সাকা-মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

saka_mujahid_175067একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

শনিবার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আলাদাভাবে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে সমকালকে নিশ্চিত করেছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন ও মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম।

এর আগে রাতে মানবতাবিরোধী এ দুই অপরাধীর প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

এ নিয়ে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর হলো। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে। এরপর ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল ফাঁসিতে ঝোলানো হয় দলটির আরেক সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে। তবে দুজনের কেউই প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি।

সন্ধ্যায় নিরাপত্তা জোরদারের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি। শেষ দেখা করতে রাত ৯টার দিকে সাকা চৌধুরীর স্ত্রী-ছেলেসহ পরিবারের সদস্যরা কারাফটকে পৌঁছান। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে যান মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরাও।

গত বুধবার সাকা চৌধুরী (৬৬) ও মুজাহিদের (৬৭) ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে তাদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রাতে তা পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ওই রাতেই সাকা ও মুজাহিদকে রায় পড়ে শোনানোর পর প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলেও সে সময় কিছু জানাননি তারা।

কারা কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, শনিবার সকালে ঢাকা জেলা প্রশাসনের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করে প্রাণভিক্ষার আবেদনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত জানতে চান।

পরে দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন। এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও সে সময় জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী।

এরপর সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সাকা ও মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন দুটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে তা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়।

তবে সাকা ও মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে। সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী তার স্বামীর প্রাণভিক্ষার আবেদনের খবরকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলে বর্ণনা করেন।

এদিকে, মুজাহিদের ছেলে আলী আহম্মেদ মাবরুর দুপুরে বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই।’ এছাড়া রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে মুজাহিদের আবেদনের খবরটিকে ‘বিভ্রান্তিকর ও অসত্য’ বলে দাবি করে তার দল জামায়াতে ইসলামীও।

তাদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, আপিল বিভাগের রায়ের পর তারা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তা দেয়া হয়নি।

স্বাধীনতার ঊষালগ্নে বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং ফরিদপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ একাত্তরে আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে মুজাহিদের আপিল আংশিক মঞ্জুর করে চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আদালত। পরে এই রায় রিভিউয়ের আবেদন করে আসামিপক্ষ।

অন্যদিকে, ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। আপিলে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।

সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির সাজা বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর ওই রায় রিভিউয়ের জন্য আবেদন করেন তারা।

এরপর গত ২০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন চেম্বার আদালত ওই আবেদন শুনানির জন্য ২ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেন। পরে সাকা চৌধুরীর আইনজীবীর সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির দিন ১৭ নভেম্বর পুনর্নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ। ১৭ নভেম্বর শুনানি শেষে আদালত ১৮ নভেম্বর (বুধবার) রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার আদালত সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের রিভিউ খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।

Developed by: