বোল্ট ও ফেলপসের শূন্যতা অপূরণীয়

2_81539৩২টি স্বর্ণপদক জয়ের মাধ্যমে অলিম্পিক গেমসের আবেদনকে অন্যরকম এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন দুই কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ উসাইন বোল্ট ও মাইকেল ফেলপস। রিও গেমসে তাদের অংশগ্রহণ বিশ্বব্যাপী যে রকম এক আলোড়ন তৈরি করেছিল, তাদের বিদায়ের খবরে আগামীতে এই গেমসে যে শূন্যতার সৃষ্টি করবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।এই দুই সুপার স্টারকে গেমসের ‘আইকন’ খেতাবে ভূষিত করেছেন আইওসি সভাপতি থমাস বাখ। ৩১তম আসরে তারা আলো ছড়ালেও আগামীতে কিভাবে পূর্ণ হবে তাদের ঘাটতি অনেকের কাছে এখন সেটাই একটা বড় প্রশ্ন।এই মুহূর্তে তাদের মতো স্পোর্টিং পাওয়ার বা ক্যারিসমার ধারে-কাছেও নেই কোন অ্যাথলেট। সাঁতার ও অ্যাথলেটিক ট্র্যাক থেকে এই দুই ক্রীড়াবিদ মিলে জয় করেছেন ৩২টি স্বর্ণপদক। সফলতা অর্জনের মাধ্যমে বোল্ট হয়তো নিজেকে বক্সার মোহাম্মদ আলীর মতো ‘কিংবদন্তি’ হওয়ার দাবি করেন। কিন্তু তিনটি অলিম্পিক আসর থেকে ট্র্যাকে নেমে তার মতো ৯টি স্বর্ণপদক ভবিষ্যতে আদৌ কেউ অর্জন করতে পারবে কিনা সেটি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।এদিকে একবার অবসরের ঘোষণা দেয়ার পরও ৩১ বছর বয়সে ফের পুলে ফিরে রিও অলিম্পিকে অংশ নিয়েও ৫টি স্বর্ণপদক জয় করেন মার্কিন সাঁতারু ফেলপস। বাখ শনিবার বলেন, ‘এখানে অংশগ্রহণের আগে থেকেই অনেক অ্যাথলেট নিজেদের আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এখানে এসে বোল্ট ও ফেলপস ‘আইকন’ হিসেবে নিজেদের ওই অবস্থানকে তারা আরও সংহত করেছেন। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক থেকে শুরু করে লন্ডন অলিম্পিক এবং সবশেষ রিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বোল্ট এবং ফেলপস বিপুল সংখ্যক ভক্ত সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন দারুণ এক উন্মাদনা।দুই জনই অলিম্পিকে এসে তাদের দক্ষতাকে পূর্ণতা দিতে সক্ষম হয়েছে। ২০০০ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ফেল্পস সাঁতারের ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। আর ২০০৪ সালে বোল্ট ২০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নিয়ে ৫ম স্থান লাভ করেছিলেন।ফেলপস ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিকে অংশ নিয়েই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেন মার্ক স্পিজের এক গেমসে ৭টি স্বর্ণপদক জয়ের রেকর্ডকে। তবে শেষ পর্যন্ত ৬টি সোনা ও একটি ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন তিনি। বেইজিং অলিম্পিকে এসেই ফেলপস সেই রেকর্ডটি শেষ পর্যন্ত ভাঙতে সক্ষম হন। ৮টি ইভেন্টের সবকটিতেই স্বর্ণপদক জয় করেন এই মার্কিন সাঁতারু।বার্ড নেস্টে অনুষ্ঠিত ওই আসরে ১০০, ২০০ ও ৪ গুণিতক ১০০ মিটার স্প্রিন্টের সবকটি স্বর্ণপদক জয়ের মাধ্যমে সবার মধ্যে বৈদ্যুতিক শিহরণ জাগাতে সক্ষম হন জ্যামাইকান স্প্রিন্টার উসাইন বোল্ট। বেইজিং থেকে যোগ্যতার প্রদর্শন দিতে শুরু করা এই দুই ক্রীড়াবিদ লন্ডন অলিম্পিকে গিয়ে নিজকে পেঁৗছে দেন কিংবদন্তির আসনে। ২০১২ সালের ওই গেমসে বোল্টের আরেক দফা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পাশাপাশি ফেলপস তার সংগ্রহশালায় যোগ করেন আরও চারটি অলিম্পিক স্বর্ণ। ওই আসরের পর ফেলপস অলিম্পিক থেকে অবসর গ্রহণের ঘোষণা দিলেও এক বছর পর ফের ওই সিদ্ধান্ত বদল করে ফের পুলে ফিরে আসেন। ক্যারিয়ারের পঞ্চম আসরে এসে তিনি যে কীর্তি প্রদর্শন করলেন তা সবার জন্যই দৃশ্যমান। আরও ৫টি স্বর্ণপদক জয়ের মাধ্যমে ফেলপস অলিম্পিক থেকে সর্বমোট ২৩টি স্বর্ণপদক জয়ের বিরল গৌরব অর্জন করেন। অলিম্পিকে তার সর্বমোট পদক সংখ্যা এখন ২৮টি।আর ঘোষণা দিয়েই অ্যাথলেটিক ট্র্যাকের তিন আকর্ষণীয় ইভেন্টের সবকটিতে স্বর্ণপদক জয়ের অন্যন্য নজির সৃষ্টি করলেন বোল্ট। ১০০, ২০০ ও ৪ গুণিতক ১০০ মিটার ইভেন্টে ফের স্বর্ণপদক জয়ের মাধ্যমে ‘ট্রিপল ট্রিপল’ অর্জনের পর নিজেকে ‘কিংবদন্তি অলিম্পিয়ান’ হিসেবে ঘোষণা করেন বোল্ট। তিনি বলেন, ‘আমি প্রমাণ করেছি যে আমিই সর্বকালের সেরা।’আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সভাপতি সেবাস্তিয়ান কো বোল্টের অবসর গ্রহণের বিষয়ে বলেন, ‘এটা ঠিক যে তার অনুপস্থিতিতে বিশাল এক শূন্যতার সৃষ্টি হবে। তবে সেটি অপূরণীয় নয়।’প্রসঙ্গক্রমে ১৯৭০ এর দশকে বক্সিং কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীর অবসর গ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপর কিন্তু ফ্লুয়েড মেওয়েদার, মারভিন হ্যাগলার, ম্যানি পাচকুইয়াও এবং রাই লিওনার্ডকে আমরা পেয়েছি। এদিকে নবজাতক সন্তানকে নিয়ে পদক জয় উদযাপনের সময় ফেলপস বলেছেন, ‘আমি যখন ছোট্ট ছিলাম, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এমন কিছু করব যা এর আগে কেউ করে দেখাতে পারেনি। এখন আমি আমার ক্যারিয়ারের দিকে তাকিয়ে বলতেই পারি ‘আমি সেটি করতে পেরেছি’। বাসস/এএফপি।

Developed by: