নারী কনস্টেবলের প্রেমের ফাঁদে ধরা পড়লেন দুর্ধর্ষ এক ডাকাত

3ece9255de8bf403c4a045fcc907d56dঢাকা, ০৩ আগষ্ট- নয় মাস পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে ছিলেন ভারতে। তবে প্রেমের মায়াকে ফাঁকি দিতে পারলেন না। ধরা পড়লেন প্রেমের ফাঁদেই। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) চালে আটকা পড়লেন নূর মোহাম্মদ। তার সঙ্গে ধরা পড়েছেন আরও চার ব্যক্তি।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায় গেছে, গত বছর ১১ নভেম্বর বিকালে মোহাম্মদপুরের ১৩ নম্বর সাত মসজিদ হাউজিংয়ের আক্তার হোসেন ওরফে আক্তার কোম্পানির মালিকের বাসায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আক্তারের স্ত্রী সেলিনা আক্তার, মেয়ে লিমন আক্তার মীম আর ছেলে তানভীর হোসেনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা-মুখ বেঁধে ৮৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। প্রায় ৯ মাস পর এই ডাকাতির ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে ডিবি।

রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে নিজেরাও চমকে ওঠেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। তারা বলেন, পুরো ডাকাতির নেপথ্যে ছিলেন আক্তার হোসেনের ছোট ভাই শামীম। তার পরিকল্পনায় ডাকাতিতে নেতৃত্ব দেন আক্তার কোম্পানির বিশ্বস্ত কেয়ারটেকার নূর মোহাম্মদ। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে গ্রেফতারের পর ডাকাতির বিস্তারিত বিবরণ দেন তারা। পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন, বিপুল স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকার ভাগাভাগির কথাও তারা স্বীকার করেন।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, এ ঘটনায় সেলিম, ফারুক, রিয়াজ নামে অপর ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের হেফাজত থেকে ডাকাতি করা নগদ ১ লাখ ৭ হাজার টাকা, একটি স্বর্ণের চেইন ও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দুটি চাপাতি ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, ‍সূত্র ছাড়াই ডাকাতির ঘটনাটির রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দাদের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। এখন ডাকাতির মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

ডিবির ডাকাতি দস্যুতা ও ছিনতাই প্রতিরোধ টিমের এক সদস্য বলেন, মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হলেন আক্তার। তারা পাঁচ ভাই। নাজির হোসেন ওরফে শামীম চতুর্থ। ব্যবসায়ী আক্তার কোম্পানির একমাত্র মেয়ের বিয়ের জন্য প্রচুর স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করেন। খরচের জন্য ঘরে রাখেন ১৩ লাখ টাকা। এই বিষয়টি পরিবারের সদস্য হিসেবে ভাইরা জানত। ছোট ভাই শামীম এই টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি পরামর্শ করেন বাড়ির কেয়ারটেকার নূর মোহাম্মদের সঙ্গে। নূর ডাকাতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেন। এজন্য সেলিম, রিয়াজ, ফারুক ও সাহাবুদ্দিনকে জোগাড় করা হয়।

তিনি জানান, পরিকল্পনা মতো ঘটনার দিন বাসার সামনে ভাইকে পাহারার দায়িত্ব নেন শামীম। বাসার পাশে আক্তার কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যালয়। ডাকাতির সময় আক্তার যেন বাড়িতে প্রবেশ না করে এজন্য তাকে নানা অজুহাতে অফিসে বসিয়ে রাখা হয়। নূর মোহাম্মদ বাড়ির সামনে অবস্থান নেন। চতুর্থতলায় আক্তার কোম্পানির ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিংবেল টিপে ডাকাতি করে সেলিম, রিয়াজ ও ফারুক।

স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, আক্তার কোম্পানির ছেলে তানভীর দরজা খুলে দিতেই তাকে প্রথমে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতরা। পরে স্ত্রী সেলিনা ও মেয়ে মীমকেও জিম্মি করে হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলে। পরে আলমারি খুলে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় আক্তার কোম্পানি তার কর্মচারী সাহাবুদ্দিনকে বাড়িতে পাঠায় কাজে। সাহাবুদ্দিন বিপদে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিক বুদ্ধিতে সাহাবুদ্দিনকেও বেঁধে রাখার পরিকল্পনা করা হয়। ডাকাতির ঘটনার পর আক্তার কোম্পানির পক্ষে শামীম, নূর মোহাম্মদ ও সাহাবুদ্দিন থানায় যায় মামলা করতে। কিন্তু সাহাবুদ্দিনের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে কোনও তথ্য আদায় করতে পারেনি বলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

জানা যায়, চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়। তারা অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেন, ডাকাতির ঘটনার কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে চলে যার নূর মোহাম্মদ। গোয়েন্দারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। ভারতের কলকাতা ও ব্যাঙ্গালোরে কাটান ৯ মাস। গোয়েন্দারা পরিবারের ও নির্দিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানতে পারেন। তাদের কাছ থেকে ভারতীয় মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ডিবি। এরপর এক নারী কনস্টেবলকে দিয়ে প্রেমের ফাঁদ পাতা হয়। ওই নারী কনস্টেবল তার পরিচয় গোপন করে প্রায় সাত মাস তার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করেন।

এক পর্যায়ে নারী কনস্টেবলের সঙ্গে দেখা করতে চান নূর মোহাম্মদ। এই ঈদে তিনি ভারত থেকে ঢাকায় আসেন। এভাবে নূর মোহাম্মদ ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বের হয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার যায়েদ শাহরিয়ার জানান, টাকা ও স্বর্ণ ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে নূর মোহাম্মদ ইন্ডিয়া পালিয়ে যায়। শামীম নিজের ভাইয়ের বাসায় ডাকাতির কথা বলে ভাগ বেশি চায় আর নূর মোহাম্মদ সেটি মানতে চায়নি।

গোয়েন্দারা জানান, নূর মোহাম্মদের স্বর্ণালঙ্কারগুলো কোলকাতায় নিয়ে বিক্রি করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। অন্যরা ঢাকার যেসব দোকানে বিক্রি করেছে সেসব দোকানও চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান ডিবির এক কর্মকর্তা।

আক্তার কোম্পানি জানান, তার শামীম ছয় বছর সৌদি আরবে ছিল। কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে আসে। দেশে এসে সে মাদকাসক্ত ও খারাপ লোকজনের সঙ্গে মেশা শুরু করে।

Developed by: