আবদুল হাসিব-এর একগুচ্ছ কবিতা

hasib bhai

 

 

 

 

 

 

মূর্ত অভিসার

তুমি হাঁটছো কী না জানি না

বিশ্বাসের উর্বর মাঠে দাঁড়িয়ে

আমি দেখছি তুমি হাঁটছো

শেফালি ঝরা ধূলিপথ চল-চঞ্চল পদচালন

হাসনুহানার বিমুগ্ধ গন্ধ বিভোর চারিধার

পূর্ণেন্দুর মিষ্টি আলো তারাদের হাতছানি

অভিসার অনুরাগী তুমি

ফুরায়না পথ কাটেনা প্রহর কামুক অস্থির মন

তৃষাতুর অঙ্গুলী স্পর্শ প্রত্যাশা প্রতিক্ষায় থাকা;

আঃ হাঃ! এখনও কী যে অক্ষত; জীবন্ত অন্তর্গত।

 

বিশ্বাসের বেহায়াপনায় আমি পরাজিত

আমি বিনিদ্র রাত্রি জেগে দেখছি, কেবল দেখছি

তোমার সুঢৌল উর্ধমুখী বুকের কম্পন

কসে কসে পড়া কাঁচুলির মগ্ন সঞ্চালন

তুমি এখনো কুঞ্জপানে হাঁটছো

দ্রুত পদব্রজে অক্লান্ত তুমি হাঁটছো

জ্যোৎস্না-শিশিরে স্নাত হতে হতে

শরীরে তুমি প্রষ্পরেণু মাখছো।

 

কামিনী তোমার এমন কুস্তুরী গ্রাণ

অধীর অস্থির করেছে তনু-মন-প্রাণ

নগ্ন শরীরে মাধকানন্দে তুমি কামধেণু

আমি দেখছি তুমি বিভোর কামনাকাতুর

তুমি দু’হাতে কুচভরে ঝরা ফুল তুলছো

আমি নিরন্তর ঘ্রাণ নিচ্ছি;

আমার হৃদয়ের অস্থিত্ব ভরে ঘ্রাণ নিচ্ছি

তোমার নগ্ন দেহের ভুবনমোহিনী ভাজে ভাজে

যে বিমুগ্ধ গন্ধ আমার কামুক হৃদয় অস্থির করে তুলতো

সেই তৃষাতুর ঘ্রাণ হৃদয় পরতে আজো জীবন্ত অম্লান।

 

তুমি চিরটাকাল রাত্রির দিকে ধাবমান

প্রতিক্ষার প্রভাত আমার জন্যে নিয়ে আসে

ক্লেশ-ক্লান্তি-গ্লানি আর যতো অপমাণ! প্রেয়সী আমার

আমি তোমাকে দেখছি, দেখবো অনন্তকাল।

কী ভাবে পারে ওরা

কী ভাবে সম্ভবপর

ধর্ম-কর্ম সমাজ সংসার

অত:পর লিখে যায় কবি

দু:খ সুখের বিচিত্র সমাচার।

 

তার বুকের ভেতর থাকে সাহসের ঘর

কবির থাকে না তাই ভয়-ভীতি-ডর

আঙিনায় ছড়ানো থাকে সহস্র সাধ

মিটিবার প্রত্যাশায় প্রচেষ্টা অগাধ

কবির থাকে প্রেমাসিক্ত দু’খানা বাহু

স্পর্শ করে না তারে নির্মম রাহু

খুলা প্রাণে গায় গান কারণ-অকারণ

হৃদি যমুনায় চলে মগ্ন সন্তরণ।

 

কতো জনের প্রার্থনা কতো ভাবে সুর সাধা

সে কি আর শুনে বাধা

হৃদয় কাননে যার

রাশলীলা রাধা।

 

ষোল শো গোপিনী ভুলায় মগ্নলীলায়

কবি জ্বলে, কবি জ্বালিয়ে ভুলায়

কবি ভাবে কবি লিখে, কবি ভাবায় লিখায়

কবি শক্তি দেয় শক্তি পায়;

