সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত নাগা মরিচ এখন রফতানি হচ্ছে যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে। প্রতিবছর বিশেষ জাতের এই মরিচ রফতানি করে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মূদ্রা আহরিত হচ্ছে। ঝাল ও সুগন্ধের জন্য ২০০৭ সালে এ মরিচটি গিনেজ বুকে নাম লিখিয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, চাষীদের মাঝে সচেতনাবৃদ্ধি ও পরিকল্পিত চাষাবাদ হলে এ খাত থেকে বছরে শতকোটি টাকার উপরে আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘নাগা মরিচ’ মরিচের বিশেষ একটি প্রজাতি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি ‘কামরাঙা মরিচ’ ও ‘বোম্বাই মরিচ’ নামেও পরিচিত। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া ভারত ও শ্রীলংকায় প্রচুর পরিমাণে ‘নাগা মরিচ’ চাষ হয়ে থাকে। ভারতে এ মরিচ ‘ভূত জোলেকিয়া মরিচ’ ও শ্রীলংকায় ‘নাই মিরিচ’ নামে পরিচিত।
সিলেট তথা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে ‘নাগা মরিচ’ রফতানি শুরু হয় ২০১১ সাল থেকে। ঝাল ও গন্ধের জন্য প্রবাসী বাঙালি ছাড়াও যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় লোকজনের মধ্যে এটি উন্নতমানের মসলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
বিভাগের মধ্যে সিলেটের বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোলাপগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল এবং হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে ‘নাগা মরিচ’ চাষ হয়ে থাকে।
সিলেটের চাষীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়- লেবু, আনারস ও কমলা বাগানেই ‘নাগা মরিচ’ চাষ হয়ে থাকে। বাগানের অন্য গাছের ফাঁকে ফাঁকে মরিচের চারা লাগানো হয়। ফলে উৎপাদন ও পরিচর্যা খরচ কম পড়ে। ‘নাগা মরিচ’ চাষীরা জানান- প্রতি একর মরিচ চাষে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর মরিচ বিক্রি করে আয় হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাগান মালিকদের কাছ থেকে প্রতিশ’ মরিচ ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনে আনেন। পরে তারা ভালো আকার ও রঙের মরিচগুলো রফতানির জন্য আলাদা করেন। অপেক্ষাকৃত ছোটগুলো বিক্রি করা হয় স্থানীয় বাজারে।
সিলেটের গৃহিণীরা বিভিন্ন রকম সবজীর সাথে ‘নাগা মরিচ’ রান্না করেন। এছাড়া নাগা মরিচের নানা পদের আচারও তৈরি করা হয়।
দেশের বাইরে নাগা মরিচের সবচেয়ে বেশি চাহিদা যুক্তরাজ্যে। বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার প্রতিটি সুপারশপে এ মরিচ পাওয়া যায়। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের ওমান, সৌদি আরব, দুবাই ও কাতারসহ বিভিন্ন দেশে নাগা মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নাগা মরিচ সবজী হিসেবে বিদেশে রফতানি হয়ে থাকে। তাই প্রতিবছর কত টাকার মরিচ রফতানি হয় তার সঠিক হিসেবে নেই। তবে রফতানিকারকদের ধারণা প্রতিবছর সিলেট থেকে ২০-৩০ কোটি টাকার নাগা মরিচ রফতানি হয়ে থাকে।
জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ রফতানিকারক গ্র“পের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আহমদ জানান- যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে সিলেটের নাগা মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী রফতানি করতে না পারায় বিদেশে এ ফলটির বাজার দখল করে নিচ্ছে ভারত ও শ্রীলংকা। ‘ক্যাংক্রার্স’ জটিলতার কারণে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নাগা মরিচ রফতানি করতে ব্যবসায়ীদের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। সরকার উদ্যোগী হলে নাগা মরিচ রফতানি করে বছরে শতকোটি টাকা আয় করা সম্ভব।