
সাবেক ফিফা প্রেসিডেন্ট জো হ্যাভেলাঞ্জ আর নেই। ঠিক ১০০ বছর বয়সে মঙ্গলবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এ ব্রাজিলিয়ান। ১৯১৬ সালের মে মাসে চলমান অলিম্পিকের শহর রিও ডি জেনিরোতে জন্মেছিলেন তিনি। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তারপরেই এ পদে সমাসীন হন সেপ ব্লাটার। ১৯৬৩ থেকে ২০১১ পর্যন্ত হ্যাভেলাঞ্জ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সদস্য ছিলেন। স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি আইওসি থেকে পদত্যাগ করেন। আশৈশব হ্যাভেলাঞ্জ ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিকে ব্রাজিলের হয়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এরপর আইওসিতে তিনি নির্বাচনও করেন। ওই বছরই তিনি আইনজীবী হিসেবে সনদ পান। ১৯৫২-তে হেলসিংকি অলিম্পিকেও তিনি ব্রাজিলের ওয়াটার পোলো দলে ছিলেন। পরের আসরে মেলবোর্ন অলিম্পিকে তিনি ব্রাজিলের শেফ ডি মিশন ছিলেন। হ্যাভেলাঞ্জের সময়েই ফিফা বিশ্বকাপে ১৬ দল থেকে ৩২ দলে উন্নীত হয়। তিনি ছয়টি বিশ্বকাপ আয়োজনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। অবশ্য তিনিও ঘুষের অভিযোগের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। ২০১০-এ এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, হ্যাভেলাঞ্জ ও তার জামাতা রিকার্ডে টেইক্সেইরা সুইজারল্যান্ডের এক বিপণন প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস অ্যান্ড লেইজারের (আইএসএল) কাছ থেকে মিলিয়ন ডলার উৎকোচ হিসেবে নিয়েছেন। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে জো হ্যাভেলাঞ্জ বিশ্বকাপ ট্রফি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডি লা মাদ্রিদের হাত দিয়ে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক ম্যারাডোনার হাতে তুলে দেন। ২০১২ সালে তার জামাতা টেইক্সেইরা ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ান, যা তিনি আগলে রেখেছিলেন ২৩ বছর। দুর্নীতির অভিযোগে তিনি ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফুটবলের সাংগঠনিক কমিটি থেকেও সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
হ্যাভেলাঞ্জ তার সংগঠক জীবন শুরু করেন ব্রাজিলের মেট্রোপলিটন সুইমিং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এরপর তিনি ব্রাজিলের অলিম্পিক কমিটির সদস্য হন। ১৯৫৮-তে তিনি ইন্টারন্যাশনাল সাইক্লিং ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হন। ব্রাজিলের স্পোর্টস ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৫৮ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। সেখান থেকেই তিনি বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত হন। ১৯৭৪ সালে বৃটেনের স্যার স্টানলি রউসের উত্তরাধিকারী হিসেবে ফিফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। হ্যাভেলাঞ্জ যখন ফিফার দায়িত্ব নেন তখন এ সংস্থায় কর্মী ছিলেন মাত্র ১২ জন। দুই যুগে তিনি এ সংখ্যা ১০ গুণ বৃদ্ধি করেন। বিশ্বায়নের মাধ্যমে ফুটবলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধির পাশাপাশি এর বাণিজ্যিকীকরণও করেন তিনি। তার হাত ধরেই ফিফায় ইউরোপিয়ান আধিপত্য খর্ব হয়। তিনি ফিফার অধীনে অনেক প্রতিযোগিতা প্রবর্তন করেন। ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ, ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ, ফিফা ওমেন্স ওয়ার্ল্ড কাপ তার আমলেই প্রবর্তিত। নীল চোখের এ ক্রীড়া সংগঠকের ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। ২৪ বছর বিশ্ব ফুটবলের একচ্ছত্র ক্ষমতাধর কর্তা ছিলেন তিনি।