সিলেটের বিশ্বনাথে কবর থেকে লাশ উধাও

22সিলেটের বিশ্বনাথে নিহত দিনমজুর বৃদ্ধ আব্দুল মনাফের লাশ কবর থেকে উধাও হয়েছে। তাও লাশ দাফনের ২মাস ১৩দিন পর। আদালতের নির্দেশে ২বার ময়না তদন্তের জন্য কবর খুড়তে গেলে লাশ পাওয়া যায়নি। কবরে লাশের পরিবর্তে পাওয়া গেছে কাফনের কাপড়,নীল রংয়ের পলিথিন ও প্লাস্টিকের সুতলি। মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে কবর খোড়ার দৃশ্য দেখতে গেলে এমন কান্ড দেখা যায়। এই দৃশ্য দেখে হাজার হাজার মানুষ স্তম্ভিত হয়ে

ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এলাকাবাসী এ ঘটনার সুষ্টু বিচার দাবী করে মিছিল করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ বৃদ্ধকে যারা হত্যা করেছে তারা ২য় বার ময়না তদন্তের সংবাদ পেয়েই লাশ কবর থেকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে। এ ঘটনায় দুইজন গ্রেফতার হলেও পরবর্তীতে তারা জামিন লাভ করে। এদিকে, কবর খোড়ে লাশের কোন অস্তিত্ব না পাওয়ায় অস্থির হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নিহত আব্দুল মনাফের ভাই আব্দুল হাসিম।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মৃত জবান আলীর পুত্র আব্দুল মনাফ (৫৫) গত ১৬ মে বিকেল থেকে নিখোঁজ হন। এরপর ১৮ মে সন্ধ্যায় নিহতের বসত ঘরের সম্মুখের গোয়াল ঘরে র্দুগন্ধ পেয়ে নিখোঁজ আব্দুল মনাফের স্ত্রী সেখানে গিয়ে দেখতে পান তার স্বামীর গলায় দঁড়ি লাগানো হাটু ভাঁজ করা অবস্থায় বেড়ার সাথে টেস দেওয়া ও ১টি কাটের তক্তা দিয়ে আড়াল করে রাখা। তখন তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন এবং খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে এসে লাশ উদ্ধার করে। পরদিন আব্দুল মনাফকে হত্যার অভিযোগে গ্রামবাসী একই গ্রামের উস্তার আলী ও তার ছেলে মিন্টু মিয়াকে আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় নিহতের

ভাই থানায় তাৎক্ষণিকভাবে একটি দরখাস্ত করেন। যাহা বিশ্বনাথ থানায় অপমৃত্যু জিডি (জিডি নং-০৭) হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। অত:পর নিহতের সুরতহাল রিপোট ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট এর ভিত্তিতে আব্দুল মনাফ আত্মহত্যা করেছেন মর্মে থানা পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। পর আব্দুল মনাফকে হত্যার অভিযোগে তার ভাই আব্দুল হাশিম বাদি হয়ে ৫জনের নাম উল্লেখ ও আরো ৪/৫জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে গত ২৫ মে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৩ এ একটি দরখাস্ত মামলা দায়ের করেন (বিশ্বনাথ সি.আর মামলা নং- ১৪১/২০১৫)। ওই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- হরিপুর গ্রামের উস্তার আলীর পুত্র টিটু মিয়া (২৫), তার পিতা উস্তার আলী (৫৫), ভাই মিন্টু মিয়া (২২), লুৎফুর (৩২) ও একই গ্রামের মৃত মজর আলীর পুত্র কবিরুল (৩৫)।

নিহত মনাফের ভাই আব্দুল হাসিম হলফনামা সহকারে আদালতে অভিযোগ করেন, ভিকটিমের ময়না তদন্ত করার প্রমাণ (লাশ কাটার কোন চিহৃ) ভিকটিমের শরীরে পরিলক্ষিত হয়নি। তাই পুরনায় ভিকটিমের ময়না তদন্তের প্রার্থনা করে অভিযোগ করেন, আব্দুল মনাফের লাশ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য ফরেনসিক বিভাগে প্রেরণ করা হলে ময়না তদন্তকারী ডাক্তার ইফফাত ফারুকী আসামীদের দ্বারা প্রভাবিত ও বশীভূত হয়ে কোন ধরনের ময়না তদন্ত না করেই লাশ পরিবারের কাছে সমজিয়ে দেন। দাফনের সময় নিহতের শরীরে কোন ধরনের ময়না তদন্তের প্রমাণ পরিলক্ষিত হয় নাই।

পরে বাদীসহ এলাকাবাসী এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে ভিকটিম মনাফের লাশ পুনরায় ময়না তদন্ত করা জন্য গত ১৭ জুন আদেশ প্রদান করেন সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। একই সাথে জেলহাজতে আটক অভিযুক্ত পিতা ও পুত্র কে পুনরায় ময়না তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল না হওয়া পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে জামিন প্রদান করেন আদালত। এরপর ৫জুলাই এর মধ্যেও ময়না তদন্ত না হওয়ায় গত ২৬জুলাই পুনরায় ময়না তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। ঔ আদেশে আগামী ১০ আগষ্টের মধ্যে পুনরায় ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতকে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হলে গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিহত মনাফের লাশ উত্তোলনের জন্য কবর খোড়া হয়। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, সিভিল সার্জন, মেডিকেল অফিসার, পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকবৃন্দ সহ এলাকার কয়েক শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে খোড়া হয় আব্দুল মনাফের কবর। কিন্ত কবর খোড়ে অবাক হয়ে যান উপস্থিত সকলেই। কবরের ভিতরে লাশের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এদিকে নিহত মনাফের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, আদালত লাশের পুনরায় ময়না তদন্তের নির্দেশ প্রদান করলে অভিযুক্তরা কবর থেকে আব্দুল মনাফের লাশ চুরি করেছে বলে ধারনা করছি।

লাশ উত্তোলন করতে আসা সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডাঃ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশে লাশটি পুনরায় ময়না তদন্তের জন্য স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আমরা আজ কবর খোড়ি। কিন্ত কবরের ভিতরে লাশের কোন অস্তিত্ব পাওযা যায়নি।

নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও বিশ্বনাথ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুহেল মাহমূদ বলেন, আদালতের নির্দেশে আমরা লাশ কবর থেকে উত্তোলনের জন্য আজ কবর খোড়া হয়। কিন্ত করবে লাশের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন ।

Developed by: