয়ে থাকলে মাতাল হয়ে যায় মানুষ।
মাতাল হবার জন্য এলএসডি জাতীয় ড্রাগের কী দরকার, যখন কারও চোখই যথেষ্ট? দেখা গেছে মন দিয়ে কারও চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলে মানুষের মনের মাঝে বিচিত্র সব পরিবর্তন আসে, যা অনেকটা মাদকতার মতোই মনে হয়।
ইটালির ইউনিভার্সিটি অফ আরবিনোর ভিশন রিসার্চার জিওভান্নি কাপুটোর গবেষণা থেকে এই তথ্য উঠে আসে। তবে চোখে চোখে তাকানোর ব্যাপারটা নিয়ে তার এটিই প্রথম গবেষণা নয়। কয়েক বছর আগে কাপুটো ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে ১০ মিনিট ধরে আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেন। বেশিরভাগের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঘরের আলো কম থাকায় এক মিনিটের মাথায় তারা ভুলভাল দেখা শুরু করেছেন। তারা নিজেদের চেহারা বিকৃত হতে দেখেন, পশুর মতো হয়ে যেতে দেখেন এমনকি মৃত স্বজনদের মুখও দেখতে পান। গবেষকেরা এই ঘটনাকে বলেন “strange-face illusion”। কিন্তু আয়নার বদলে অন্য কারও চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলে আরও উদ্ভট ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।
কাপুটোর সাম্প্রতিক এই গবেষণা প্রকাশিত হয় Psychiatry Research জার্নালে। ৪০ জন মানুষকে নিয়ে জোড়া বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর প্রতি জোড়াকে কম আলোয় একটি রুমে চেয়ারে বসতে দেওয়া হয় পরস্পরের এক মিটার দুরত্বে। আলো এমন ছিলো যে একজন আরেকজনের মুখ দেখতে পাবেন। কিন্তু রঙের ব্যাপারটা ঠিক বোঝা যাবে না।
এর মাঝে অর্ধেক মানুষের জোড়া মুখোমুখি বসেন, বাকি অর্ধেক বসেন পিঠে পিঠ লাগিয়ে দেয়ালের দিকে মুখ করে। এই গবেষণায় কী হচ্ছে, তা এদেরকে জানানো হয়নি।
এভাবে ১০ মিনিট থাকার পর অংশগ্রহণকারিরা এই রুমে তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করেন। যারা মুখোমুখি বসেন তাদের মনে হয় তারা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি রঙ দেখছেন। শুধু তাই নয়। তাদের মনে হয় তারা যেসব শব্দ শুনছেন সেগুলোও বেশি তীব্র। তাদের মনে হয়েছিলো সময় থেমে আছে এবং তারা ঘোরের মাঝে চলে যান। শুধু তাই না, ৯০ শতাংশ মানুষ বলেন তাদের পার্টনারের মুখ বিকৃত হয়ে যাচ্ছিলো বলে মনে হয়। ৭৫ শতাংশ বলেন সেই মুখ দানবীয় মনে হয়। ১৫ শতাংশ বলেন পার্টনারের মুখে নিজের মৃত আত্মীয়ের ছায়া দেখেন তারা।
এসব ঘটনায় বোঝা যায় গবেষণায় অংশ নেওয়া মানুষদের মন বাস্তবের গণ্ডী পার হয়ে গেছিলো এ সময়ে। আমরা যখন মন দিয়ে একটি বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকি, তখন এর আশেপাশের কিছু আমাদের মাথায় থাকে না। এটাকে মাঝে মাঝে বলা হয় Troxler fading। এই গবেষণায় যদি এমন ঘটনা ঘটতো, তবে তারা পার্টনারের মুখটাকে ভাসা ভাসা দেখতেন, এমন বিকৃত দেখতেন না। কিন্তু মুখাবয়বের বিকৃতি দেখা গেছে বলে মনে করা হচ্ছে এখানে এমন কোনো ঘটনা আছে যা মানুষের মনকে মাদকের মতো প্রভাবিত করে এবং হ্যালুসিনেশন দেখা যায়।