সংবিধান রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে : সিলেটে প্রধানমন্ত্রী

indexপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সংবিধান ও দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কর্তব্যপরায়ণ, শৃঙ্খলা বজায় রেখে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ দেশের সম্পদ। মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তাই পেশাগতভাবে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে দক্ষ, সৎ ও মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বুধবার দুপুরে সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন সদর দপ্তরে ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ ৯টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীর জন্য যতো জনবল প্রয়োজন, যুদ্ধ সরঞ্জাম যা যা প্রয়োজন, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সেসব সরঞ্জাম আমরা দিচ্ছি। বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার মধ্যবর্তী পায়রা নদী সংলগ্ন এলাকায় লেবুখালী সেনানিবাসে একটি পদাতিক ডিভিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। কক্সবাজারে রামুতে আরেকটি পদাতিক ডিভিশন গড়ে তোলা হয়েছে। সারা বাংলাদেশে এভাবে পদাতিক ডিভিশন গড়ে তুলে আমাদের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থৈনেতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ ৯টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলিত হলো। আজ সেনাবাহিনীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন, পরিপূর্ণতা অর্জনের দিন। আমি বিশ্বাস করি, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এ ডিভিশনকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলবেন এবং একইসাথে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আত্মনিয়োগ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, শুধু দেশের অভ্যন্তরে না, বাংলাদেশের বাইরেও শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেখানে কর্মরত সৈনিকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সৈনিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের সৎ, কষ্টসাধ্য, ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের ব্যাপারে আমরা অবগত রয়েছি। এজন্য আপনাদের বিভিন্ন কল্যাণের বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। সেনাবাহিনীর সকল সদস্যদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে, রেশন বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর বাইরে সারা দেশে প্রাক প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করেছে। উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যাতে আপনাদের সন্তানরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিপাগল আপামর জনসাধারণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অকুতোভয়, তেজদ্বীপ্ত ও দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল।

আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের অংশ হিসাবে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও বেশ কিছু ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও জনবলের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফোর্সেস গোলের আওতায় ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া কোরের অত্যাধুনিক ট্যাংক, গোলন্দাজ বাহিনীর কামান, আকাশ প্রতিরক্ষার অংশ হিসাবে মিসাইল সিস্টেম, পদাতিক বাহিনীর ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল এবং আর্মি এভিয়েশনের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার সেনাবাহিনীতে যোগ করেছে নতুনমাত্রা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা স্বত্ত্বেও সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। আজ বিশ্বব্যাপী এ দেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সম্মান পেয়েছে।

দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে যুগোপযোগী সেনাবাহিনী হিসাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ সালে সরকারে এসেই সেনাবাহিনীকে একটি জ্ঞানভিত্তিক পেশাদার বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আমরা সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিটি সদস্যের নৈতিক ও মানসিক শক্তি এবং পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছি।

এর আগে বুধবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। পরে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে গাড়িবহর শাহজালাল (র.) এর মাজারে এসে পৌঁছান। পরে বেলা ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তিনি। সেখানে মাজার জিয়ারত শেষে বেলা ১টার দিকে জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন সদর দপ্তরে ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ ৯টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Developed by: