‘বন্দে মায়া লাগাইছে’, ‘গাড়ি চলেনা চলেনা চলেনারে’ ‘তুমি বিনে আকুল পরাণ থাকতে চায়না ঘরেতে’ ইত্যাদি অসংখ্য জনপ্রিয় গানের অমর স্রষ্টা বাউল শাহ্ আব্দুল করিমের শততম জন্মদিন ছিল রবিবার। এ উপলক্ষে নগরীর রিকাবীবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় শাহ্ আব্দুল করিম জন্ম শতবর্ষপূর্তী উৎসব।
শাহ্ আব্দুল করিম জন্মশতবর্ষ উৎসব উদযাপন পর্ষদ ও প্রথম আলোর সার্বিক সহযোগিতায় আয়োজিত উৎসব শুরু হয় বিকেল পৌনে ৫টায়। অডিটোরিয়ামের ‘মুক্ত প্রাঙ্গণে’ আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, কবি ও প্রাবন্ধিক ডঃ তপোধীর ভট্টাচার্য উদ্বোধন ঘোষণার আগে বাউল করিমের ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন বিপুল শর্মার নেতৃত্বে ছন্দ নৃত্যালয়ের এক দল শিল্পী।
এরপর উৎসব আয়োজক পর্ষদের আহ্বায়ক কবি শুভেন্দু ইমামের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা সভা। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ডঃ তপোধির ভট্টাচার্য। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক প্রথম আলোর সিলেট প্রতিনিধি ও আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব সুমন কুমার দাস। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট মেট্টোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যন্সেলার ডঃ সালেহ উদ্দীন আহমদ, কথা সাহিত্যিক-মিসেস স্বপ্না ভট্টাচার্য, কবি-কথা সাহিত্যিক কলামিস্ট এবং দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগি সম্পাদক আনিসুল হক, করিম তনয় শাহ্ নূর জালাল, কবি তুষার কর প্রমুখ।
বক্তারা বাউল করিমের সৃষ্টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন। তারা করিমের সৃষ্টিকে বুঝতে হলে গভীর দূরদৃষ্টির সাথে পড়া, শোনা এবং বিচার বিশ্লেষনের উপর জোর দেন।
সভাপতির বক্তব্যে শুভেন্দু ইমাম বলেন, অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী এ বাউলের গান এখন যে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ-আমেরিকায়। শুধু বাংলা ভাষায়ই নয়, ইংরেজী এবং ইতালিয়ান ভাষায়ও ভাষান্তর হয়েছে করিমের ওইসব রতœ।
আলোচনা সভা শেষে প্রায় এক ঘন্টা ওপার বাংলার সঙ্গীত গবেষক এবং প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী মৌসুমী ভৌমিক বাউল করিমের গান এবং গায়কী নিয়ে তার গবেষনার ফলাফল হলভর্তি দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, একই শিল্পীর গান অবস্থান এবং গায়ক ভেদে পরিবর্তন হতে পারে। প্রমাণ হিসাবে বাউল করিমের গাওয়া একই গান বিভিন্ন শিল্পীর গায়কীতে কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তার রেকর্ড বাজিয়ে শোনান তিনি। মৌসুমী নিজে অবশ্য যন্ত্রছাড়া দু’তিনটি গানের আংশিক গেয়ে শোনান। তবে যারা তার গান শুনতে গিয়েছিলেন তাদের রীতিমত হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে তার কণ্ঠে উতলা সুর উঠেনি বলে।
মৌসুমীর পর বাউল করিমের ভক্ত শিষ্যদের পরিবেশনায় জমে উঠে উৎসব। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কানায় কানায় ভরে উঠেছিল নজরুল অডিটোরিয়াম। এমনকি ভেতরে জায়গা না পেয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে অনেককে হা-পিত্যেশ করতে দেখা গেছে।
রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত যারা গান পরিবেশন করেন তারা হলেন- ফজলুল কবির তুহিন, সৌরভ সোহেল, হিমাংশু গোস্বামী, অংশুমান দত্ত অঞ্জন, লিংকন দাস, বিজন রায়, শামীম আহমদ, লাভলি দে, ধরনী দাস, সিরাজ উদ্দীন এবং শাহ নুর জালাল ও ১০ জন করিম শিষ্য।
এর আগে বেলা ২টায় অডিটোরিয়ামে বাউল করিমের জীবনের বিভিন্ন সময়ে তোলা অর্ধশতাধিক আলোকচিত্র নিয়ে এক আলোক চিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়।
এছাড়া দুটি স্টলে বাউল করিমকে নিয়ে রচিত বই এবং আনিসুল হক ও হুমায়ুন আহমদের বই বিক্রির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।