চিত্রনায়িকা মুনমুন কিংবা ময়ূরীর নাম কানে আসা মাত্রই চলচ্চিত্র প্রেমী অনেক দর্শক এখনও নড়েচড়ে বসেন। যদিও বাংলা চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার যুগ শেষ হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। তাই বলে দশর্কদের কাছে মুনমুন-ময়ূরী’র আবেদন কিন্তু ফুরিয়ে যায়নি। যার কারনে এখনও প্রেক্ষাগৃহের ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকারে তাদের দাপট চলছেই। যার প্রমাণ মিলেছে বাংলামেইলের সম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে।
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০০০ সালের দিকে মুনমুন-ময়ূরী’র মতো কয়েকজন নায়িকার মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার বিস্তার ঘটে। তখনকার চলচ্চিত্র মাত্রই কাটপিস ও রগরগে দৃশ্যের ছড়াছড়ি। তারপর অনেক ত্যাগ, আন্দোলন আর অশ্লীলতা বিরোধী অভিযানের মাধ্যমে শেষ হয় আমাদের চলচ্চিত্রের এক কালো অধ্যায়। সেই সঙ্গে এ অঙ্গন থেকে বিদায় নেন অশ্লীল ছবির সেই সব অভিনেতা অভিনেত্রী আর নির্মাতারা। কালের পরিক্রমায় অনেকে সুস্থ চলচ্চিত্রে ফিরে এলেও, ফিরে আসেননি মুনমুন, ময়ূরী, পলি কিংবা ঝুমকার মতো ‘অশ্লীল নায়িকা’ ট্যাগ প্রাপ্তরা।
সরকারের কঠোর মনোভাব আর চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের একান্ত চেষ্টার ফলে বর্তমানে অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণের এখন আর কোন সুযোগ নেই। তাই বলে এধরণের ছবির আবেদন কিন্তু এখনও ফুরিয়ে যায়নি। এক শ্রেণীর দর্শককে টার্গেট করে এখনও চলছে অশ্লীল চলচ্চিত্রের প্রদর্শন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছর দশেক আগে নির্মিত অশ্লীল চলচ্চিত্রগুলোই ডিজিটাল ফরমেটে রূপান্তর করে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে সেগুলোর প্রদর্শন চলছে।
বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার জন্য বাংলামেইল টিম রাজধানীর বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহ চষে বেড়ায়। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুরে ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমায় গিয়ে জানা যায়, এখানে ইস্পাহানী আরিফ জাহানের পরিচালনায় ‘গুন্ডা-দ্য টেরোরিস্ট’ ছবিটি প্রদর্শীত হচ্ছে। প্রেক্ষাগৃহটির দেয়ালেও রয়েছে সেই চলচ্চিত্রের বড় দুটি পোস্টার। কিন্তু আমাদের চোখ আটকে যায়, একই দেয়ালে সাঁটানো এ. জে রানার পরিচালনায় নির্মিত ‘জ্বলন্ত বিস্ফোরণ’ ছবির পোস্টারে। ছোট ছোট পোস্টারগুলোতে ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় বিতর্কিত নায়ক আলোকজেন্ডার বো ও পপির ছবি, তাদের বেশ ভুঁশা একেবারেই কুরুচিপূর্ণ।
বেশ কয়েক বছর আগে নির্মিত এই চলচ্চিত্র কোথায় প্রদর্শীত হচ্ছে কিংবা কে দেখবে? জানতে চাইলে আনন্দ সিনেমার একজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘এই ছবি আনন্দতে নয়, পাশের ছন্দ সিনেমায় চলতেছে। আর এই ছবি দেখার জন্যই তো দর্শক বেশি আসে।’
অনেকেই হয় তো জানেন না আনন্দ সিনেমার ঠিক পেছনেই ছন্দ সিনেমা নামে আরেকটি প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। যেখানে অধিকাংশ সময়ই অশ্লীল ও কাটপিস যুক্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এ সপ্তাহে চলছে এ. জে রানার পরিচালনায় নির্মিত ‘জ্বলন্ত বিস্ফোরণ’ ছবি। আশেপাশের দোকানিদের কাছ থেকে জানা যায়, অশ্লীল ও কাটপিস যুক্ত ছবি প্রর্দশনের কারণে এ প্রেক্ষাগৃহে সব সময়ই দর্শকের ভিড় লেগে থাকে। অন্যদিকে আনন্দ সিনেমায়ে যে ছবি প্রদর্শীত হয় তা অনেকটা শো অফের মতোই।
ফার্মগেটের এ অবস্থা দেখে আমরা হাজির হয়েছিলাম কাকরাইলের রাজমনি সিনেমা হলে। এখানেও একই অবস্থা। বাইরে থেকে যে কেউ ভাববে এখানে একটাই প্রেক্ষাগৃহ। কিন্তু টিকিট ঘরে প্রবেশের পরই জানা গেলো এখানে রাজিয়া নামে আরো একটি প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। যেখানে চলছে ‘বুকের পাটা’ নামের একটি অশ্লীল চলচ্চিত্র। শাহাদাৎ হোসেন লিটনের পরিচালনায় নির্মিত ছবিটির পোস্টারও কুরুচিপূর্ণ। যেখানে বিতর্কিত নায়িকা মুনমুন অভিনয় করেছেন।
রাজধানীর প্রেক্ষাগৃহে এমন ছবি প্রদর্শন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি সূত্র জানা যায়, অশ্লীল চলচ্চিত্রগুলোর সিংহভাগ বছর পাঁচেক আগে সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র লাভ করেছে। তারপর সেগুলোকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করা হচ্ছে।