দশ মাসেও চালু হয়নি ওসমানীর রিফুয়েলিং স্টেশন, বিড়ম্বনা

সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দর নামের আগে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটি যুক্ত হয়েছিল প্রায় বছর পনের আগে, ১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর। কিন্তু এতো দীর্ঘ সময়েও ওসমানী বিমানবন্দরে সরাসরি আন্তর্জাতিক বিমান ফ্লাইট চালু হয়নি। রিফুয়েলিং স্টেশন না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক তকমা পাওয়ার পর ওসমানী বিমানবন্দরে রিফুয়েলিং স্টেশন না থাকায় সরাসরি ফ্লাইট চালু করা সম্ভবপর হয়নি। তবে প্রায় ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ওসমানীতে রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হয় গত বছরের মার্চ মাসে। এরপর প্রায় দশ মাস পেরিয়ে গেলেও স্টেশনটি চালু হয়নি। ফলে ওসমানী থেকে কোনোও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল করতে পারছে না। এতে করে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে বৃহত্তর সিলেটের অগণিত প্রবাসীদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এমএজি ওসমানী বিমাবন্দর ‘আন্তর্জাতিক’ তকমা পাওয়ার পর সিলেট-দুবাই এবং সিলেট-লন্ডন রুটে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হয়। কিন্তু ওসমানীতে রিফুয়েলিং স্টেশন না থাকায় কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায় সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। এতে করে বিপাকে পড়তে হয় বৃহত্তর সিলেটের লাখ লাখ প্রবাসীদেরকে। বৃহত্তর সিলেটের চারটি জেলার কয়েক লাখ লোক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যেই আছেন প্রায় ২০ লাখ লোক। এছাড়া যুক্তরাজ্যেও আছেন ৫ লাখের মতো প্রবাসী। অন্যান্য দেশ মিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখ সিলেটি প্রবাসী। ওসমানী বিমাবন্দর থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েন এই বিশাল সংখ্যক প্রবাসী। এছাড়া বাধাগ্রস্থ হয় এতদ্ব অঞ্চলের রপ্তানি বাণিজ্যও।

এমতাবস্থায় ওসমানী বিমাবন্দর থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালুর দাবিতে সিলেট জুড়ে দাঁনা বাঁধে আন্দোলনের। এমন প্রেক্ষিতে ২০১০ সালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত উদ্যোগ নেন ওসমানী বিমাবন্দরে রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণের। এই রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের দায়িত্ব পায় পদ্মা অয়েল কোম্পানি। প্রায় ৫১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিমানের ‘কনস্ট্রাকশন অ্যাভিয়েশন রিফুয়েলিং ফ্যাসিলিটিজ’ (স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা) নামে ২০১২ সালে শুরু হয় রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণের কাজ।

ওসমানী বিমাবন্দরের অভ্যন্তরে এবং দক্ষিণ সুরমাস্থ পুরাতন রেলস্টেশন এলাকার পদ্মা অয়েল ডিপোতে চলে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। পদ্মা অয়েল ডিপোতে তৈরী করা হয়েছে রিফুয়েলিং স্টেশনের রিজার্ভ স্টেশন। সেখানে রয়েছে দুই তলা অফিস ভবন, তিনটি স্টোরেজ ট্যাংঙ্ক, পাইপ লাইন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেস্ট হাউজ, গ্যারেজ, অফিসার্স রুম ও স্টাফ রুম, দু’টি ডিসপেনসার ও ফিল্টারিং ব্যবস্থা। এদিকে মূল স্টেশনটি বিমাবন্দরের অভ্যন্তরে নির্মাণ করা হয়। সেখানে রয়েছে তিনটি স্টোরেজ ট্যাঙ্ক, হাইড্রেন্ট লাইন, ডিপো রিফুয়েলার ডিসপেনসার ও ফিল্টার এবং জেট ফুয়েল পরিবহনের জন্য ব্রিজার অর্থাৎ, বড় ট্যাঙ্ক লরি।

এই রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি এই প্রকল্পের কাজ। ফলে নির্ধারিত বরাদ্দের চেয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজারে। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এই ব্যয় বাড়ার পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা। গত বছরের মার্চ মাসেই শেষ হয় এ প্রকল্পের কাজ।

কিন্তু যে উদ্দেশ্যে এতো বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যয় করে রিফুয়েলিং স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়েছিল, তা কোনো অংশেই পূর্ণ হয়নি। নির্মাণের পর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও উদ্বোধন হয়নি স্টেশনটির। রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমানী বিমানবন্দরের রিফুয়েলিং স্টেশনটি উদ্বোধন করার কথা ছিল। তবে হাইড্রেন রিফুয়েলিং সিস্টেমের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় ওই সময় উদ্বোধন পিছিয়ে যায়। পরে কাজ সম্পূর্ণ হলেও উদ্বোধন আর হয়নি। বহুল প্রতীক্ষিত এই রিফুয়েলিং স্টেশনটি উদ্বোধন না হওয়ায় বিড়ম্বনা পোহাচ্ছেন সিলেটের প্রবাসীরা। সিলেট থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু না থাকায় দেশে ফেরা কিংবা দেশ ত্যাগে ট্রানজিটের বিড়ম্বনা পোহাতে হয় তাদের। এছাড়া সরাসরি ফ্লাইট চালু না থাকায় সিলেট অঞ্চলের রফতানি বাণিজ্যও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পদ্মা অয়েল সিলেটের ব্যবস্থাপক সরদার মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘২৯ মার্চ উদ্বোধনের তারিখ পিছিয়ে যাওয়ার পর নতুন করে আর কোনো তারিখ আমাদের জানানো হয়নি।’

ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ বলেন, ‘রিফুয়েলিং স্টেশন ঠিক কবে নাগাদ উদ্বোধন হতে পারে, তা আমার জানা নেই। তবে এর কাজ সম্পূর্ণ শেষ।’

Developed by: