আপন ঘরে অন্য কেউ
যে ঘরে তুমি বসবাস করো সুহাসিনী
আসলে সে ঘরটা তোমার নয়
যে মাঠে তুমি খেল, হাটা চলা করো
সে মাঠের খেলায় অন্যের থাকে জয়।
যে পুকুরে সাঁতার দাও,
যে নদীতে নৌকা চালাও
সে জলে তোমার হয়না ঠাঁই
চারিদিকে বিত্ত-বৈভব আছে অনেক
তোমার আসলে কিছুই নাই।
যে গল্পে বার বার বিরহ কাহিনী
সে গল্পে তোমার নাম পাই।
মায়াডোরে বাঁধা নিত্য খেলা
সুখ ভরা সংসার-
যে ঘর চির চেনা, যে ঘরে সবই আছে
সে ঘরখানি নয় তোমার।
তোমার কাহিনীতে রচিত যে গল্প
যে গল্পে তোমার অবয়ব
সে গল্পে বীর দর্পে চলে
অন্যসব কুশীলব।
সেই ছেলেটি
হালকা গড়ন, ঝাকড়া চুলে
টানা টানা কালো চোখে
সাইকেলেতে প্যাডেল মেরে
রোজ সকালে আসতো যেতো…
মাষ্টার বাবুর ধারাপাতে
গান গাইতো সে রেডিওতে
রাজপথেও মিছিল দিতো
লেখা-পড়ায় কবিতা গানে
সবকিছুতেই প্রথম হতো…
সেই ছেলেটি আমায় একদিন
চিঠি দিল। অনেক কথা লিখা তাতে-
কী লিখেছে ?
অতশত মনে যদিও আজ পড়েনা
নির্ঘাৎ তাহা ছিলো প্রেমের !
এই বয়সের ছেলেরাতো তাহাই করে।
সেই চিঠিতে আমার খুশী উথলে উঠে
প্রেম যমুনায় জোয়ার আসে…
সেই ছেলেটি ভালো ছিলো-
এত্তো ভালো, সকল কাজে।
আসলে সে দেয়নি চিঠি
ইহা আমার কল্পনাতেÑ
যখন তারে দেখতাম আমি
আসতো যেতো সামন দিয়ে
আমার তখন মনে হতো :
এই বুঝি সে বলবে কথা, দেবে চিঠি
চিঠি কিংবা কথা কিছু দেয়নিতো সে
তবু আমার বুকের মাঝে
তার কথাটা সদাই বাঝে
ঝাকুনি দেয়, মিছিল করে…
সেই ছেলেটি যুদ্ধে গেল, একাত্তরে
মা’র পা’য়েতে সালাম দিল, দোয়া নিল
আমার দিকে চায়নি তখন, ব্যস্ত ছিলো !
জড়িয়ে ধরে মেশিন গানে। এগিয়ে গেলো
আমি তাহার পথের দিকে চেয়ে থাকি-
দূর অনন্তে চোখের পলক শেষ দিগন্তে-
আজও আমি চেয়ে আছি… ফিরেনি সে.. ।
খোঁজা
আজ সায়াহ্নে পিল পিল করে মনে
তোমাকেতো কোথাও খোঁজে পাই না
নাগালের চতু:সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছ তুমি
গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ছুটে বেড়াও এখন
স্বাধীনতার স্বাধ তুমিই কেবল পেয়েছ
সব ধরা-ছুঁয়ার বাইরে তোমার অবস্থান..
আমি এখনো শ্লোকের পর শ্লোক আর
লাইনের পর লাইন আবৃত্তির ঢেউ তুলি
আমার ভরা কণ্ঠের জোরালো আওয়াজে
সারা সভা প্যান্ডেল থর থর কেঁপে উঠে
শ্রোতাদের মুহুর্মুহু হাততালি বাজে অবিরাম
কিন্তু তোমার কেন এতো নিরবতা
কেন তুমি থাকো এতো শুনশান ?
নিরব ছিলে তুমি তখনো আবার সাহসীও
শুধু সাহসী নয় তুমি ছিলে প্রচন্ড বিপ্লবীও
শিকল ভাঙার কতো যে গান গেয়েছ
শক্ত শিকল তুমি ভেঙেছও বার বার
তবু তোমার কেন যে ছিল না
ছুঁ মেরে শক্তিধর ঈগলের মতো
আমাকে অনায়াসে তুলে নেবার
স্মৃতিগুলো আমার
কর্পূর দেয়া ছিলনা বলে আমার তোরঙ্গে
পুরনো স্মৃতিগুলো সব
তেলাপোকা, উইপোকা, পোকামাকড়ে মিলে
খেয়ে দেয়ে ভষ্ম করেছে।
কতো মধুর স্মৃতি ছিলো
জমানো কতো সোনার স্মৃতি
রূপোর স্মৃতি মণিমুক্তা খচিত।
সুখের স্মৃতিগুলো আজ নাই
খেয়েছে ইঁদুরে অথবা-
কর্পূরের মতো মিলিয়ে গেছে
মিশে গেছে বাতাসে।
দুলি অঞ্জলি, কেউ এখন আর স্মৃতিতে নেই
সুনা হিরু’র নাম ই তো আর মনে নেই আজ..
সামনে বাকি অনেক কাজ,
সামনে আগাই, পিছন ফিরে তাকাই
সাথে আছে কিছু বিরহের স্মৃতি
মনে পড়ে শুধু হারানোর কথা-
কুরে কুরে মোচড় মারে শুধু-
বিচ্ছেদের ব্যথা, হারানোর বেদনা
ও গুলো খায়নি ঘূণে, তিতা বলে
মিষ্টি স্মৃতিগুলো একেবারেই আজ আর নাই
টক্ ঝাল বিস্বাদের গুলোই শুধু বয়ে বেড়াই।
দু:খ তবু দাও
এই মেঘলা মেদুর বরষা দিনে
তোমার হাসিতে সুখ দিতে না পারো
চোখের জল তবে ফিরিয়ে নাও।
এই শিউলি ফোটা সেফালী ঝরা
শিশির ভেজা রূপালী শরতে
গোলাপ দিতে যদি না পারো
জুঁই চম্পা আর চামেলীতো দাও।
সোনালী হেমন্তে সোনার দোলায়
শীত সকালের মিষ্ঠি পিঠায়
কুল কামিনির গন্ধ না দাও
পলাশ ফোটা শিমুল রঙে
কৃঞ্চচূড়ার লাল আঙিনায়
দাঁড়িয়ে তুমি বারেক ফিরে
আমার দিকে একটু তাকাও
সুখ যদি না পারো
দু:খ তবু দাও।
জীবনের বিষয়গুলো
জীবনে অনেক সত্য আছে
স্পষ্টকরে যা যায় না বলা
জীবনে অনেক বাঁধা আছে
চাইলেও তা যায় না দলা।
জীবনে অনেক ব্যাথা আছে
কোথায় ব্যাথা যায়না বুঝা
জীবনে অনেক হারিয়ে যায়
কখনোও তা হয়না খোঁজা।
জীবনের অনেক কষ্ট থাকে
সুখের দিনে যা পড়েনা মনে
জীবনের অনেক স্মৃতি কথা
ভেসে উঠে তা ক্ষনে ক্ষনে।