যতো ক্লান্তি দু:খ ক্লেশ গ্নানি

সকলই ভাসায় কবি প্রেম যমুনায়।

 

কবি বিশ্রাম বিলাসে বসে

কল্লোলিনী তীরে

মহুয়ার নীল অরণ্যে ঘিরে

প্রশান্তির বাতাস বয় খুব ধীরে ধীরে;

চেয়ে দেখে নিলীমায় উঠে মোটা চাঁদ

কবির কলমে কী আর মানে কোন বাঁধ।

বিরহিণীর শোকগাথা

মিথুন মৈথুনে মত্ত্ব হলে

অনায়াসে বিছানা বালিশ ঠিকানা হারায়

প্রসন্ন প্রশান্তি লাগে

ভোরের বিছানা যখন মুগ্ধ তৃপ্তির স্বাক্ষর ভাসায়।

 

কামুক নাগর কামাতুর হলে

আসক্ত কামিনী কামাগ্নি জ্বালায়

স্নানপাত্রের বদ্ধ জলের মাঝেও তখন

সামুদ্রিক তরঙ্গ উঠায়।

 

দূর থেকে ভাসে চোখে, শান্তি তার সারা বুকে

স্নানাগার ছেড়ে এসে মৃদু পায়ে হেঁটে হেঁটে

তৃপ্তা রমণী যখন রমণের রেশটুকু পান করে সুখে;

আমার দু’চোখ ভরে শ্রাবণের বরিষণ ঝরে বড় দুঃখে।

 

আমার হয়নি বুঝা বিছানার ভাষা

আমার জলাশয় তীরে লাগেনি কোন ঢেউ

আমার মিঠেনি আজো কামনার আশা

আমার আরতি গুলো গ্রহণ করেনি কেউ।

 

আমার জীবন যৌবন তবে কি বরফ জমাট জলাশয়;

আমার বুকের ভাষা কি তবে কঠিন নিরব হিমালয়!

আমি আসবো ফিরে

বর্ণালী আকাশের নীচে নদীর তীরে

বসে আমি আছি একা, হয়ত বা কাল

চোখের হবে না দেখা প্রসন্ন সকাল,

মুছে যাবে সব রঙ অন্ধকারে ধীরে।

এই পথে এই মাঠে এই নদী ঘাটে

যখন আর আসবো না হে রূপরাণী

করুণ নিঃশ্বাস কোন ফেলবে না জানি

তবুও সাধ হবে আসতে এই নাটে।

 

বারে বারে তোমার রূপ উঠবে ফুটে,

নীলাকাশ ফুল ভ্রমর নদীর পানি

ভরে থাকবে হৃদয়ের প্রচ্ছদ খানি

গোধূলির আবিরে আমি আসবো গুটে।

পূর্ণিমা জ্যোছনায় আমি আসবো ফিরে,

শিশির চাদরে আমায় রাখবে ঘিরে।

কর্মরত থাকে

ঘুণপোকা ঢুকে গেলে কর্মরত থাকে

যতক্ষণ সড়ঙ্গ পথ শেষান্তে আসে

কেটে যেতে ততক্ষণ খুব ভালোবাসে,

বিষাক্ত দন্তের দ্বারা সে নকঁশা আঁকে।

ঘরের গৃহস্থ শুনে গুঞ্জন পোকার

ভয়ে কেঁপে উঠে বলে করি কী উপায়,

নিধন করতে পোকা ঔষধ লাগায়

পোকার হয় না কিছু, ঘরের বিকার।

 

দিনে দিনে কাঠামো ঘরের কসে পড়ে,

এক দিকে ঠেস দিলে অন্য দিকে নামে,

মড় মড় শব্দ করা কিছুতে না থামে,

একটু বাতাস এলে সারা ঘর নড়ে;

অবশেষে একদিন ঘর পড়ে যায়,

শোকাহত উত্তরসুরী অশ্রু ঝরায়!

Developed by: