একটি জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা ও নির্মাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রকৃত অর্থেই তিনি বাংলাদেশের এক অবিসংবাদিত নেতা ও প্রাণপুরুষ। কাব্য করে বললে সত্যিকার অর্থেই তিনি ‘বাংলাদেশর আকাশ’। এদেশের আপামর জনমানুষের অন্যসব নেতাকে তুলনা করা যেতে পারে বাংলাদেশের আকাশে এক একটি নক্ষত্র হিসেবে। বাংলাভাষা, বাঙালি জাতি ও বঙ্গবন্ধুÑ এই তিনটি বিষয় যখন একরেখায় মিলে যায়, ঠিক তখনই স্বাধীন সার্বভ্যেম ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রটির মুখ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু যখনই এই তিন অনুষঙ্গ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি বাদ কিংবা আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশের আকাশ ছেয়ে গেছে গহীন অন্ধকারে। নষ্ট-ভ্রষ্ট রাজনীতির শকুনিরা বাংলাদেশের উদার আকাশকে হিংস্র নখরে রক্তাক্ত করেছে, তবে পরাস্ত করতে পারেনি। বারবারই বাংলাদেশ বুক টান করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ঘোষণা করেছে জাতিসত্তার অবিনাষী বিজয়গাঁথা। ‘বাংলাদেশে’ আর ‘বঙ্গবন্ধু’ যেন অসংখ্য নদীর অপরাজেয় এক মিলনমোহনা।
এই নাতিদীর্ঘ সূচনা-কখন ছাড়া ‘বাংলাদেশের আকাশ’ নিয়ে দু’চার কথা লেখা প্রাসঙ্গিক হতো না ভেবেই এমন অবতারণা। এবার সোজা কথায় আসি। ‘বাংলাদেশের আকাশ’ বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে নিয়ে কবিদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার এক মহান অর্ঘ্য। আলোচ্য গ্রন্থে সূচীবদ্ধ হয়েছেন একজন কবি ও বঙ্গবন্ধুপ্রেমী। দশক বিভাজনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে পঞ্চাশের দশকের কবি থেকে শুরু করে একুশ শতকের প্রথম দশকের কবিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। লন্ডন প্রবাসী কবি কাজল রশীদ সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের আকাশ’ প্রকাশ করেছে প্রবাস প্রকাশনী, ইউকে, । বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে ঘাতকদের নৃশংসতা থেকে পঁচাত্তরের পনোরোই আগস্ট বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে। বইটির প্রকাশনা সৌকর্য এককথায় অসাধারণ। প্রচ্ছদপটে গাঢ় কালোর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর অস্পষ্ট প্রতিকৃতি ও ‘বাংলাদেশের আকাশ’ লেখাটি এক আবেগঘন দ্যোতনা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। বলা যেতে পারে, তমসাচ্ছন্ন বাংলাদেশের আকাশে বঙ্গবন্ধুর যেন ফুটে আছেন একবিন্দু আলোর মহিমায়। এমন প্রচ্ছদ পরিকল্পনার জন্য কবি শিহাব শাহরিয়ারকে সত্যি ধন্যবাদ দিতেই হয়। গ্রন্থভুক্ত কবিতার চুলচেরা বিশ্লেষণে না গিয়ে গ্রন্থের নাতিদীর্ঘ ভূকিা থেকে খানিকটা উদ্ধৃত করলেই বইটি প্রকাশনার প্রাসঙ্গিকতা ও এর স্বরূপ আঁ করা যাবে। ভূমিকায় পঞ্চাশের বিশিষ্ট কবি ও শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বলেছেন : ‘তাঁকে (বঙ্গবন্ধুকে) মানুষের হৃদয়ের সিংহাসন থেকে যে টেনে নামানো যায়নি, তারই এক অনবদ্য প্রমাণ ও প্রকাশ এই কবিতাগুচ্ছ।… আমি এই কবিতাগুচ্ছকে বরণ করছি, আর কোনো কারণে নয়; বঙ্গবন্ধু মুজিব যে এখনো, স্বদেশে ও প্রবাসে, সকল বাঙালির প্রাণের সম্রাট, এই সত্যটির এক প্রবল ও আন্তরিকউচ্চারণরণ, এই বিবেচনায়। ১০০ জন কবির ব্যক্তিগত আবেগের স্বর সম্মিলিত সুর-মুর্চনায় পরিণত হয়েছে। মুজিবের মৃত্যু নেই। কবিতার মৃত্যু নেই।’
বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ও শ্রদ্ধায় আলোচ্য গ্রন্থে নিবেদিত পঙক্তিগুলো নিয়ে যাঁরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই কবি, পাশাপাশি আছেন ছড়াকার, আবৃত্তিকার, গল্পকার, সাংবাদিক ও বঙ্গবন্ধুপ্রেমী; উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেনÑ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, সৈয়দ শামসুল হক, বেলাল চৌধুরী, কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, মুহম্মদ নূরুল হুদা, জাহিদুল হক, অসীম সাহা, রবিউল হুসাইন, কাজী রোজী, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মাকিদ হায়দার, নাসির আহমেদ, কামাল চৌধুরী, সোহরাব হাসান, খোন্দকার আশরাফ হোসেন, আসাদ মান্নান, ইকবাল আজিজ, হালিম আজাদ, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, শামীম আজাদ, লুৎফর রহমান রিটন, নিতাই সেন, ফকির ইলিয়াস, মাহবুব বারী, মাহমুদ কামাল, খালেদা হোসাইন, গোলাম কিবরিয়া পিনু, আনিসুল হক,আতাউর রহমান মিলাদ,মুজিব ইরম সহ আরও অনেকে। একশ’ আটাশ পৃষ্ঠার এই বইটির বাংলাদেশ পরিবেশক পাঠশালা, ২২ আজিজ সুপার মার্কেট (নিচতলা), শাহবাগ, ঢাকা। বইটির প্রকাশকাল মার্চ ২০০৭, মূল্য ১৫০ টাকা।