কাজী নাহিদ আক্তার’র একগুচ্ছ কবিতা

nahid

রাজপথ ভেসে যাচ্ছে
সময়ের পায়ে ছোট্ট একটা ছিদ্র দেখলাম
গল গলিয়ে রক্ত ঝরছে, রাজপথ ভেসে যাচ্ছে।
যত্র তত্র ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে বলে
দীর্ঘ পথটা একা চলার ক্ষমতা সে হারিয়ে ফেলেছে।
খুব নীরবে অবচেতন মনে
মস্তিস্কে জমানো উন্মুক্ত চিন্তা,
তার রাজ্যের সীমানা অতিক্রম করতে পারছে না।
নিয়মিত অনিয়মের ধাক্কায়
বিষণ্ণতা আজ সত্যের বিকল্প খুঁজছে,
যার অস্তিত্ব ইতিহাসের মঞ্চে কেবলি
গুণ্ডামি আর ভণ্ডামি।
দুঃসময়টা অচমকা জুবু থুবু হয়ে মিসে যায় অজান্তেই ।
মুঠো ভর্তি আগুন নিয়ে ছড়িয়ে দেয় মস্তিস্কের কোষে কোষে,
অনুভুতির অশ্লীল দহনে নির্বোধের মত
জাগিয়ে তোলে কষ্টের তুফান।
আমার আমিত্ব লজ্জায় লুকিয়ে রাখে বুক পকেটে,
তার শেষ অশ্রুবিন্দু।
নৈরাজ্য ছড়িয়ে দিয়ে
শুন্য জীবনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে সময় ।
ক্লান্ত চোখ বিক্ষুদ্ধ দুঃস্বপ্নের অভিমুখে
নিরন্তর হাতুড়ি পিটিয়ে যাচ্ছে,
ঠক ঠক ঠক।

শুভঙ্কর

-শুভঙ্কর, তুমি নাকি আজকাল আমাকে
আর মনেই করতে পাড়ছ না,
এমন তো কথা ছিল না।
-রাজ্যের সব সুখ তো তোমায় দিয়েছিলাম।
-ফাঁকি ছিল হয়তো।
-শুকতারাটা তোমার খোঁপায় পড়িয়েছিলাম।
-পুষ্টিহীনতায় ঝরে গিয়েছিল,
করুন মৃত্যু হয়েছিলো শুকতারাটির।
ভীষণ ক্ষুধার্ত,
অনাহারে বার বার অশরীরী আত্মার মতো
লেলিহান হয়ে উঠেছিলাম।
মনের নষ্টামিতে ভরে গিয়েছিল মনটা
কিন্তু শুভঙ্কর, তোমার আঙ্গুলের সেই স্পর্শ
আজ আমি অনুভব করি।
-আমি কখনো তোমাকে ভুলতে পারিনি
না এখনো।
-মিথ্যুক।
-প্রত্যাখ্যানে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
– সে জন্য শুভঙ্কর তুমি আমাকে
আর মনে ই করতে পারবে না !
কি দেইনি তোমাকে আমি।
মুখোমুখি তোমার দাঁড়াবার সাহস ছিল না,
বলো
আমি তোমাকে কি ক্ষমা দেইনি।
-নীল খামে তোমার চিঠি,
তোমার আঙ্গুলের ছাপ
এখনো আমাকে দোলা দেয়।
প্রদীপের আলোতে তোমার সুন্দর মুখটা
আরশি ভেদ করে এখনো
আমাকে দূরে যেতে দেয় না।
-আমি এখনো তোমার কথা মাঝে মাঝে ভাবি।


বিকেলটা আমাকে দিও

আজ বিকেল টা পুরোপুরি আমায় তুমি দিয়ে দিও।
ইতিহাস তোমায় অমরত্ব দিবে।
সময় আমাকে সামনে চলার কলাকৌশল শিখিয়েছে।
ভ্রষ্ট মানুষের অশুভ ভাবনা
আমাকে প্রচণ্ড আক্রোশে কাঁদায়,
অগণিত কবির মতো অকাল প্রয়ানে
আমার কোন ক্ষোভ নেই।
কোন কিছুকেই তোয়াক্কা না করে,
শিমূলের লজ্জার লাল আর
শান্ত বেলীর সাদা ফুলে
খোপায় সাজিয়েছি ,
তোমায় দেখাব বলে।
আজ বিকেল টা পুরোপুরি আমায় তুমি দিয়ে দিও।
বৈশাখের শেষ বিকেলের বয়ে যাওয়া মৃদু হাওয়া,
আমার সমস্ত ভাবনা গুলো এলো মেলো করে দিল।
সমস্ত ভাবনা গুলো খুলে রেখে
অপেক্ষায় থাকি,
যে অপেক্ষার সেতারে বেধে দিয়েছে ,
অনন্ত কাল ধরে বয়ে চলা
হলুদ স্বপ্নের অনুভূতি।
আজ পুরোটা বিকেল তুমি আমাকেই দিও।
বেহিসাবি হয়ে ক্লান্ত নয়নে উৎকণ্ঠায়
ছুঁয়ে যেতে চায় তোমার চোখ ।
পড়ন্ত বিকেলটাকে,
বহুদিনের জমে থাকা গোপন হাহাকারে
ছদ্ম নামে চিঠি লিখে।
তুমি রোদ আঁচড়ানো চোখে,
অন্ধকারের স্বপ্নগুলো পড়িয়ে দিও
আমার খোপায়।

শোন

শোন,
ভরদুপুর
আসে পাসে কেউ নেই।
ভাবছি তোমাকে,
শুধুই তোমাকে ,
বলি শোনো
কেউ যেন না শুনে।
শুধু
তুমি আর আমি,
শুকিয়ে গলা
বলবো কি করে।
একটু পানি,
আলাদা নিশ্বাস ,
হঠাত দেখি ,
তৃপ্ত চোখ ।
তুমি পাশে
চোখে চোখ।
মেঘেদের লুটোপুটি,
নীল আকাশ ,
আমাদের স্তব্ধতা
স্পর্শ মনে।
আনন্দের ছাপ
চোখে চোখে ,
বেহিসেবি চাওয়া
সবই না পাওয়া।
অতৃপ্ত,
কষ্ট ,
না বলা কথা।

Developed by: