বাংলাদেশ হচ্ছে ভবিষ্যতের ১০ উঠতি বাজারের একটি। এই দুঃসময়ের মধ্যেও এই ভালো খবরটি দিয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ।
প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশসহ ১০টি দেশের নাম উল্লেখ করে বলেছে, আগামী ১০ বছরে এই দেশগুলো হবে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি। বাকি নয় দেশ হচ্ছে মিসর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইনস ও ভিয়েতনাম।
বিএমআই রিসার্চ মনে করছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এই ১০টি দেশ সম্মিলিতভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার (এক লাখ কোটিতে এক ট্রিলিয়ন) যোগ করবে, যা বিনিয়োগকারীদের বড় সুযোগ এনে দেবে। কেননা এই অর্থ জাপানের বর্তমান অর্থনীতির সমান।
ফিচ রেটিংস বিশ্বের সবচেয়ে বড় তিন ঋণমান কোম্পানির একটি। নিউইয়র্কভিত্তিক এই কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ। তারা ২০০টি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ঝুঁকি এবং ২০ ধরনের শিল্প নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করে থাকে। গত ৬ জুলাই বিএমআই রিসার্চ ‘টেন ইমারজিং মার্কেট অব দ্য ফিউচার’ নামের এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার পর বিএমআই রিসার্চ রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি গত মে মাস থেকে এ নিয়ে কাজ করছিল, ফলে এখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাতের কথা থাকলেও জঙ্গি হামলা নিয়ে কিছু বলা নেই। যদিও পরপর দুটি হামলার ঘটনার প্রভাব নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এর ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি এমন ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনাকে পেশাদারি মনোভাব নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। তা না হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে। এতে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা আছে, তা নষ্ট হবে।
বিএমআই রিসার্চ তাদের প্রতিবেদনে বলছে, সাধারণভাবে উৎপাদন খাত ও নির্মাণ খাত অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়। মনে করা হচ্ছে, উৎপাদন খাতের ভবিষ্যৎ কেন্দ্রস্থল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও পাকিস্তান। আর এই তিনটি দেশেই রপ্তানি খাতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, চীনে শ্রম মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এই তিন দেশের এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা বেড়েছে। এ ছাড়া অবকাঠামোর দ্রুত উন্নতি ঘটায় এই দেশগুলোর প্রতি বেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে টেক্সটাইল ও গাড়িশিল্পে আগ্রহ বেশি থাকবে।
বিএমআই রিসার্চ আরও বলছে, ওই দশটি দেশেই উৎপাদন খাত ছাড়া নির্মাণ খাতও আরও বিকশিত হবে। এর দুটি কারণ রয়েছে। যেমন দেশগুলোতে দ্রুত নগরায়ণ ঘটছে এবং উৎপাদন খাতের উন্নয়নকে সহায়তা দিতেও নির্মাণ খাতের দ্রুত প্রসার ঘটবে। আবার সেবা খাতও ১০টি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশেষ করে আর্থিক খাত ও খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে অগ্রগতি বেশি হবে।
বিএমআই রিসার্চ ১০টি দেশ নিয়ে আলাদা আলাদা মন্তব্যও করেছে। বাংলাদেশ নিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, দেশটির রপ্তানিনির্ভর উৎপাদন খাতের অংশ ইতিমধ্যেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২৫ শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে। বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘাত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু এবং সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটালেও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির শ্রম মজুরি প্রতিযোগিতামুখী, শ্রমিকেরা দক্ষ এবং শ্রমশক্তির পরিমাণও অনেক বেশি, যা শ্রমনির্ভর উৎপাদন খাত, বিশেষ করে পোশাক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি দেশটি অবকাঠামো উন্নয়নেও মনোযোগ দিয়েছে।
বিএমআই রিসার্চের রিপোর্টের বক্তব্য নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, উন্নয়ন ও বাজার-সম্ভাবনার দিক থেকে একবিংশ শতাব্দী হলো এশিয়ার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো একটি পর্যায় পর্যন্ত উন্নতি করে ফেলেছে। আর এশিয়ার বাজার বলতে এখন দক্ষিণ এশিয়া। দক্ষিণ এশিয়ার বড় বাজার মানেই ভারত ও বাংলাদেশ। সুতরাং বাজার-সম্ভাবনার দশটি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ থাকা অবাস্তব নয়।
এফ/০৮:১০/১৫জুলাই