ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড গড়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। সোমবার ট্রেন্ট ব্রিজে অ্যালেক্স হেলসের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ৪৪৪ রানের রেকর্ড রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। জবাবে পাকিস্তান ৪৪ বল বাকি থাকতে ২৭৫ রানে গুটিয়ে গেলে ১৬৯ রানের বিশাল জয় পায় স্বাগতিকরা।
২০০৬ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ৯ উইকেটে ৪৪৩ রানের রেকর্ড ছিল সর্বোচ্চ। গত বছর জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে ৪৩৯ রান সংগ্রহ করেছিল যা এতদিন সর্বোচ্চ ছিল।
রেকর্ড ভাঙা-গড়ার এই ম্যাচে আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন ইংলিশ ওপেনার অ্যালেক্স হেলস। তিনি ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ (১৭১) রানের রেকর্ড এখন তার দখলে। ১৯৯৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এজবাস্টনে রবিন স্মিথ অপরাজিত ১৬৭ রান করেছিলেন। সোমরার রাতে হেলস ১৭১ রান করে হাসান আলীর বলে এলবিডবিস্নউ আউট হওয়ার আগে দ্বিতীয় উইকেটে জো রুটকে (৮৫) নিয়ে ২৪৮ রান তোলেন। দু’জনেই অল্প সময়ের মধ্যে সাজঘরের পথ ধরলে ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ৩৮ ওভারে ৩ উইকেটে ২৮৩। কিন্তু জোস বাটলার (অপরাজিত ৯০) ও অধিনায়ক ইয়ন মরগান (অপরাজিত ৫৭) জুটি ৭৬ বলে অপরাজিত ১৬১ রান তুললে ইংল্যান্ড পাহাড় সমান স্কোর দাঁড় করায়। বাটলার ২২ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন যা ইংল্যান্ডের যেকোন ব্যাটসম্যানের জন্য একটি রেকর্ড। ৫১ বল মোকাবিলায় বাটলার সাতটি করে ওভার বাউন্ডারি ও বাউন্ডারি হাঁকান।
১২২ বলে ২২টি বাউন্ডারি ও ৪টি ওভার বাউন্ডারির সহায়তায় হেলসে ১৭১ রানের ইনিংস গড়ে তুলেন।
ওয়ানডে সিরিজের আগে চার ম্যাচের ২-২ ব্যবধানে ড্র হওয়া টেস্ট সিরিজে হেলস মাত্র ১৮.১২ গড়ে ১৪৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। প্রথম দুটি ওয়ানডে তার রান ছিল যথাক্রমে ৭ ও ১৪। ম্যাচ সেরা এই ব্যাটসম্যান ম্যাচ শেষে বলেন, ‘সিরিজ এখনও সব শেষ হয়নি, শেষ দুটি ম্যাচেও জিততে চাই।’
উচ্ছ্বসিত অধিনায়ক মরগান বলেন, নিজেদের মাঠে হেলস দারুণ একটি ইনিংস খেলেছেন। যেকোন ফর্মেটে ১৭১ রান করা সত্যিই বিশেষ কিছু।
পাকিস্তানি বাঁ-হাতি ফাস্ট বোলার ওয়াহাব রিয়াজ ১০ ওভারে ১১০ রান দিয়ে কোন উইকেট নিতে পারেননি। ওয়ানডেতে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ওভারের তালিকায় এটি দ্বিতীয়। ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ান মিক লুইস ১১৩ রানে কোন উইকেট সংগ্রহ করতে পারেননি। রিয়াজ তার স্বভাবসুলভ নো বল দিয়ে দুটি উইকেট দখল করেছিলেন। ৭২ রানে হেলসকে ও ৭৫ রানে বাটলারকে আউট করলেও নো বলের কারনে তা বাতিল হয়ে যায়।
টেস্ট র্যাংকিংয়ে শীর্ষ স্থানে থাকলেও ওয়ানডে টেবিলে নবম স্থানে থাকা পাকিস্তান কোনভাবেই সীমিত ওভারের ম্যাচের ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না।
পাক অধিনায়ক বলেন, আমি মনে করি হেলস ও বাটলার অস্বাভাবিক ইনিংস খেলেছেন। এই ধরনের উইকেটে বোলারের সহযোগিতাটা অত্যন্ত জরুরি। আর আমাদের সেটাই হয়নি। ব্যক্তিগত ১১৪ রানে লেগ-স্পিনার ইয়াসির শাহর বলে এক্সট্রা কভারে আজহার আলীর হাতে জীবন ফিরে পেয়েছিলেন হেলস। পরের বলেই হেলস শাহকে বাউন্ডারির ওপারে উড়িয়ে মারেন।
ইংল্যান্ডের বিশাল রানের নিচে চাপা পড়া পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা প্রথম থেকেই বাধ্য হয়েই আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করে। কিন্তু এই কৌশল কার্যত কোন কাজে আসেনি। শারজিল খান ৩০ বলে ৫৮ রান ও শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মোহাম্মদ আমির ২৮ বলে ৫৮ রান করলেও তাতে কোন ফল হয়নি। ওয়ানডেতে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানের হিসেবে আমিরের এটা সর্বোচ্চ স্কোর। আজ বুধবার চতুর্থ ওয়ানডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : ইংল্যান্ড ৪৪৪/৩ (হেলস ১৭১, বাটলার ৯০, রুট ৮৫, মরগান ৫৭; আলী ২/৭৪)। পাকিস্তান ৪২.৪ ওভারে ২৭৫ (শারজিল ৫৮, আমির ৫৮, সরফরাজ ৩৮, নেওয়াজ ৩৪, ইয়াসির শাহ ২৬*; ওকস ৪/৪১, আদিল ২/৭৩)।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : অ্যালেক্স হেলস। বাসস/ওয়েবসাইট।
ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের তালিকা
স্কোর ওভার দল প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল
৪৪৪/৩ ৫০ ইংল্যান্ড-পাকিস্তান নটিংহ্যাম ২০১৬
৪৪৩/৯ ৫০ শ্রীলঙ্কা-নেদারল্যান্ডস অ্যামসটেলভিন ২০০৬
৪৩৯/২ ৫০ দ. আফ্রিকা-উইন্ডিজ জোহানেসবার্গ ২০১৫
৪৩৮/৯ ৪৯.৫ দ. আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া জোহানেসবার্গ ২০০৬
৪৩৮/৪ ৫০ দ. আফ্রিকা-ভারত মুম্বাই ২০১৫
৪৩৪/৪ ৫০ অস্ট্রেলিয়া-দ. আফ্রিকা জোহানেসবার্গ ২০০৬
৪১৮/৫ ৫০ দ. আফ্রিকা জিম্বাবুয়ে পোচেস্ট্রুম ২০০৬
৪১৮/৫ ৫০ ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইন্দোর ২০১১
৪১৭/৬ ৫০ অস্ট্রেলিয়া আফগানিস্তান পার্থ ২০১৫
৪১৪/৭ ৫০ ভারত-শ্রীলঙ্কা রাজকোট ২০০৯